আগরতলা (ত্রিপুরা): লক্ষ্মীবিল, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার একটি এলাকা। নাম শুনলে প্রথমে বিল, ঝিল বা হাওর মনে হলেও বলা যেতে পারে এটি ফুলের বিল বা ফুলের রাজ্য।
এই এলাকায় প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি পরিমানে ফুল চাষ করছেন স্থানীয়রা। এখানের ৮০ শতাংশ বাসিন্দাই ফুল চাষে জড়িত জায়গাটি এখন ত্রিপুরা রাজ্যের ফুল গ্রাম হিসেবে পরিচিত।
এই এলাকায় ১২মাসই ফুল চাষ করা হয়। জেলার ও রাজধানী আগরতলার চাহিদার বড় অংশের জোগান দিচ্ছে লক্ষ্মীবিলের ফুল। তাই এই এলাকার যে দিকে তাকানো যায় সেই দিকেই মাঠে ফুল গাছের অবস্থান।
প্রধানত গাঁদা ফুলের চাষ বেশি হয় লক্ষ্মীবিলে। তবে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, ডালিয়াসহ অন্যান্য বেশ কিছু জাতের ফুল চাষ হচ্ছে বর্তমানে।
এলাকার ফুল চাষি জগদীশ রায় বাংলানিউজকে বলেন, আগে অন্য ফসলের সঙ্গে অল্প পরিমানে ফুল চাষ করতাম। গত প্রায় ৫ বছর ধরে ফুল চাষের পরিমান বাড়িয়েছি। আমার মতো এই এলাকার বেশিরভাগ চাষিরা গাঁদা ফুলের চাষ করেন বেশি। এই মৌসুমে তিনি প্রায় ২বিঘা জমিতে গাঁদা চাষ করেছি। তবে এখন অন্যান্য ফুলের চাষও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবার রজনীগন্ধাসহ আরও কয়েক জাতের ফুল চাষ করেছি।
জগদীশ জানান, প্রায় প্রতিদিনই তাকে মাঠ থেকে ফুল সংগ্রহ করতে হয় বিক্রির জন্য। পাইকারী বিক্রেতারা তার বাড়ি থেকেই ফুল সংগ্রহ করে। সময় পেলে তিনি নিজেও আগরতলায় নিয়ে গিয়ে ফুল বেচেন। এক একটি ফুল ৫০পয়সা থেকে ৮০পয়সা দামে বিক্রি করেন। সর্বোচ্চ ১রুপি ১০পয়সা দামেও বিক্রি করেছেন সম্প্রতি।
ফুল চাষে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্প উদ্যান প্রকল্প থেকে তারা সব ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
লক্ষ্মীবিলের অপর এক ফুলচাষি নিবারণ দেবনাথ বলেন, এবছর দেড় বিঘা জমিতে গাঁদা ফুল চাষ করেছি। আধ বিঘা জমিতে চাষ করেছি রজনীগন্ধা। আর প্রায় ৭ কাঠা জমিতে গ্ল্যাডুলাস চাষ করেছি।
তিনি বলেন, লক্ষ্মীবিলের প্রায় ৮০শতাংশের বেশি মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত। যে কারণে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমানে ফুল চাষ হচ্ছে এখানে। সরকারি সুবিধার জন্য নয়, ফুল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি আমরা।
ত্রিপুরা সরকারের কৃষি এবং কৃষক কল্যাণ দপ্তরের বিশালগড় এলাকার কৃষি আধিকারিক দেবব্রত পাল জানান, এবছর লক্ষ্মীবিলে প্রায় কুড়ি হেক্টর জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ এলাকায় গাঁদা ফুল চাষ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৩০০ পরিবার মানুষ। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ফুলচাষিদের কল্যাণ মুখ্যমন্ত্রী পুষ্প উদ্যান যোজনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এই যোজনায় এই এলাকার ১২০টি পরিবার আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে। পরিবারগুলো দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সহ অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৩
এসসিএন/এসএএইচ