ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

রাজনীতিতেও সফল হতে চান স্বপ্নবাজ নূর মোহাম্মদ

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
রাজনীতিতেও সফল হতে চান স্বপ্নবাজ নূর মোহাম্মদ নূর মোহাম্মদ।

ময়মনসিংহ: পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন সচিব ও রাষ্ট্রদূতের। ৩২ বছরের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সফলতার সঙ্গে কুড়িয়েছেন সুনাম। 

এরপর রাজনীতির ‘পিচ্ছিল’ সড়কে নতুন যাত্রা শুরু হলেও এখনও নিজেকে ‘নেতা’ মনে করেন না নূর মোহাম্মদ। ভাবেন অতি সাধারণই একজন।

পছন্দ করেন বাস্তববাদী চিন্তা করতেই।  

মামলা-হামলার চিরায়ত ধারার বদলে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও গুণগত পরিবর্তন আনতে চান। তবে শুধু কথার কথা নয়, বাস্তব অর্থেই চান জনসেবা করতে।  

শক্ত লড়াইয়ে থাকতে চান দুর্নীতির বিরুদ্ধে; মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাস দমনে অনুসরণ করতে চান শূন্য সহিষ্ণু নীতি (জিরো টলারেন্স)।  

এমন সব ভাবনা-চিন্তার ‘বার্তা’ নিয়েই দিনের পর দিন ছুটেছেন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের ভোটারদের দুয়ারে। মতবিনিময়, জনসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত রেখেছেন নিজেকে।  

নিজ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে দিনবদলের এই নতুন কারিগরকেই আসনটিতে ‘নৌকার প্রার্থী’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন ‘ইনিংস’ শুরু হয়েছে তাঁর।  

এমনকি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে দেখা হচ্ছে এই হেভিওয়েটকেই।  

অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা পেরিয়ে কিংবা বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া পুলিশের সাবেক এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে জয়ের বিষয়ে দারুণ আশাবাদী।  

মনোনয়ন পাওয়ার পর বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপ-চারিতায় তিনি বলেন, আমার এলাকা থেকে বেকারত্ব দূর করতে চাই। এজন্য জীবনমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করবো। মাদক নির্মূলের পাশাপাশি সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানে থাকতে চাই।  

‘চাকরি জীবনের মতো জনপ্রতিনিধি হয়েও মানুষের সেবা করার লক্ষ্য নিয়েই এগুতে চাই। উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে চাই আমার এলাকার বাসিন্দাদের। আমার স্বপ্ন তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন গড়ার। এজন্য প্রয়োজন এলাকার মানুষজনের সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন। ’ 

এলাকায় জনসংযোগে নূর মোহাম্মদ।  ছবি: বঅংলানিউজপুরোদস্তুর পরিশ্রমী এই রাজনীতিকের সঙ্গে যখন কথা হয় তখন বারবারই চলে বলছিলেন, ‘ভাগ্যে’ বিশ্বাস করার কথা। একবার এক পথসভায় বলেছিলেন, ‘সব সময় ভাগ্য আমার সহায়ক হয়েছে। ’ 

সেই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতেই হাস্যোজ্জ্বল নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘আমি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ওঠে আসা একটি ছেলে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে পুলিশের সর্বোচ্চ পদ থেকে শুরু করে সচিব ও রাষ্ট্রদূত হতে পারতাম না।  

‘আমার কমিটমেন্ট, অঙ্গীকার আমি ভালো কিছু করবো। এমন কিছু করবো যাতে করে কটিয়াদী-পাকুন্দিয়াকে সবাই উদাহরণ হিসেবেই বেছে নেয়। ’ 

রাজনীতিতে আসার ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৩২ বছর এলাকার বাইরে ছিলাম। চাকরি শেষে অবসর জীবনে মনে হলো এলাকার মানুষের সঙ্গে কাটানোর। অর্থাৎ এলাকাবাসীর জন্য কিছু করার।  

‘এই এলাকার আলো-বাতাসে বড় হলাম। এই এলাকার প্রতি ঋণ শোধ করতে এলাকায় আমার ফিরে আসা। এলাকার মানুষজনকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যেতে চাই,’ যোগ করেন পাকুন্দিয়ার ছেলে নূর মোহাম্মদ।  

ছাত্রজীবনে সক্রিয় ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি হিসেবে। মাস দুয়েক আগে মোটরসাইকেল, ট্রাক, পিকআপ নিয়ে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কে শো-ডাউন করেছিলেন সাবেক এই সচিব।  

এলাকার মানুষজনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্বাচনী সেই শোডাউনে রীতিমতো তাকও লাগিয়েছিলেন। ওই শোডাউন নিয়ে অবশ্য ‘টিপ্পনি’ কেটেছিলেন দলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিনের সমর্থক-অনুসারীরা।  

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার কাছেই ‘ধরাশায়ী’ হতে হয়েছে এই সংসদ সদস্যকে। তবে সব সময়ই নূর মোহাম্মদ বলে আসছেন, হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতির বাইরে তার অবস্থান।

‘রাজনীতি হলো মানুষের জন্য ভালো কিছু করা’ এমন মতপ্রকাশ করে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘মানুষের প্রতি যার মমত্ববোধ থাকবে, যার মধ্যে মানবিকতা থাকবে তিনি রাজনীতিবিদ হবেন,
জনপ্রতিনিধি হবেন। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাযাত্রায় আমার এলাকার মানুষদের শরিক করতে চাই। ’ 

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। এজন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। সবার সহযোগিতায় আমি আসনটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চাই। ’

‘গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধিত হয়েছে। উন্নয়নের সব সূচকে বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও সোনার বাংলা গড়ে তুলতে কাজ করতে চাই,’ বলেন তিনি।  

বাংলানিউজকে সাবেক আইজিপি বলেন, আমি চাই আমার এলাকার তরুণ-যুবকরা চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই চাকরি সৃষ্টি করবে।

এই সম্পর্কে একটি উদাহরণ দিয়ে নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আমি আমার এলাকায় একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছি। এখানে তরুণ-যুবকদের কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে গার্মেন্টসের প্রশিক্ষণ। পরে তারা কলকারখানায় কাজের সুযোগ পাচ্ছে। ’  

বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮ 
এমএএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।