ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

কেন জমি নিয়ে বিশ্বভারতীর সঙ্গে অমর্ত্যর বিবাদ?

  সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩
কেন জমি নিয়ে বিশ্বভারতীর সঙ্গে অমর্ত্যর বিবাদ?

কলকাতা: বাঙালি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেন। ৮৮ বছর বয়সী নোবেলজয়ী, তিনি নাকি দখল করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্থাপিত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি? বর্তমানে এই বিতর্ককে ঘিরে দেশ-বিদেশে তৈরি হয়েছে নানান কৌতূহল।

সবারই প্রশ্ন, ঘটনা কী? তবে তা জানতে হলে অতীতে যেতে হবে।

বিশ্বভারতীর সঙ্গে এই বিতর্কের সূত্রপাত নোবেলজয়ীর বাবা আশুতোষ সেনের সময়কাল থেকে। অমর্ত্য সেনের মায়ের বাবা (দাদু) ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। ১৯০৮ সালে স্বয়ং কবিগুরু তাকে শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের আহ্বান জানালে তিনি তাতে সাড়া দিয়ে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ থেকে ৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্বভারতীর অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার রবীন্দ্রনাথের সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতের বিভিন্ন স্থান এবং চীন ভ্রমণ করেন। অমর্ত্যর মা অমিতা সেন ছিলেন বিশ্বভারতী আশ্রমিক।

অর্মত্যর বাবা আশুতোষ সেনের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের বগুড়া জেলায়। পিতা দেওয়ান বাহাদুর সারদাপ্রসাদ সেন ছিলেন বগুড়ার জেলা বিচারক এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। মাতা জগৎলক্ষ্মী সেন। তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল মানিকগঞ্জ জেলায়। ১৯৩২ সালে আশুতোষ আশ্রমকন্যা অমিতাকে বিবাহ করেন। বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁদেরই পুত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নাম রেখেছিলেন অমর্ত্য, যার অর্থ অমর বা অবিনশ্বর। অমর্ত্য সেন নিজেও বিশ্বভারতীতে লেখাপড়া করেছেন।

বিশ্বভারতী বর্তমান কর্তৃপক্ষের দাবি, চল্লিশের দশকে আশুতোষ সেনকে ১ একর ২৫ শতক (১২৫ ডেসিবেল) জমি ৯৯ বছরের জন্য লীজ দেয় বিশ্বভারতী। ভারতীয় হিসেবে যার পরিমাপ ৩ বিঘা ২৫ শতক। সেখানেই তৈরি হয়েছিল অমর্ত্য সেনদের পারিবারিক বাসভবন প্রতীচী। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে অমর্ত্য সেনের আবেদনের ভিত্তিতে ১২৫ ডেসিবেল জমির লীজ তাঁর নামে হস্তান্তরিত হয়েছে। অর্থাৎ অমর্ত্য সেনের নামের হস্তান্তরিত জমির মালিক বিশ্বভারতী। তবে এই অংশ নিয়ে বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যাথা নেই। কারণ, লিজে থাকলেও নথি অর্মত্যর নামে।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, লিজ দেওয়া জমির মধ্যবর্তীতে বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিবল জমিও প্রতীচীর সীমানায় ঢুকে গিয়েছে। যা এক সময় তাঁর বাবা আশুতোষ সেনের নামে ছিল। কিন্তু তিনি এখন মৃত। ২০০৬ সালে শেষ রিনিউ হয়েছে। লিজ হোল্ডার জমিতে কি করে থাকতে পারে মৃত ব্যক্তির নাম? বিশ্বভারতীর জমির এমন ভুল নথির ঘটনা রয়েছে প্রায় ৭৮টি। এমনটাই দাবি বিশ্বভারতী বর্তমান কর্তৃপক্ষের।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রজতকান্ত রায় উপাচার্য থাকাকালীন এই ব্যাপারে অমর্ত্য সেনকে বারবার মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু, নোবেলজয়ী বিষয়টি নিয়ে গা করেননি। এতে অমর্ত্য সেনের পালটা বক্তব্য, বিশ্বভারতী কোনও দিন তাঁকে জমি নিয়ে অনিয়মের কথা জানায়নি। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) তিনি বলেন, আমার বাবার কেনা ও লিজ নেওয়া জমি বিশ্বভারতীর মতে নানা কারণে আমার প্রাপ্য নয়। তিনি বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করার কথা জানিয়েছেন।

এখানেই অর্মত্য পাশে পেয়েছেন মমতাকে। গতকাল রাজ্য সরকারের ভূমি সংস্কার দফতর থেকে সংগ্রহ করা নথি অর্মত্য সেনের হাতে তুলে দিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এর শেষ দেখে ছাড়ব। অমর্ত্যদাকে অপমান করার কারো অধিকার নেই। বিশ্বভারতীকে জমি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। ফলে তা ঠিক করবে রাজ্য সরকার। এর মাধ্যমে মমতা বোঝাতে চেয়েছেন, জমি জটিলতা যাই থাকুক না কেনো, নোবেলজয়ীর কথা ভেবে সম্মান দেখানো যেতেই পারে।
 
তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষ উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেছেন, উনি যদি আদালতে যান, তবে সেটা তো ভালো। আমরাও চাইছি যে উনি কাগজপত্র জমা দিন। জমি সংক্রান্ত বিষয়টা পরিষ্কার হোক। তাতে ওনারও অসম্মান হবে না আমাদেরও অসম্মান হবে না। আমাদেরও তো খারাপ লাগছে, আমাদের কি ভাল লাগছে এসব করতে? ধারণা করা হচ্ছে, ১৩ ডেসিমিল বা শতক জমি হয়ত অর্মত্যকে পরবর্তীতে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কর্তৃপক্ষ আগে প্রমাণ করে ছাড়বে সে জমি বিশ্বভারতীর।

এ সংক্রান্ত কাজ যিনি প্রথম থেকেই দেখছেন, সাংবাদিক সুকুমার দেবনাথ বলেন, শেষ কথা বলবে কাগজ। আর তা আদালত অবদি গড়াবে। তবে রাজ্যের প্রধান অর্থাৎ মমতা যখন নথি অর্মত্যর হাতে তুলে দিয়েছেন, ফলে সেই তথ্যও অস্বীকার করার কিছু নেই। আবার বিশ্বভারতীর কথাও এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। তবে আমি মনে করি, ভারতের গর্ব অর্মত্য সেন। তার ওপর বয়সের শেষ কোটায় এসে দাঁড়িয়েছেন। সেটুকু সহযোগিতা ও সহমর্মিতা দেখানো উচিত বিশ্বভারতীর।

তবে ওয়াকিবহলরা মনে করছেন, জমি দ্বন্দ্ব এখন আর বিশ্বভারতী বনাম অমর্ত্যর নয়। এ লড়াই এখন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বনাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, উপাচার্য পদে বিশ্বভারতীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মোটেই সুসম্পর্ক নেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে। আর সেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল পৌষমেলা এবং বিশ্বভারতীর পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে। এখন গড়িয়েছে অমর্ত্য সেনের জমি জটিলতায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
ভিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।