কলকাতা: দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে ভারতে দোলযাত্রা। উৎসবটি হিন্দু বাঙালিদের কাছে দোল উৎসব এবং অবাঙালিদের কাছে হোলি নামে পরিচিত।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সকাল থেকেই রঙের উত্সবের মেতেছে কলকাতাবাসী। গোলপার্ক টু গড়িয়া। টালা থেকে টালিগঞ্জ। রঙের নেশা আর আবিরের ছোঁয়ায় মাতোয়ারা গোটা কলকাতাসহ মমতার বাংলায়। শুধু আবীর নয়, ঋতুরাজ বসন্তর আগমনে প্রকৃতির গায়েও লেগেছে রঙ। শিমূল-পলাশেও রঙের ছড়াছড়ি।
এই উৎসব মূলত বাঙালিরাই পালন করে থাকেন। আর তার সূচনা হয়েছিল গৌড়বঙ্গে বৈষ্ণব ভাবধারার বিস্তারের মধ্য দিয়ে। বৈষ্ণব ভাবধারার বিশ্বাস অনুযায়ী, দোল পূর্ণিমার দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল (রং মিশ্রিত পানি) নিয়ে শ্রীরাধা ও অন্যান্য গোপীনীদের সঙ্গে রঙের খেলায় মেতেছিলেন। আর সেই কারণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-শ্রীরাধা ও তাদের সখী গোপীরাই দোলযাত্রা উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। দোলনায় দোল খাওয়ার সঙ্গেই উৎসবে মেতে ওঠা। আর তা থেকেই দোলযাত্রা উৎসবের উৎপত্তি। শ্রীকৃষ্ণের এই লীলবিলাস কবে শুরু হয়েছিল, তা বিস্তারিত জানা না গেলেও, বিভিন্ন আখ্যান ও পদে সেই কাহিনী বর্ণিত আছে।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, প্রায় দুই হাজার বছর আগে উত্তরপ্রদেশে বৃন্দাবনে (গোকুল) এই উৎসবের প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। বেদ, ভবিষ্য পুরাণ, ও নারদ পুরাণে এই উৎসবের বর্ণনা রয়েছে। মহাকবি কালীদাসের ঋতুসংহার কাব্যের বসন্ত বর্ণনায় দেখা গিয়েছে, যুবতী ও রমণীরা কৃষ্ণ চন্দন, কুসুম রং ও কুমকুম মিশ্রিত রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তুলতেন। দক্ষিণ ভারতের বিজয়নগরের হাম্পির মন্দিরের দেওয়ালগুলোয় রাজকুমার ও রাজকুমারীর রঙের উৎসবে মেতে ওঠার দৃশ্য খোদাই করা আছে। তবে এই যে এত রঙের উৎসবের কথা রয়েছে বিভিন্ন পুরাণে। সেখানে কোনওটাই দোল নামে নয়। সবটাই আছে হোলি নামে।
তবে আধুনিক বাংলায় দোল উৎসবের সূচনা করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯২০ সালে শান্তিনিকেতনে তিনি দোলযাত্রা উৎসবের সূচনা করেন। তবে, সেটা দোল উৎসব হিসেবে নয়। ছিল বসন্ত উৎসব হিসেবেই পরিচিত, যা শান্তিনিকেতনে দোল পূর্ণিমার দিন পালন হতো। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আর বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের সমস্যার কারণে গত তিন বছর ধরে বন্ধ বসন্ত উৎসব। তবে বাগবিতণ্ডা সরিয়ে রাখলে দোল মানেই রঙের দেওয়া-নেওয়া। আর তাই কলকাতাবাসীর মনের রঙের সাথে আজ উৎসবের রঙকেও মিলিয়ে দিতে চাইছে। প্রার্থনা একটাই, বিগত বছরের বিবর্ণতা ভুলে আবার রঙিন হয়ে উঠুক সবার জীবন। সে রং থাকুক সারাজীবন...।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০২৩
ভিএস