কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক দুর্নীতি মামলার নয়া মোড়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্যের নবম-দশম শ্রেণির ভুয়া শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে।
এদিন সন্ধ্যায় ওয়েবসাইটে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) সেই তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় দেখা গেছে, ১৮৩ জন অযোগ্য শিক্ষকের নাম রয়েছে। তারা ভুয়া সুপারিশপত্রের ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলেন।
অযোগ্যদের নাম, রোল নম্বর, আবেদনপত্রের নম্বর থেকে শুরু করে কোন বিষয়ে শিক্ষকতার জন্য আবেদন করেছিলেন সবই প্রকাশ করা হয়েছে তালিকায়। বাংলা থেকে শুরু করে ইংরাজি, অংক, ইতিহাস, ভূগোল, পদার্থ বিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক-শিক্ষিকরাও রয়েছেন সেই তালিকায়।
তালিকায় সবচেয়ে বেশি ভুয়া শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ইংরাজি বিষয়ে। ১৮৩ জনের মধ্যে ৫৭ জন ইংরাজির, ৩০ জন ভূগোলের, ২২ জন জীবনবিজ্ঞান, ২১ জন বাংলায়, অংক ও পদার্থ বিজ্ঞানে ১৮ জন করে ও ইতিহাসে ১৭ জন রয়েছেন তালিকায়। তবে বিচারপতি জানতে চেয়েছিলেন ১৮৩ জনের মধ্যে কে কোন স্কুলে কর্মরত রয়েছেন? সেই তালিকা স্কুল পরিদর্শকের কাছে জানতে এসএসসিকে নির্দেশ দিয়েছিল। কে কোন স্কুলে কর্মরত সেই তালিকা অবশ্য শিক্ষাপর্ষদ এখনও জানায়নি আদালতে।
এদিনের শুনানিতে কমিশনের কাছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানতে চান, বেআইনি সুপারিশ খুঁজে পেলেও তা বাতিলের জন্য কী পদক্ষেপ করেছে কমিশন? আর কী কী বেআইনি কাজ খুঁজে পেয়েছে এসএসসি? তারও উত্তর মেলেনি।
প্রসঙ্গত, কলকাতার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে চাকরির দাবিতে এখনও ধরনা দিচ্ছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। গত ৪ নভেম্বর সেই আন্দোলন ৬০০ দিন শেষ করেছে। তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) কর্তৃত্বদের অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগের কারণে মেধা তালিকা ভুক্ত সামনের দিকে থাকা যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা চাকরিতে নিয়োগপত্র পাননি। তার বদলে বর্তমান রাজ্য সরকার কিছু ব্যক্তি টাকা দিয়ে অযোগ্যদের চাকরি বিক্রি করছে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির যে জাল তৈরি হয়েছে তা ছিড়ে ফেলতে হবে। তা না হলে কোনো যোগ্য মানুষ নিয়োগ পাবে না। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্র অযোগ্যদের হাতে চলে যাবে। শিক্ষা ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। এ নিয়ে তাদের অনশন চলছে।
মামলা গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। নজরে এসেছে হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তার নির্দেশ অনুযায়ী শুরু হয় তল্লাশি। ধরা পড়েছে রাজ্যের সাময়িক বহিষ্কৃত শিল্পমন্ত্রী তথা সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক তথা শিক্ষা পর্ষদের মানিক ভট্টাচার্য, কল্যাণময় বন্দোপাধ্যায়সহ অনেকে।
সম্প্রতি এসএসসির তীব্র সমালোচনা করে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, এসএসসিকে সামনে রেখে যারা অযোগ্যদের চাকরি বাঁচাতে চাইছেন তারা যে রাজ্যের কিছু দালাল মুখপাত্র ও মন্ত্রী তা আমি জানি। আমি কিছু দালালদের নাম বলতে পারি যারা মুখপাত্র বলে পরিচিত এবং কিছু মন্ত্রীর নাম বলতে পারি যারা প্রকাশ্যে বলেছেন কারও চাকরি যাবে না।
অবশেষে এদিন ১৮৩ জন ভুয়া-অযোগ্য শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে এসএসসি। জল আরও অনেক দূর গড়াবে বলে মনে করছেন বিচারপতি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২২
ভিএস/আরবি