ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

আ’লীগে ২ ভাই দ্বন্দ্বে, সাঈদীপুত্রকে ছাড় দেবে না বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৮
আ’লীগে ২ ভাই দ্বন্দ্বে, সাঈদীপুত্রকে ছাড় দেবে না বিএনপি ...

পিরোজপুর-১ আসন ঘুরে: স্বাধীনতার পর জাতীয় নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগ জিতেছে পাঁচবার। আর এককভাবে বিএনপি জয় পেয়েছে একবার, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে। একবার সংসদে ওই এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মোস্তফা জামাল হায়দার। ১৯৯৬ আর ২০০১ সালে দু’বার এমপি ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে আজীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারান্তরীণ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।    

এবারও নির্বাচন সামনে রেখে আসনটি দখলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি ঘাঁটি গাঁড়তে চায় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।

আর সুযোগের সদ্ব্যবহারের অপেক্ষায় জামায়াত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) জেলার বর্তমান সভাপতি একেএমএ আউয়াল। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের পাশাপাশি দুর্নীতিতে জড়ানোর। অভিযোগ তুলেছেন তারই ভাই পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক।

তাদের এ বিরোধ কেন্দ্র করে জেলায় এখন দু’টি পক্ষ প্রকাশ্যে এসেছে। পাশাপাশি বড় ভাইয়ের বিপরীতে একই আসনে মালেক  মনোনয়নও চাইছেন এমপি পদে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানান, জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এমপি আউয়ালের পরিবার বেশ প্রভাবশালী। তিনি এমপি, তার এক ভাই পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র এবং সেজ ভাই সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

আরেক ভাই মশিউর রহমান পিরোজপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। দায়িত্ব পালন করছেন জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতিরও সভাপতি হিসেবেও।

অভিযোগ রয়েছে, এমপি আউয়ালের নেতৃত্ব নিয়ে আপত্তির কারণে জেলায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগও কোন্দলে জড়িয়েছে। এর জের ধরে এমপির সঙ্গ ত্যাগ করে মনোনয়ন চাইছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক এমএ হাকিম হাওলাদার, সাবেক এমপি অধ্যক্ষ শাহ আলম, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সাকিব বাদশাও। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন আউয়াল।

তবে যোগাযোগ করা হলে এমপি আউয়ালের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর ‘এখন ব্যস্ত, পরে কথা বলবো’ জানিয়ে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তার ভাই মেয়র মালেক।
যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে দলের সাধারণ সম্পাদক হাকিম হাওলাদার বলেন, এমপি সাহেবের (এমপি আউয়াল) ব্যবহার ভালো না। এরপরও ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মেটাতে এবং মিলে যেতে বলেছি। কিন্তু তারা তা করেননি।

‘আমরা আশা করি আগামী নির্বাচনে যিনি জনগণের কাছের মানুষ ও তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন- এমন মানুষকেই দল মনোনয়ন দেবে,’ বলেন ভান্ডারিয়া-ইন্দুরকানি থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এই নেতা।  

এদিকে দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, জেলা আওয়ামী লীগের দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বে ভাগ্য খুলে যেতে পারে শেখ এ্যানী রহমানের। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো ভাই ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট্রের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান টোকনের স্ত্রী।

গত কয়েকদিন ধরে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময়ও করে যাচ্ছেন সাবেক এমপি প্রখ্যাত আইনজীবী এনায়েত হোসেন খানের কন্যা।  

স্থানীয়রা বলেন, সাবেক এমপি সুধাংশু হালদারের সমর্থকদের একটি অংশও তার সঙ্গে আছেন। তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলেও মোবাইল রিসিভ করেননি শেখ এ্যানী রহমান।

মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শ ম রেজাউল করিমও। তিনিও এলাকায় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

এদিকে ২০০৮ সালের পর থেকে দেশের অন্য জায়গার মতো পিরোজপুরেও মাঠে নামতে পারেনি বিএনপি। এর মধ্যে জেলায় রয়েছে কোন্দল-গ্রুপিং।

জানা যায়, জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেনের মধ্যে কোন্দল বেশ পুরনো। এ নিয়ে দলকে ভুগতে হয়েছে গত স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক হয়ে গেছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

জেলা বিএনপির একটি অংশ বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে দলে এই কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির মোড়কে মাঠে নামতে পারে জামায়াত। আসনটিতে মনোনয়ন চাইতে পারেন সাঈদীর মেঝ ছেলে শামীম সাঈদী।

তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করছি। তিনটি আসনের বিভিন্ন থানায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৪৫টি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, গ্রেফতার তো আছেই।
‘এরপরও আমরা তৃণমূলে বিভিন্নভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। দল নির্বাচনে গেলে এই আসনে মনোনয়ন চাইবো। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়লাভও করবো। ’  

কোন্দল প্রসঙ্গে আলমগীর হোসেন বলেন, এটা কোন্দল নয়, নেতা হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা। যদি দূরত্ব থেকেও থাকে সরকারের নির্যাতনই আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে।

জোটের বিষয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী এই বিএনপি নেতা বলেন, জাতীয় স্বার্থে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করবো। তবে সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী থাকা জরুরি। জোটবদ্ধভাবে হলে অন্য আসনে শরিক জামায়াতের প্রার্থী মনোনয়ন পেতে পারে। তৃণমূলে দলকে উজ্জীবিত রাখতে সদরে বিএনপির বিকল্প নেই।

একই কথা বললেন জেলা বিএনপির সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বিএনপির মধ্যে কোনো কোন্দল নেই বলে আমি মনে করি। আর পিরোজপুর জেলা জামায়াতের নয়। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সুযোগ পেয়েছিলেন কারণ তখন বিএনপির কোনো যোগ্য প্রার্থী ছিলেন না। তার ব্যক্তি ইমেজ দিয়েই তিনি এমপি হন। এছাড়া দলীয় কোনো এমপি না থাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা সমস্যায় পড়েন।

‘এরপরও যদি জোট থাকে তাহলে পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-ইন্দুরকানি) ওখানে তাদের (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) বাড়ি পড়ছে। ওখানে তারা চেষ্টা করতে পারেন। পিরোজপুর-১ এ জামায়াতের কোনো সুযোগ নেই,’ যোগ করেন ব্যারিস্টার সরোয়ার।

আর দল যাকে-ই মনোনয়ন দিক না কেন- তার পক্ষেই কাজ করবেন জানিয়ে এলিজা জামান বলেন, দল নির্বাচনে গেলে আমি নমিনেশন চাইবো। না পেলেও ধানের শীষের জন্য কাজ করে যাবো।

মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও নৌযান ব্যবসায়ী মো. ফখরুল আলমও। প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন ২০ দলের শরিক জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারও।

বর্তমানে পিরোজপুর-১ আসনটি গঠিত সদর উপজেলা, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) নিয়ে। এর ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৭ হাজার ৯৪৭। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১০ হাজার ৪৩৯ এবং ২ লাখ ৭ হাজার ৫০৮ জন নারী ভোটার।

আগে ইন্দুরকানি (সাবেক জিয়ানগর) নিয়ে আসনটি গঠিত হলেও বর্তমানে এটি পড়েছে পিরোজপুর-২ আসনে (ভান্ডারিয়া-ইন্দুরকানি)।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৮
এমএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।