কলকাতা: আবহাওয়া বদলের সঙ্গে সঙ্গে বহু মানুষ ভুগছেন জ্বর, সর্দি, কাশিতে। আর তাতেই কলকাতায় চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাস।
কলকাতায় পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, শিশু হাসপাতালের অধিকাংশ আসন ভর্তি অসুস্থ শিশুতে। পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) শয্যারও আকাল দেখা দিয়েছে। লাইফ সাপোর্টে রাখতে হচ্ছে শিশুদের। ইতোমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
কলকাতায় অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণের এখন যে পরিস্থিতি, তা বেশ উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার কথা মাথায় রেখে শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজ্যের সব জেলার হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজের কর্তা ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে ভর্তি থাকা শিশুদের মধ্যে শতকরা ৯০ জনেরই শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ (রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) দেখা যাচ্ছে। যাদের অধিকাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। আবার তাদের মধ্যে বেশিরভাগ অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত।
চিকিৎসকদের দাবি, ২০১৮-১৯ সালের পরে এই ভাইরাস নতুন করে ফিরে এসেছে। এবারের ভয়াবহতা বছর তিনেক আগের পরিস্থিতিকেও ছাপিয়ে গেছে। তার অন্য কারণ মনে করা হচ্ছে, করোনার কারণে ঘরবন্দি শিশুরা দীর্ঘ সময়ে মেলামেশা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুরোগ বিভাগের অধ্যাপক দিব্যেন্দু রায় চৌধুরীর অভিমত, সবার যে ভাইরাস পরীক্ষা হচ্ছে, তেমনটা নয়। তবে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ বেশি।
কলকাতার ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথে ভর্তি ১০ জন অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত। সেখানকার শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেছেন, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুরা আসছে। তবে দুবছরের কম বয়সী শিশুদের সমস্যা বেশি। কাউকে কাউকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হচ্ছে।
তবে শুধু শিশুরা নয়, চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বাদ যাচ্ছেন না বয়স্কেরাও। বড়দের শ্বাসনালির উপরিভাগ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। তারা হালকা জ্বর এবং দীর্ঘদিন ধরে কাশিতে ভুগছেন। রাত হলেই কাশি বাড়ছে।
চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, আবহাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন ভাইরাসের প্রকোপ বাড়চ্ছে। তার মতে, মাস্ক পরা বন্ধ, স্কুল-কলেজও খুলে গেছে। তাই আবহাওয়া পরিবর্তনে অল্পেই কাবু হচ্ছেন শিশুরা।
শিশুরোগ বিশেজ্ঞ অগ্নিমিতা সরকারের কথায়, শিশু অসুস্থ হলে, শ্বাসের গতি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। পাতলা পায়খানা ও প্রস্রাব হচ্ছে কি না, দেখতে হবে। সবাই যে ভাইরাসের কবলে পড়েছে তা নয়, তবে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের যদি জ্বর, সর্দি, কাশি থাকে, তাহলে তা ভালো না হওয়া পর্যন্ত তাকে স্কুলে পাঠানো যাবে না। কেননা, এতে স্কুলেও ছড়াবে। বড়রা যদি সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন, তাহলে তারা নিজেরা শিশুদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। তাদের পাশে মাস্ক পরে থাকতে হবে। এক বা দুবছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে তার ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে কিনা, নেতিয়ে পড়ছে কিনা, তাদের প্রস্রাব, পায়খানা নিয়মিত হচ্ছে কিনা। এসবে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩
ভিএস/এনএস