ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

আ.লীগে কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৮
আ.লীগে কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি  ..

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরা-১ আসনটি (জাতীয় সংসদ-১০৫) জেলার তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে প্রার্থীর যেমন ছড়াছড়ি রয়েছে, তেমনি বিএনপি ও জামায়াতেরও রয়েছে শক্ত প্রার্থী। 

৪ লাখ ২২ হাজার ৮৯৮ জন ভোটারের এ আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ শুরু করেছেন বেশ জোড়েসোরেই। প্রতিদিন নির্বাচনী পথসভা, মতবিনিময়, কর্মী সমাবেশ, লিফলেট বিতরণসহ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

সেই সঙ্গে সরকারি কর্মসূচিতেও উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন তারা।  

তবে, নিজেদের শক্ত প্রার্থী থাকলেও মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াত।  

অভিযোগ, ক্ষমতাসীনরা সব ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারলেও মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের। প্রতিনিয়ত গায়েবি মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের। রাজনৈতিক কর্মসূচি তো দূরে থাক, চায়ের দোকানেও বসতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে বিদ্যমান কোন্দলকে কাজে লাগাতে চান তারা।  

বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে ভোট করে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। এবারও অংশ নিতে চান নির্বাচনে। সেই লক্ষ্যে নিজ দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি গণসংযোগ করছেন তৃণমূলেও।  

যদিও আসনটি দলীয়ভাবে ফিরে পেতে চায় আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগেরও একাধিক প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।  

দলীয় মনোনয়নের আশায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান। একইভাবে তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল হক, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য শহীদ স ম আলাউদ্দিনের মেয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতিসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নের প্রত্যাশায় গণসংযোগ করছেন।  

তবে, শুধু ওয়ার্কার্স পার্টি নয়, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সাতক্ষীরা-১ আসনের দিকে নজর রয়েছে জাতীয় পার্টি বা জাসদেরও।  

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের তথ্য উপদেষ্টা সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত ও জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ওবায়দুস সুলতান বাবলুও মহাজোটের মনোনয়নের প্রত্যাশায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।  

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা চান, শরীক নয়- সাতক্ষীরা-১ আসনে সরাসরি আওয়ামী লীগের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।  

প্রার্থী মনোনয়নে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিতের এগিয়ে আছেন অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।  

আবার, জাতীয় পার্টি নেতা সৈয়দ দিদার বখতও দলীয়ভাবে শক্ত প্রার্থী। তাই সাতক্ষীরা-১ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অস্বস্তিতেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।  

এ আসনের দু’টি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি নেই দীর্ঘদিন।  

তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে ব্যর্থ হলে আগামী নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটতে পারে দলটির।  

এদিকে, একক প্রার্থী নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি।  

যদিও দলটির কোনো কার্যক্রম নেই এ আসনে। তবে, বিএনপি নির্বাচনে এলে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবই যে দলটির প্রার্থী হবেন- এমন বিশ্বাস তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে। একইসঙ্গে বর্তমানে তারা কোনো প্রচার-প্রচারণা না চালালেও সর্বত্র সুশাসনের ঘাটতি ও ক্ষমতাসীনদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে বিজয় ঘরে তুলতে চায় দলটি।  

ঠিক একইভাবে এ আসনে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্যাহকে নিয়ে আশাবাদী জামায়াতের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। বিএনপি জোটগতভাবে নির্বাচনে এলে সাতক্ষীরা-১ আসনে মনোনয়ন চাইবে দলটি।  

কলারোয়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রইচ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা মামলায় জর্জরিত। প্রতিনিয়ত তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তারপরও কেন্দ্রের নির্দেশ পেলেই যেকোন সময় দৃশ্যপট বদলে যেতে পারে।  

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং সাধারণ মানুষের ওপর সরকারের দমন পীড়নের কারণে মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। মানুষ যদি সঠিকভাবে ভোট দিতে পারে- তাহলে নির্বাচনে বিএনপির জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।  

তালা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মৃনাল কান্তি রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের তো মাঠে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলেও নাশকতার পরিকল্পনার গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করুক, বিএনপির জয় কেউ ঠাকাতে পারবে না।  

এদিকে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উপজেলা সম্পাদকের সঙ্গে দীর্ঘদিন মুখ দেখাদেখি না থাকলেও আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন কোন্দলের বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি মনে করি দলে কোনো কোন্দল নেই।  

এদিকে, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক মহিবুল্লাহ মোড়ল বাংলানিউজকে বলেন, আগামী নির্বাচনেও সাতক্ষীরা-১ আসনে মনোনয়নের ব্যাপারে ওয়ার্কার্স পার্টি আত্মবিশ্বাসী।  

আওয়ামী লীগে কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড় দলে কোন্দল থাকে- তাদের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি হবে এটাই- স্বাভাবিক। কিন্তু নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার পর আর কোন্দল থাকে না, সবাই এক কাতারে এসে কাজ করে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।