সুন্দরবন। সারাবিশ্বের এক তুলনাবিরল প্রাকৃতিক বিস্ময়।
‘টাইগার টাইগার বার্নিং ব্রাইট/ ইন দ্য ফরেস্ট অ্যাট দ্য নাইট’-খ্যাত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আর সুন্দরবন যেন দুজনে দুজনার।
২০১৬ সাল বাংলাদেশের পর্যটনবর্ষ। বাংলানিউজের ৩টি টিম এবার চষে বেড়াবে সুন্দরবনের ভেতরে-বাইরে। ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে তাদের সুন্দরবন ভ্রমণ, যা শেষ হবে ২৪ ডিসেম্বর। ওইদিন ৩টি দলের ভ্রমণঅভিজ্ঞতা নিয়ে সুন্দরবন লাগোয়া কোনো এক শহরে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ আলোচনা ও সেমিনার।
২০১৬ সালের শুরুতে ‘বছরজুড়ে, দেশ ঘুরে’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পর্যটনবান্ধব বাংলাদেশকে তুলে ধরার জন্য বাংলানিউজ শুরু করেছিল এক ধারাবাহিক ভ্রমণ-কার্যক্রম। কক্সবাজার, শ্রীমঙ্গল ও বান্দরবান জেলার সাগর-পাহাড়-নদীসমতল ও বিস্তৃত হাওর এলাকার প্রকৃতি ও জীবনের নানান রূপ ও বিপুল পর্যটন সম্ভাবনার নানা দিককে তুলে ধরা হয়েছিল। সুন্দরবনের বিস্তৃত এলাকায় এবারের সপ্তাহকালব্যাপী ত্রিমুখী এই ভ্রমণও তারই ধারাবাহিকতা।
ঢাকা থেকে বাংলা নিউজের যে তিনটি দল সুন্দরবন ভ্রমণে নাম লিখিয়েছে সেই তিনটি দলে আছেন ১৬ জন। লঞ্চ-স্টিমার, ট্রেন ও বাস—তিন রকম বাহনে চেপে গেছেন/যাচ্ছেন তারা।
এক নজরে---
টিম-ক
১. জাকারিয়া মণ্ডল (সিনিয়র আউটপুট এডিটর)
২. মবিনুল ইসলাম (স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট)
৩. শুভ্রনীল সাগর (ফিচার এডিটর)
৪. শাহজাহান মোল্লা ( সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট)
৫. দেলোয়ার হোসেন বাদল (সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট)
৬. আবু তালহা (সিনিয়র নিউজরুম এডিটর)
টিম-খ
১. সেরাজুল ইসলাম সিরাজ (চিফ অফ করেসপন্ডেন্টস)
২. শারমীনা ইসলাম (লাইফস্টাইল এডিটর)
৩. আসিফ আজিজ (অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর)
৪. হুসাইন আজাদ (অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর)
৫. মাহফুজুল ইসলাম (সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট)
৬. মানসুরা চামেলী (স্টাফ করেসপন্ডেন্ট)
৭. আবু বক্কর (স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট)
টিম-গ
১. শিমুল সুলতানা (কান্ট্রি এডিটর)
২. এরশাদুল আলম প্রিন্স (ল’ এডিটর)
৩. নাসির উদ্দিন (স্টাফ করেসপন্ডেন্ট)
৪. জান্নাতুল ফেরদৌসী (স্টাফ করেসপন্ডেন্ট)
৫. রিনা আক্তার তুলি (স্টাফ করেসপন্ডেন্ট)
এই তিনটি দলের সঙ্গে তিনভাগে ভাগ হয়ে যোগ দেবেন আরো ক’জন। এরা হচ্ছেন: খুলনা ব্যুরো এডিটর মাহবুবুর রহমান মুন্না, খুলনার স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট মানজারুল ইসলাম, বাগেরহাটের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সরদার ইনজামামুল হক, সাতক্ষীরা ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট শেখ তানজির আহমেদ।
এই ‘তিন বাহিনীর’ হাতে থাকবে কলম-ল্যাপটপ আর কাঁধে ঝুলবে ক্যামেরা।
এরই মধ্যে দুটি দল ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে পৌঁছে গেছে সুন্দরবন। তৃতীয় দলটি রওয়ানা দেবে ২১ ডিসেম্বর। শীত যেহেতু সুন্দরবন এলাকায় পর্যটনের সবচেয়ে অনুকূল মৌসুম, সেহেতু বাংলানিউজ টিম এই সময়টাকেই ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নিয়েছে।
এই ৩টি টিম বিশাল-বিস্তৃত সুন্দবনের ভেতর-বাইরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এর প্রাণীকূল, এর গুল্মলতা-উদ্ভিদের আলেখ্য যেমন তুলে আনবে, তেমনি ফুটিয়ে তুলবে বন এলাকার মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের নানান খণ্ড চিত্র; তুলে ধরবে তাদের দৈনন্দিন জীবনসংগ্রাম, আশা ও স্বপ্নের বয়ান। আলো ফেলবে সুন্দরবন এলাকার নানান দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানের ওপর।
তাছাড়া সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় নানা টিপসও থাকবে তাদের লেখায়। যেমন, কোথায় কিভাবে যেতে হবে, কোথায় থাকার কি কি ব্যবস্থা, কোথায় কেমন বা কোন বাহন সুলভ, খরচাপাতি, আহার ও থাকার ব্যবস্থা কোথায় কেমন—সবই অনুপঙ্খ তুলে ধরবে বাংলানিউজ টিম।
ভ্রমণের জন্য সুন্দরবনের মতো এমন উপযুক্ত স্থান গোটা দুনিয়ায় কয়টাই বা আছে! কী নেই সুন্দরবনে! এর ভেতরে রয়েছে রাজসিক গরিমার ‘ভয়াল সুন্দর’ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। আছে কতো না বিচিত্র প্রজাতির পাখি, চিত্রল হরিণ, কুমির, নদীশুশুক, হাঙ্গর, বানর, ভোঁদর, উদবিড়াল, সাপ, কাঁকড়া ও বিচিত্র প্রজাতির মাছ। আছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওরাসহ বিচিত্র উদ্ভিদের সমাহার।
কম করেও ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রজাতির আবাসস্থল এই বন। রয়েছে শন, নল খাগড়া, গোলপাতাসহ বিচিত্র রকমের ঘাস ও গুল্মরাজি।
যদিও এরই মধ্যে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বুনো মহিষ, পারা হরিণ, বুনো ষাঁড়, ছোট ও বড় একশৃঙ্গ গণ্ডার, বার শিংগা, চিতাবাঘ। বিলুপ্ত হয়েছে সাদা মানিকজোড়া কান ঠুনি, বোঁচা হাঁস, গগনবেড় ও জলার তিতিরসহ হরেক রকমের পাখি। পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখিবিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন এক স্বর্গ।
সুন্দরবন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শুধু নয়; একইসঙ্গে তা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য এক প্রাকৃতিক সুরক্ষাবর্মও বটে। পুরো পৃথিবীর সর্ববৃহৎ তিনটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের একটি এই সুন্দরবন লাখো মানুষের অন্যবস্ত্রের সংস্থানও দেয়। জীববৈচিত্র্যের আধার বাংলাদেশের এই বিরল বনভূমিটি বাণিজ্যিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। আর সুন্দরবনে পর্যটন প্রসার লাভ করলে তা গোটা দেশের অর্থনীতিকে দিতে পারে এক নতুন মাত্রা। সুন্দরবনের পর্যটন-সম্ভাবনা সম্বন্ধে শুধু একটা কথাই বলা যেতে পারে---‘স্কাই ইজ দ্য লিমিট’।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে যেমন, ঠিক তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও সুন্দরবনের ভূমিকা অপরিসীম। কেননা এটি দেশের বনজ সম্পদের বৃহত্তম উৎস। এই বন কাঠ-নির্ভর শিল্পের কাঁচামাল যোগায়। কাঠ, জ্বালানি ও মণ্ডের মত প্রথাগত বনজ সম্পদের পাশাপাশি এ বন থেকে নিয়মিত ব্যাপক হারে আহরণ করা হয় ঘর ছাওয়ার পাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ, কাঁকড়া এবং শামুক-ঝিনুক।
বৃক্ষলতায় পরিপূর্ণ সুন্দরবন বন্যপ্রাণীদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল যেমন, তেম্নি পুষ্টি উৎপাদক, পানি বিশুদ্ধকারক, পলি সঞ্চয়কারী, ঝড় প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারী, শক্তি সম্পদের আধার; সর্বোপরি সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এক বিস্তৃত পর্যটনকেন্দ্র। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশজুড়ে আমাজন অরণ্য যেমন।
সুন্দরবনের বাইরের জনপদেও পর্যটকদের জন্য রয়েছে অনেক কিছু। কতো দর্শনীয় ও এতিহাসিক স্থান যে ছড়িয়ে আছে এসব জনপদে তা লিখে শেষ করা যাবে না। দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি এই এলাকার লোকগাথা ও সংস্কৃতি, এর বিচিত্র খাদ্য ও ভোজন-এতিহ্য, এর কেচ্ছা কাহিনি, মনসার পাঁচালি, এর বনবিবি আর গাজীকালুর পালা, এর নানান পালা-পার্বণসহ ‘বহু আলেখ্য আর বহুল স্বর’ ---সবই বাংলানিউজ তুলে আনবে লেখায়, স্থির চিত্রে আর ভিডিওতে।
পাঠক, বাংলানিউজের সঙ্গে থাকুন। আপনার পুরো সপ্তাহটি হয়ে উঠুক কেবলই সুন্দরবনময়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
জেএম/