শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে: রিসোর্টে রাত্রী যাপন ও হলরুম ব্যবহারের সূত্র ধরে মাত্র দিন পাঁচেকের পরিচয়। তাতেই জমে গেলো সম্পর্কটা।
টি হ্যাভেন রিসোর্টের পরিচালক আবু সিদ্দিক মো. মুসা’র এমন অকৃত্রিম আহবানে আমরাও খানিকটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। সিদ্দিক চাচা বুকে টেনে নিয়ে বলেন, বাবা তোমরা চলে গেলে আমার বুকটা ফাঁকা হয়ে যাবে। এতো কম সময়ের জন্য এসে কেনো মায়া বাড়ালে! ঝাঁপসা হয়ে আসা চোখের জল মুছে নেন সিদ্দিক চাচা।
এই অল্প ক’দিনে এই মানুষটা যে আমাদের হৃদয়ে কেমন আসন গেঁড়ে জেঁকে বসেছেন তা টের পেতে থাকি। জোর করে মায়া কাটিয়ে ট্রেনে উঠবার কিছুক্ষণ পরই এসএমএস, সাবধানে যেও বাবা। ট্রেনে কিন্তু নানা রকম লোকজন থাকে, ব্যাগ-ট্যাগ দেখে রেখো।
ঢাকায় পৌঁছুবার কথা ছিল রাত ১০টায়। কিন্তু ট্রেনটি ডিলে থাকায় তখন কেবল বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁঝেছি। ঠিক তখন আবার ফোন সিদ্দিক চাচার, পৌঁছে কিন্তু ফোন দিও বাবা।
বাসায় পৌঁছুতে রাত সোয়া ১১টায় বেজে গেলো। বয়স্ক মানুষ। তাই এতো রাতে তাকে বিরক্ত না করে এসএমএস দিলাম, ‘নিরাপদে পৌছে গেছি’ জানিয়ে। অবাক করে দিয়ে পর মুহূর্তেই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে ফিরতি এসএমএস দিলেন সিদ্দিক চাচা।
সিদ্দিক চাচার প্রতি এই মুগ্ধতার শুরু অনেক আগে থেকেই। হল রুম ভাড়া প্রসঙ্গে আলোচনা পর্বে বললেন, আমাদের রেট হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু তোমাদের এই কাজটা যেহেতু শ্রীমঙ্গলের পর্যটনের উন্নয়নের জন্য, সে কারণে তোমাদের উপর ছেড়ে দিলাম- যা ইচ্ছা হয় দিও।
রসিকতা করে- না দিলেও তো হয় বলতেই স্মিত হেসে হল রুমের ভাড়া না দিলেও আপত্তি নেই বলে জানালেন সিদ্দিক চাচা।
শেষ পর্যন্ত তার সৌজন্যেই জমজমাট অনুষ্ঠান হলো টি হ্যাভেনে। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষে ২৩ জুলাই হল রুমে ব্যানার লাগানোর পর কয়েকজন কলিগসহ দেড় কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল শহরে যাওয়ার অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ঠিক তখন বিপরীত দিক থেকে হাজির হন সিদ্দিক চাচা। দাঁড়িয়ে থাকার হেতু জানতে পেরে ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভারকে নির্দেশ দেন আমাদের পৌঁছে দিতে।
২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: সিলেটে পর্যটন’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। আগের রাতে ১০টায় ব্যানার টানাচ্ছিলাম। তখন এসে দেখে গেলেন সবকিছু ঠিক আছে কিনা। অনুষ্ঠান কিভাবে সাজানো যায় সে বিষয়েও কিছু টিপস দিলেন। স্টাফদের বললেন, তোমরা শুনে রেখ, ওরা কিন্তু আমার আপনজন। ওদের যেনো কোনভাবেই কষ্ট না হয়।
পরে জানা গেলো, শুধু আমরা নই। টি হ্যাভেন রিসোর্টে একদিন যিনি থাকেন, তাকেই তিনি মায়ার জালে আটকে ফেলেন। তার আত্মার পরম আত্মীয় বনে যান সবাই। তিনি যেমন খোঁজ নেন, তারাও খোঁজ নেন নিয়মিত। সে কারণে অল্পদিনে টি হ্যাভেন রিসোর্ট পর্যটকদের মনে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিদ্দিক চাচার সাফ কথা, এখানে যারা আসেন তাদের ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। আমি তাদের আত্মীয় মনে করি। আমার বাসায় আসা আত্মীয় আর রিসোর্টে আসা পর্যটকদের আলাদা করে দেখি না।
সিদ্দিক চাচার এমন আন্তরিকতায় রিসোর্টের অতিথিরা হয়ে যান আত্মীয়। তাই বিদায় বেলায় জল জমে চোখে। চলে আসার পরও শক্ত থেকে যায় মায়ার বাঁধনটা। তাই বারবার মন ছুটে যায় টি হ্যাভেনে।
পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি লম্বা হাসিখুশি এই মানুষটার কাছে অনেক কিছু শিখবার আছে আমাদের। ভালো থেকে সিদ্দিক চাচা। তোমার আলোয় আলোকিত হোক সারা দেশ।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৬
এসআই/ জেডএম