বাইক্কা বিল (শ্রীমঙ্গল) ঘুরে: বাইক্কা বিলকে অভয়াশ্রম ঘোষণার পর বেশ কিছু দেশি মাছ বিলুপ্তির কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০০৩ সালে এই বিলে মাছ ধরা চিরতরে নিষিদ্ধ করে পানির নিচে গাছের ডাল-গুঁড়ি, কংক্রিটের স্ল্যাব ফেলে তৈরি মাছ ধরার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়।
শুকনো মৌসুমে পানি কমে গেলে রোদের তাপ থেকে মাছগুলোকে বাঁচতে অন্তত ১শ’ ফুট আয়তনের বেশ কিছু কূপ কাটা হয় ১০০ হেক্টরের বাইক্কা বিলে। এতে দেশি মাছগুলোর অবাধ বিচরণ সহজ হয়।
এর ফলে নতুন করে আইড়, কই, মেনি, ফলি, পাবদা, কানি পাবদা, ঘনিয়া, কালবাউস, রিটা, বোয়াল, চিতল, শোল, রাণী, টাকি, সরপুঁটি, মলা, নামা, চান্দা, কই, তারাবাইন ইত্যাদি দেশি মাছের বংশবৃদ্ধির হার বাড়ছে এই বিলে। বড় হয়ে পুরো হাইল হাওড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাইক্কা বিলের এসব দেশি মাছ। বর্তমানে এই বাইক্কা বিল আর হাউল হাওরে ৯৮ প্রজাতির মাছের দেখা মেলে। হাওরের পূর্ব দিকে গড়া ৩১ ফুট উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে এমন বেশ কিছু মাছের ছবিসহ পরিচিতি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলানিউজ পাঠকদের জন্য কিছু মাছের পরিচিতি এখানে তুলে ধরা হলো।
ফলি
এই মাছ বাচ্চা পাহারা দেয়। জলজ পোকা-মাকড় ও ছোট ছোট মাছ খায়। এরা নদী-নালা, বিল, হাওড়-বাওড়ের পরিষ্কার পানিতে বাস করে। বর্ষাকালে খাল ও পাটক্ষেতে এদের পাওয়া যায়। বর্তমানের বিপন্ন মাছ প্রজাতির মধ্যে ফলি অন্যতম।
চিতল
মাংসাশী এই মাছ এক স্থান থেকে আর স্থানে ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। বাচ্চা পাহারা দেয়। নদী, হাওড়-বাওড় ও বিলে বাস করে। বর্ষাকালে প্লাবিত ধান ও পাট ক্ষেতে এদের দেখা যায়। পরিষ্কার পানি এদের বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী। ১২০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই মাছ এখন অনেকটাই বিপন্ন। এদের চিতলা ও চিত্যাল নামেও ডাকা হয়।
কানি পাবদা
এই মাছ আঁইশবিহীন, সর্বভুক। সাধারণত শুককীট, শ্যাওলা, জলজ পোকামাকড় খায়। এদের কানকোয়ার পেছনে একটি কালো দাগ থাকে। অত্যন্ত সুস্বাদু এই মাছটির বাস খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও নদী। ৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘের বিপন্ন এই মাছটি পাবদা আর বোয়ালী পাবদা নামেও পরিচিত।
মেনি
এই মাছ মাংসাশী। জলজ পোকা-মাকড় ও চিংড়ি খায়। এরা বিল, হাওড়-বাওড় ও নদীর কাদাযুক্ত তলদেশে থাকতে পছন্দ করে। তবে বর্ষাকালে ধানক্ষেতে এদের দেখা মেলে। শীতকালে আশ্রয় নেয় আগাছাপূর্ণ তলদেশে। জাল দিয়ে সহজেই এই মাছ ধরা যায়। ১৮ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই মাছের অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। ভেদা, রয়না, ভেরা, বোকা ও মিনি মাছ নামেও পরিচিতি আছে এর।
রাণী
এই মাছের বাদামি শরীরে হলদে ডোরাকাটা। এদের আঁইশ অতি সূক্ষ ও গোলাকার। এদের দেখা মেলে খাল-বিল, হাওড়-বাওড় ও নদীতে। ১৮ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই মাছটি এখন বিপন্নপ্রায়। বৌমাছ, পুতুল, বেটি, বেতাঙ্গী, ব্যাতরঙ্গী, ব্যাতাঙ্গা ও বুকতিয়া নামেও পরিচিতি আছে রাণী মাছের।
টাকি
মাংসাশী এই মাছ সাধারণত ছোট মাছ ও পোকা-মাকড় খায়। এরা বাচ্চা পাহারা দেয়। তবে ক্ষুধা পেলে অনেক সময় নিজের পোনা নিজেই খেয়ে ফেলে। খাল-বিল, হাওড় ও নদীতে এদের দেখা যায়। ছাইতান, পোরাই, প্যাটা ও ল্যাটা নামেও পরিচিতি আছে টাকি মাছের। ৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এই মাছের জীবন এখন বিপন্ন।
সরপুটি
পুটি মাছের মধ্যে এ প্রজাতিই আকারে বড়। সাধারণত নদী, হাওড়, বাওড় ও বিলে বাস করে। এরা শ্যওলা, পোকা-মাকড় ও কাদা-বালি খেয়ে বাঁচে। বর্ষাকালে ক্ষেতে বিচরণ করে, শীতকালে আশ্রয় নেয় পাতা-শ্যাওলার জঙ্গলে। ৪২ সেন্টিমিটার আকৃতির সরপুটি বাইক্কা বিলের মহাবিপন্ন মাছ। এটি সরল পুটি, কুটি, স্বর্ণপুটি নামেও পরিচিত।
মলা
এ মাছ সারাদেশেই নদী, বিল, খাল, পুকুর ও প্লাবিত ক্ষেতে পাওয়া যায়। এদের প্রজনন কাল মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত। এরা শৈবাল, কীট-পতঙ্গ, জলজ প্রাণিকণা খেয়ে বাঁচে। ১৫ সেন্টিমিটার আকারের এই মাঠের জীবন এখনো বিপন্ন হয়ে ওঠেনি। এটি মৌকা, মৌরালা, মোরার মুলুঙ্গি ও মোয়া মাছ নামেও পরিচিত।
নামা চান্দা
শরীর হালকা হলদে। পার্শ্বদেশ রূপালী। নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে বেশি লম্বা। দাঁত বড় বড়। মুখ কিছুটা তীর্যক। বিল, হাওড়, বাওড় ও নদীতে এদের বাস। মাত্র ১০ সেন্টিমিটার আকারের এ মাছের জীবন সংকটাপন্ন। সারা দেশে চান্দা মাছ নামে অধিক পরিচিতি আছে এর।
কই
কচুরিপানাপূর্ণ জলাশয় ও ধানক্ষেতে এদের বেশি দেখা যায়। সব সব ধরনের জলাশয়েই পাওয়া যায় কই মাছ। এরা কানকোয়া ও লেজের সাহায্যে শুকনো জমির ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারে। জলজ ও স্থলজ কীট-পতঙ্গ খেয়ে বাঁচে। ২২ সেন্টিমিটার আকৃতির এই মাছ এখনো বিপন্ন নয়।
তারা বাইন
লম্বাকার এই মাছের মুখ চিকন, শরীর সবুজাভ। এদের পৃষ্ঠ পাখনায় ৩টি কারো রঙের ফোটা দেখা যায়। মিঠা পানি তো বটেই, কিছুটা নোনা খাল, বিল আর নদীতেও তারা বাইনের দেখা মেলে। ৩৭.৬ সেন্টিমিটার লম্বা এই মাছ শ্যাওলা ও কাদা-বালি খেয়ে বাঁচে। এরা এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৬
জেডএম/