কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বঞ্চিত চাকরিপ্রত্যাশীদের তিনি এখন নয়নের মনি। আবার যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন তাদের কাছে তিনি এখন যমের সমান।
রাজ্যের শিক্ষক দুর্নীতি মামলায় শুনানির সময় রোজ নতুন নতুন মন্তব্য করে শোরগোল ফেলে দিচ্ছেন। কখনও প্রকাশ্যে বলছেন, ‘এরকম চলতে থাকলে চাকরির প্যানেল ভেঙে দেবো’ বা ‘ধেড়ে ইঁদুর গর্ত থেকে বের করে আনবো’। আবার কখনও বলছেন, ‘ঢাক সমেত ঢাকি বিসর্জন দিয়ে দেব’। বিচারপতির এমন তীর্যক মন্তব্য নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়।
তবে এ ধরনের মন্তব্যগুলো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা ছড়াতেই মুখ খুললেন বিচারপতি গাঙ্গুলি।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে, এ প্রসঙ্গ উঠতেই রাজ্যের আইজীবী ভাস্কর প্রসাদকে বিচারপতি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী ভালো কাজ করছেন। তাঁকে কেন খারাপ কথা বলতে যাব? বরং আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। ’
এরপরই বলেন, ‘আমি কেন খারাপ কথা বলব? পরিস্থিতি আমাকে বলতে বাধ্য করাচ্ছে। ’
বিচারপতি আরও বলেন, ‘সেদিন ধেড়ে ইঁদুর বলেছিলাম সুব্রতদার এক কথার প্রসঙ্গে (আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়)। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কেন বলেছি একথা। সেই কথার অন্য ব্যাখ্যা হচ্ছে। ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব বলেছিলাম, এটা ওরা (শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী) আমাকে বলতে বাধ্য করেছেন। ’
রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি গাঙ্গুলি বলেন, ‘চন্দ্রিমাদিকে বলে দেবেন (রাজ্যর আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাটার্য্য) আর কোনও মন্তব্য করব না। আমি কেনো খারাপ মন্তব্য করব বলুন তো? মুখ্যমন্ত্রী তো ভালো কাজ করছেন। ’
এরপরই বিচারপতি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রসঙ্গ নিয়ে বলেছেন, ‘কুণাল ঘোষের কথায় আমি খুব আনন্দ পাই। রোজই আমার বিরুদ্ধে কিছু না কিছু বলেন। আমি এ নিয়ে অতিরিক্ত মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু আমার মন্তব্যগুলির অন্যরকম ব্যাখ্যা হচ্ছে। ’
এরপর আইনজীবী বলেন, ‘আপনার কথার অন্যরকম মানে করে প্রচার করছে সংবাদমাধ্যম’। তাতে বিচারপতির পাল্টা অভিমত, ‘না না, ওদের কথা বলবেন না। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা আমাকে অনেক ভালোবাসে। ’
এসব কথার পর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় নতুন নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মূলত, চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ আদালতের কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে টেটের যোগ্যতা নির্ণায়ক পদ্ধতিতে বৈষম্য থেকে যাচ্ছে।
চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানান, চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে কেউ ২০০৮ সালে, কেউ ২০১১ সালে, কেউ আবার ২০১৪ সালে মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং প্রশ্নের ধরনে আমূল বদল আসার কারণে প্রাপ্ত নম্বরের মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়ে যাচ্ছে। অথচ চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল নম্বরের সঙ্গে এই নম্বরগুলিরও আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তাই এই চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীদের তরফে যোগ্যতা নির্ণায়ক পদ্ধতিতে বদল আনার আবেদন জানানো হয়।
চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারপতির নির্দেশ—এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। ২৫ জানুয়ারি কমিটি এই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট হাইকোর্টকে জমা দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ