বাইক্কা বিল (শ্রীমঙ্গল ঘুরে): নিত্যদিনই পাখির মেলা বসে বাইক্কা বিল ও হাইল হাওরে। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ১৬০ প্রজাতির পাখি চোখে পড়ে এই হাওর-বিলে।
এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা দেশি পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বেগুনি কালেম, পানকৌড়ি, ডাহুক, জল মোরগ, বিভিন্ন ধরনের বক ও হাঁস, শঙ্খচিল, শামুক খোল, আবাবিল, জলপিপি, নেউপিপি, পান মুরগি, পালাসী, কুরা ঈগল, দাগি ঘাসপাখি, বাংলা শকুন, পাতি চ্যাগা ইত্যাদি।
হাইল হাওরের পূর্বদিকে বাইক্কা বিলের এক কোণায় ৩১ ফুট উঁচু যে পর্যবেক্ষণ পোস্টটি গড়া হয়েছে তাতে ছবিসহ হাইল হাওর ও বাইক্কা বিলের কিছু পাখির বিবরণ প্রর্দশনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দেশি পাখির বিবরণ বাংলানিউজ পাঠকদের জন্য ছবিসহ তুলে ধরা হলো।
জল কুকরা বা নেউ পিপি
লম্বা আঙুলে ভর দিয়ে এরা পদ্মপাতার ওপর দিয়ে স্বচ্ছন্দে হেঁটে যায়। গ্রীষ্মে এদের লেজের লম্বা পালক ঝরে পড়ে, গায়ের রঙ হয় সাদা আর হালকা মেটে। পানির ওপর দিয়ে উড়ে চলার সময় মিউ মিউ ডাক দেয়। পেছনে ঝুলে থাকে লম্বা পা। একটি মেয়ে জল কুকরা এক সঙ্গে কয়েকটি ছেলে কুকরা সঙ্গে জোড়া বেঁধে পদ্মপাতায় ডিম পাড়ে। তারপর উড়ে চলে যায়। ডিমে তা দেয় ছেলে কুকরারা। পোকামাকড়ই এদের প্রধান খাদ্য। ৩১ সেন্টিমিটার দৈর্ঘের এ পাখি এই জলাশয়ের স্থায়ী বাসিন্দা।
শঙ্খচিল
শিকার ধরার জন্য পানির ওপরে উড়তে দেখা যায় শঙ্খচিলকে। কখনো এরা ঘাপটি মেরে বসে থাকে গাছের ডালে, বাঁশের ডগায়। পূর্ণ বয়স্ক শঙ্খচিলের মাথা সাদা, শরীর লালচে খয়েরি রঙের। কিন্তু ছানাগুলোর রঙ হয় মেটে। ডানার নিচে থাকে খয়েরি ছাপ। পরিণত বয়সে এরা ৪৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাইক্কা বিলের স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে এই শঙ্খচিল অন্যতম।
বাংলা শকুন
অতি বিপন্নপ্রায় এই অতিকায় পাখির স্থায়ী আবাস বাইক্কা বিল। তবে গত এক যুগেই অন্তত ৯৭ শতাংশ সংখ্যা কমে গেছে বাংলা শকুনের। লম্বায় এরা ৭৫ থেকে ৮৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। মরা পশু ভীষণ পছন্দ এদের। কিন্তু পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহার নষ্ট করে দিচ্ছে বাংলা শকুনের কিডনি।
পাতি সরালি
৪২ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের পাতি সরালিও বাইক্কা বিলের স্থায়ী বাসিন্দা। এরা নিরামিষাশী। জলজ আগাছা খেয়ে বাঁচে। মেটে বগল আর খয়েরি কোমর দেখে অন্য হাঁসের মধ্যে সহজেই এদের আলাদা করে চেনা যায়। শীতে এদের সংখ্যা বাড়ে হাইল হাওর আর বাইক্কা বিলে। গ্রীস্মকালে ছড়িয়ে পড়ে বড় বড় গাছে বাসার বাঁধার আশায়।
বেলে হাঁস
পুরুষ হাসের রঙ সাদা। নারী হাসের রঙ ছাই। পদ্মবনে এরা শ্যাওলা ও সবজি খেয়ে বেড়ায়। বাসা বাঁধতে এদের প্রয়োজন হয় বড় বড় গাছের খোড়ল। তাই এ এলাকায় ডিম পাড়তে পারে কম। অভয়াশ্রমের গাছে এদের ডিম পাড়ার জন্য কাঠের বাক্স বসানো হয়েছে।
দাগী ঘাসপাখি
ঝোপের ওপরে বসে চিৎকার জুড়ে দিতে সিদ্ধহস্ত এই পাখি বাইক্কা বিল আর হাইল হাওরের স্থায়ী বাসিন্দা। ছোট্ট এই পাখি লম্বায় মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার। এদের শরীর কালো দাগ দেওয়া মেটে রঙের। লেজ লম্বা। পানির পাশে হিজলের চারা আর ঢোল কলমির মধ্যে থাকতে পছন্দ করে।
বেগুনি কালেম
এদের পালক নীলচে বেগুনি। পা লম্বা, লাল। বাসের জন্য ঘন জলজ উদ্ভিদ পছন্দ এদের। শীতকালে দলে দলে পদ্মের বীজ খায় এরা। ৪৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এ পাখি এই হাওরের স্থায়ী বাসিন্দা।
ছোট পানকৌড়ি
৫১ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের হাওরবাসী এই পাখি পানিতে ডুব সাঁতার দিয়ে মাছ শিকার করে। পানি থেকে উঠে কখনো বাঁশে, কখনো গাছের মরা ডালে বসে শরীর শুকায়।
গো বগা
গোচারণ ভূমির পোকা ধরার জন্য এরা গবাদিপশুর সঙ্গে বিচরণ করে। আর সব বগার চেয়ে এরা খাটো ও মোটা। মার্চ-এপ্রিলে প্রজননের সময়ে এদের মাথা ও গলার পালকে কমলা রঙ হয়। এই হাওরের স্থায়ী এই বাসিন্দা ৪৮ থেকে ৫৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
দেশি কানি বক
বসে থাকলে এদের গায়ের রঙ মেটে মনে হয়। কিন্তু উড়ে উঠলে এদের সাদা ডানা আর লেজ চোখে পড়ে। বর্ষায় এদের পালকের রঙ হয়ে যায় খয়েরি। মাছের আশায় পানির মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে এরা। এই হাওরের স্থায়ী এই বাসিন্দা ৪২ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৬
জেডএম/