ঢাকা, রবিবার, ১৬ ভাদ্র ১৪৩১, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ সফর ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

গাছ থেকে যেভাবে রাবার হয়

শামীম হোসেন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
গাছ থেকে যেভাবে রাবার হয় ছবি: আসিফ আজিজ-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে: পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটির থেকে খাগড়াছড়ি শহরে ফেরার পথে চোখে পড়লো একটি ট্রাকের মধ্যে বেশ কয়েকটি ড্রাম। দুধের মতো সাদা রঙের কিছু একটা ড্রামগুলো থেকে উপচে পড়ছে।

কী আছে এসব ড্রামে বা কোথায় থেকে আনা হচ্ছে এমন প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছুটলাম ওই ট্রাকের পেছন পেছন।

কিছুদূর যাওয়ার পর ট্রাকটি রাস্তার ডান দিকে একটি গেটের ভেতর প্রবেশ করলো। সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে ট্রাকের কাছে যেতেই দেখা গেল ড্রাম থেকে দুধের মতো সাদা কিছুএকটা বড় চৌবাচ্চায় ঢালা হচ্ছে। উপস্থিত শ্রমিকদের জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, এটা রাবার গাছের লেটেক্স (কষ)।   

এটা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে খাগড়াছড়ি রাবার কারখানা। কারখানায় প্রবেশের পর চোখে পড়লো বেশ কয়েকটি টিনের ছাউনি দেওয়া শেড। একেকটি শেডে একেক রকম কর্মযজ্ঞ চলছে।  

কারখানার ফোরম্যান তিমির বিকাশ চাকমা জানালেন, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন বাগান থেকে লেটেক্স বা কষ সংগ্রহ করে এখানে আনা হয়। আনার পর সেগুলো প্রসেসিং জোনের নির্দিষ্ট পাত্রে রাখা হয়। পাত্রে রেখে ঘনত্ব অনুযায়ী পরিমাণ মতো পানি দিয়ে এক ধরনের ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়, যাতে কষগুলো জমে যায়। জমে যাওয়ার জন্য পাত্রে নির্দিষ্ট মাপের ট্রে বসানো হয়। যাতে জমে যাওয়া কষগুলো ট্রে’এর আকার ধারণ করে।  

ন্যূনতম তিনঘণ্টার মধ্যে কষগুলো জমাট বেঁধে যায়। তবে পরদিন সকাল পর্যন্ত ওভাবে রাখা হয়। এরপর ট্রে থেকে জমাট বাঁধা রাবার আলাদা করা হয়। এরপর এটিকে কয়েকবার করে রোলার মেশিনে দেওয়া হয়। প্রথমে কয়েকবার প্লেন রোলারে এবং একবার খাঁজযুক্ত রোলারে দিতে হয়। এতে তৈরি হওয়া খাঁজের মাধ্যমে পানি ঝরতে সহজ হয়।

এবার রাবার শুকানোর পালা। প্রথমে পানি ঝরে যাওয়ার জন্য একদিন ঝুলিয়ে রাখা হয় দড়িতে। এরপর নেওয়া হয় স্মোক হাউজ বা ধোঁয়া ঘরে।  

পাশাপাশি দু’টি ধোঁয়া ঘর। মাঝখানে কাঠের চুল্লি। চুল্লির কাঠের আগুনের তাপ এবং ধোঁয়া নির্দিষ্ট চ্যানেল দিয়ে স্মোক হাউজে প্রবেশ করে। সাধারণত ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৭২ ঘণ্টা রাবারগুলো শুকাতে হয়।  

আগুনের তাপের কারণে রাবারগুলো চকলেট আকার ধারণ করে। এরপর সেখান থেকে বের করে তিন ধাপে গ্রেডিং করা হয়।  

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে খাগড়াছড়িতে ৩ হাজার ৪শ’ একর জমিতে রাবার বাগান রয়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকে এ অঞ্চলে উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এসব রাবার বাগান চালু হয়।  

সব প্রক্রিয়া শেষে গ্রেডিং করা রাবারগুলোকে ৫০ কেজি করে বান্ডেলে রাখা হয়। ভালো মানের (১ নম্বর) প্রতি কেজি রাবার ১০৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। এর চেয়ে কম মানেরটা একশ টাকা এবং তৃতীয় গ্রেডেরটা আরও ১০ টাকা কমে বিক্রি হয়।  

তিমির বিকাশ চাকমা জানালেন, গুদামে ৫০-১০০ টন জমা হলে গুদামে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে টেন্ডার দেওয়া হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে এগুলো বিক্রি হয়।

প্রতি ১০০ একর জমিতে ৭০জন শ্রমিক কাজ করতে পারে। একেকটি গাছ থেকে গড়ে ২ কিলোগ্রাম রাবার উৎপাদন সম্ভব। আর উৎপাদনের ওপর শ্রমিকরা কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা করে মজুরি পায়।  

পার্বত্যাঞ্চলে (রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি-বান্দরবান) মোট ৬টি রাবার কারখানা রয়েছে। এগুলো দিঘিনালা, মাটিরাঙা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, বাঘাইছড়ি, রাঙামাটিতে অবস্থিত।

বাংলাদেশে রাবারভিত্তিক প্রায় ৪০০ শতাধিক ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। এগুলোতে টায়ার, টিউব, হাওয়াই চপ্পল, বেল্ট, জুতার সোল্ড, গামবুট, বেলুনসহ বিভিন্ন ধরনের রাবারপণ্য তৈরি এবং বিক্রি হয়।


বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৬
এসএইচ/জেডএম

**রাঙামাটিতে পাহাড়ি পোশাকের রকমারি পসরা
**দুই হাজার ফুট উঁচুতে যাত্রী ছাউনি!
** আকাশছোঁয়া পাহাড়ি পথে রুমা
** লেকের দু’ধারে প্রকৃতির সঙ্গে রোমাঞ্চ!
** ঝুলন্ত ব্রিজ পার্কের অব্যবস্থাপনায় বিরক্ত পর্যটক
** মেঘ-পাহাড়ের অকৃপণ সৌন্দর্যের আধার খাগড়াছড়ি
** পর্যটকদের কাছে খাগড়াছড়ির ফল-সবজির কদর
**অনাবিল শান্তি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ