মুন্সীগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকে ফিরে: ইউরোপ-আমেরিকায় টার্কি পাখি জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে এখনও টার্কি ততোটা পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। এর বাণিজ্যিক চাষ এখনও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি।
জানামতে, শুধু নওগাঁতেই এর বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া অন্য কয়েকটি জেলায়ও বিচ্ছিন্নভাবে টার্কি পালন হতে পারে। শখের বশেই কেউ হয়তো টার্কি পালন করে থাকে।
খাবারের তালিকায় আমাদের দেশে মুরগী যেমন, ইউরোপ-আমেরিকায় টার্কিও তেমন জনপ্রিয়। তবে আমেরিকায় নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে এই টার্কি। থ্যাংস গিভিং ডে’তে টার্কিই সকল আয়োজনের মূল খাবার।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার একটি টার্কি পাখিকে ক্ষমা করে দেন-অর্থাৎ একটি টার্কি পাখিকে ছেড়ে দেন বা মুক্ত করে দেন। প্রেসিডেন্ট কর্তৃক একটি টার্কিকে ছেড়ে দেয়ার মধ্য দিয়েই থ্যাংস গিভিংস্ ডের অনুষ্ঠান শুরু হয়। ঘরে ঘরে সবাই ওই দিনে টার্কি খায়। শুধু প্রেসিডেন্টই একটি পাখিকে ছেড়ে দেন। এর ইতিহাস আরো দীর্ঘ।
পথ চলতে চলতে অনেক কিছুই চোখে পড়ে। আবার অনেক কিছুই দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জে (শ্যামনগর) সুশীলনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ঘুরে দেখতে চোখে পড়লো ভিনদেশি টার্কি। গেস্ট হাইসে ফিরে আসার সময় এক গেরস্থঘরের সামনেই দেখতে পেলাম কয়েকটি টার্কি। খাবার খাচ্ছিল, তাই অসময়ে আমাদের দেখে যেনো বেশ বিরক্তই হলো। কোনো রকম রাক-ঢাক না করেই পেখম মেলে ওখান থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরাও পথ রোধ করে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তাই কী আর করা, সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে কক-কক শব্দে আওয়াজ তুললো। হয়তো ভীন দেশে আসার খেসারতের কথাই নিজেদের মাঝে বলাবলি করছিল তারা।
তবে আমরাও পিছু হটবো না। টার্কির সাথে সেলফি তুলে তবেই ঘরে ফিরবো। টার্কিগুলোও সে কথা বুঝলো বলেই মনে হলো। তাই আর কোনো গা করলো না। বিরক্ত হয়ে কয়েকটি পোজ মারলো ঠিকই তবে আমরা ফিরে আসার সময়ে কয়েকবার উচ্চস্বরে ডাকাডাকি করতে থাকলো। গালাগালি হবে হয়তো।
সূর্যের আলোতে সাদা, কালো আর ধূসর রঙের টার্কিগুলোকে আরো উজ্বল দেখাচ্ছিল। গেরস্থের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, একেকটি পাখি ৭০০ থেকে হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ওজন বুঝে দাম। সাত থেকে ১০ কেজি পযর্ন্তও হতে পারে একেকটি পাখি। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসে কিনে নিয়ে যায় এগুলোকে। একেকটি টার্কি ছয় মাসের মধ্যেই বড় হয়ে যায়, ডিম পাড়ে এবং ছয় মাসের মধ্যেই ছয়-সাত কেজি ওজন হয়ে যায়। আমাদের দেশের গৃহপালিত হাস-মুরগি যা খায়, টার্কিও তাই খায়। বাড়ির আশে-পাশে হেঁটে বেড়ায় আর খাবার সন্ধান করে। দেশি হাস-মুরগির সাথে টার্কিও বন্ধুত্ব করে নিয়েছে। সবাই একই ঘরে থাকে, একই পাতে খায়। অধিকাংশই শখের বশে টার্কি কিনে নেয়। তারাও অনেকটা শখের বশেই এগুলো পালন করে। যদি কিছু লাভ যোগ হয় ক্ষতি কি?
বাংলাদেশ সময়: ০১১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
জেডএম/