কলকাতা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাসের উপক্রম। মাছ, মাংস ও ডিমের দাম এখন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
এমন পরিস্থিতিতেও কলকাতার বাজারে মাছ-মাংস ও মুরগির দর সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে।
বাংলানিউজ২৪ -কে এমনটাই বলছেন কলকাতাবাসী।
এর কারণ কলকাতাবাসীরা - ড্রেসিং করা মুরগি অর্থাৎ কাটা মাংস প্রয়োজন অনুযায়ী কিনতে পারেন। ৫০ গ্রাম থেকে পাঁচ কেজি, যতটা প্রয়োজন ততটাই মুরগির মাংস বিক্রি করে থাকেন বিক্রেতারা।
অর্থাৎ একটা ড্রেসিং করা মুরগি চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি হয় বাজারে। যার যতটা প্রয়োজন নিতে পারেন চাইলেই। একেই বলা হয় কাটা মুরগি মাংস। কলকাতায় জায়গা বিশেষ এই কাটা মুরগির দর চলছে ১৮০ থেকে ২২০ রুপি।
লাগাতার ড্রেসিং হচ্ছে মুরগি। প্রয়োজন এবং পছন্দের অংশ অনুযায়ী, যে যার মত কিনছেন। এভাবেই মুরগির মাংস কিনতে অভ্যস্ত কলকাতাবাসী।
তাদের অভিমত, বাসায় যখন সদস্য সংখ্যা কম, সেখানে বেশি পরিমাণে মুরগি কিনে রেখে লাভ কি? সম্ভবত এ কারণেই, চাপ কম পড়ে কলকাতা বাজার দরে, অভিযোগ নেই মজুতদারীর।
বুধবার(২২ মার্চ) মানেই শহরের ব্যস্ততম দিন। সকাল থেকেই শুরু হয় অফিসের ব্যস্ততা। অফিস যাওয়ার আগে নিয়মিত বাজার করেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা রজত সরকার। বাড়িতে পাঁচ জন, একবেলা খাবেন সেই অনুপাতে এককেজি ২৫০ গ্রাম মাংস কিনেছেন।
তার অভিমত, বাড়িতে মজুদ করতে যাবো কেন। যখন বাজারে এলে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে দেখে মুরগি কিনতে পারছি। তখন ফ্রিজে রেখে বাসি খাব কেন?'
মুরগির মাংস কিনতে এসেছেন অর্ণিবান চক্রবর্তী। পরিবার বলতে স্বামী এবং স্ত্রী। প্রয়োজন ৫০০ গ্রাম মাংস। একই অভিমত তারও, প্রয়োজন যখন অতটুকুর তখন বাড়তি নিয়ে কি করব? প্রতিদিনই তো বাজার খোলা।
এখানেই শেষ নয়, কলকাতায় যেকোনো মুরগির মাংসের দোকানে দাঁড়িয়ে থাকলে এক নতুন অভিজ্ঞতা হবেই।
মাত্র দেড়শো গ্রাম চিকেন কিনতে এসছেন ২৭ বছরের অমিত। এই এতটুকুতে আপনার হয়ে যাবে? `এটা বাবার জন্য। ওনার ৭৪ বছর বয়স। চিকিৎসকের তথ্য অনুয়ায়ী, নানান সবজির সাথে প্রতিদিন খাবার পাতে রাখতে হবে চিকেন। আমার লাঞ্চ অফিস ক্যান্টিনে। তাই দরকার যতটা ততটাই তো নেব। '
একেবারে কিনে ফ্রিজে তো রাখতে পারেন? `পারি, কিন্তু সেটাতো আর টাটকা থাকবে না। ' খাবার ব্যাপারে কলকাতাবাসীর আরও একটা বৈশিষ্ট্য হল, শহরবাসী দিনে ভাত পছন্দ করলেও রাতে সিংহভাগ মানুষের পছন্দ রুটি-সবজি বা ডাল।
কাটা মাংসের পাশাপাশি কলকাতা শহরের খুচরা বাজারে গোটা ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি দেড়শ রুপি এবং দেশি মুরগী চলছে ৪০০ রুপির আশপাশে।
বিক্রেতাদের অভিমত, সামনে বিয়ে এবং রমজানের মৌসুম। যে কারণে, দাম বাড়ছে মুরগির। যদিও গোটা মুরগির চাহিদা একেবারেই নেই। কারণ, গোটা মুরগির সব অংশ নিতে হলেও কাটা মাংস বিক্রি হয়, মাথা, গলা, পা, মেটে ইত্যাদি বাদ দিয়ে। এই অংশগুলো সিংহভাগ শহরবাসী পছন্দের তালিকায় পড়ে না।
একইভাবে কলকাতায়, প্রতিপিস মুরগির ডিমের দাম চলছে সাড়ে ৫ - ৬ রুপি। এবং হাঁসের ডিম প্রতিপিস ১১-১২ রুপি। প্রয়োজন অনুযায়ী, যে কেউ কিনতে পারেন এক পিস ডিম বা এক হালি অথবা এক ডজন। সেক্ষেত্রে দাম থাকে একই।
তবে দমের ফারাক হয় তখন যখন কেউ এক ক্রেট অর্থাৎ ৩০ পিস ডিম কেনেন। সেখানে জায়গা বিশেষ বর্তমানে ৩০ পিস মুরগির ডিমের দাম পরছে ১৫০-১৬০ রুপি।
বিশ্ববাজারে দোহাই দিয়ে গোটা বিশ্বেই যখন নিত্যপণ্যের দামের হেরফের চলছে, সেখানে এখনও বাজার দর সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে কলকাতাবাসীর। আর তাই স্বাদ এবং সাধ্যের পরিমাপে ঠিক যতটা প্রয়োজন ততটাই যখন বাজার থেকে মেলে তখন বাসায় বাড়তি মজুদের প্রশ্নই আসে না। এমনটাই মত কলকাতাবাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৩
ভিএস/এসএএইচ