সাতক্ষীরা থেকে: সুন্দরবন, পৃথিবীর একক সর্ববৃহৎ ‘ম্যানগ্রোভ’ বা শ্বাসমূলীয় বন। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মূখ ভাবতেই হিম ধরে শরীরে।
কেবল জোয়ার ভাটার বৈচিত্র্যই নয়। সুন্দরবনের এক এক এলাকার বৈশিষ্ট্যও ভিন্নতর। তাই বার বার ভ্রমণেও তৃপ্তি মেটে না। প্রতিবারই নতুন অভিজ্ঞতা, পরিচয় হয় নতুন বৃক্ষ, মাছ আর পাখিদের সঙ্গে।
কিন্তু সে অভিজ্ঞতা নিতে বড় বাধা সময়, দূরত্ব এবং অর্থ। তবে এই বাধা দূর করে যারা এক দিনেই সুন্দরবন ভ্রমণের পূর্ণ স্বাদ নিতে চান তাদের জন্য একটি আদর্শ ভ্রমণ কেন্দ্র হতে পারে ‘কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র’।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি স্টেশনের অধীনে কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়ি ও ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রটি বেশ নতুন। এখনও পর্যটদের কাছে খুব একটা পরিচিত নয়। তবে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এই কেন্দ্রটিই হতে পারে সুন্দরবন ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে হলেও সড়ক পথে বুড়িগোয়ালীনির নীলডুমুর খেয়া ঘাট থেকে ট্রলারে সময় লাগে মাত্র আধ ঘণ্টা। কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের ঘাটে ট্রলার ভিড়তেই এখানে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানায় দুষ্টু বানরের দল। নদীর ঘাট থেকে ইট বিছানো পথ ধরে সামান্য এগোতেই বিশ্রামের জন্য গোলঘর। যদিও বেশির ভাগ সময়ই জায়গাটা দখলে থাকে বানর দলের বাঁদরামিতে।
সামনেই হরিণের খাঁচায় মায়াবি চোখের চাহনি। হাত বাড়ালেই ছুটে আসবে তারা। বামে হরিণের খাঁচা রেখে একটু এগোতেই মিষ্টি পানির পুকুর। পুকুর পাড়ে হরিণ আর বনরের ছোটাছুটি। তাদের পাশ কাটিয়ে সরু পথ ধরে বনের মধ্য আরও কিছু দূর এগোতে ডান দিকে আরও একটি পুকুর। পুকুরের অপর প্রান্তে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার আর সোজা চলে গেছে কাঠের তৈরি ওয়াকওয়ে।
চার তলা সমান উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের চূঁড়া থেকে পুরো সুন্দরবনের অনেকটা অংশ দেখার আনন্দ আপনাকে মুগ্ধ করবে। সেখান থেকে নেমে কাঠের তৈরি ওয়াকওয়ে ধরে সোজা পথ এঁকে বেঁকে চলে গেছে বনের আরও গহীনে।
কাঠ বিছানো পথের দুই ধারে ঘন জঙ্গল। দুই পাশে বাইন, কেওড়া আর সুন্দরী গাছের সারি। তবে বাইন গাছের সংখ্যা বেশি। হাঁটতে থাকলে চোখে পড়বে বানর, হরিণ, গুইসাপ অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যও। মাঝে মধ্যে এই ওয়াকওয়ের কাছে দেখা মেলে বাঘের পায়ের ছাপও। রাতে মাঝে মাঝেই এই দিকটা বাঘ আসে বলে জানান বন বিভাগের কর্মীরা।
ওয়াকওয়েসহ পুরো কেন্দ্রের ট্রেইল জুড়েই দেখা মিলবে সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা বানরের। বানরগুলো ট্যুরিস্টদের কাছাকাছি চলে আসে। হাতে কলা বা অন্য কোনো খাবার নিয়ে পথ না চলাই ভালো। কারণ বানরগুলো খাবারের জন্য আপনাকে ঘিরে ধরতে পারে। তাই সাবধান বানর থেকে।
ওয়াকওয়ের দীর্ঘ পথ ঘুরতে না চাইলে কিছুটা সংক্ষেপে পুকুর পাড়ের গোলাকার ছাউনি ঢাকা সোজা পথ ধরেও ঘুরে আসা যায়।
কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়ি ও ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এখানে বন বিভাগের একটি টহল ফাঁড়ি ছিল। সম্প্রতি বন বিভাগ ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে এখানে ওয়াচটাওয়ার, ওয়াকওয়েসহ পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করেছে।
যশোরের কেশবপুর উপজেলা থেকে এই কেন্দ্রে ঘুরতে আসা আশিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলে, সাতক্ষীরা অংশ থেকে এটাই আমার প্রথম সুন্দরবনে আসা। কলাগাছিয়া কেন্দ্রটি খুবই সুন্দর, নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশ।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সুমাইয়া আক্তার মিলি বাংলানিউজকে বলেন, এখানে পর্যটকদের চাপ কম। তাই সুন্দরবনের অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোর চেয়েও দূষণ কম। নিরিবিলি পরিবেশ।
কীভাবে যাবেন
সুন্দরবনের কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম (পর্যটন) কেন্দ্রে যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে সাতক্ষীরায়। সড়ক পথে সেখান সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ অথবা নীলডুমুর ঘাট থেকে ট্রলার যোগে যাওয়া যায় কলাগাছিয়া কেন্দ্রে। নীলডুমুর খেয়া ঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে সময় লাগে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। ২০-২৫ জনের ধারণক্ষমতার একটি ট্রলার ভাড়া পড়বে ৮শ’ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন...
** মনিরা-আকলিমাদের গল্প
** পথে পথে বাংলার রং-রূপ
** ‘বাঘ’ থেকেই কি ‘বাগেরহাট’?
** মাজার মোড়ের চা-পানেই তৃপ্তি !
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
এসআইএইচ/এসআইএস