ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

লোকসভার সদস্য পদ কি ফিরে পাবেন রাহুল?

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
লোকসভার সদস্য পদ কি ফিরে পাবেন রাহুল?

কলকাতা: ৫৪ বছর বয়সী কংগ্রেস নেতা ভারতকে জোড়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে কন্যাকুমারী থেকে শুরু করেছিলেন ভারত জোড় যাত্রা। যা কাশ্মীরের শ্রীনগরে শেষ হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে।

১২টি রাজ্য এবং ২ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এরপর মার্চ মাসের শুরুতে করেন বিদেশ সফর। সেখানে ভারতবিরোধী কথা বললে বিতর্কের দানা বাঁধে। আর মাস শেষ হওয়ার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে বিপাকে পড়েছেন। কী হবে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার?

ইতোমধ্যে লোকসভার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়েছে রাহুল গান্ধীর। শুধু তাই নয়, ভারতের জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী মোট ৮ বছর (২ বছর জেল, পরে আরও ৬ বছর) নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তিনি। এবার কী করবেন রাহুল? কারণ, এই সাজা কার্যকর হলে প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো দূরের কথা, ২০৩৪ সালের আগে লোকসভা নির্বাচন লড়তেই পারবেন না তিনি। ততদিনে রাহুলের বয়সও হয়ে যাবে প্রায় ৬২ বছর। অর্থাৎ সক্রিয় সংসদীয় রাজনীতিতে ফিরতে হলে যেভাবেই হোক এই শাস্তির ওপর স্থগিতাদেশ পেতেই হবে রাহুলকে।

জনপ্রতিনিধি আইন অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য বা বিধায়কের ২ বছরের সাজা হলে তার সাংসদ বা বিধায়ক পদ বাতিল হয়। একটা সময় কারাদণ্ড হলেও আবেদন করার জন্য ৩ মাস সময় পেতেন সাংসদরা। কিন্তু ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে সংসদ সদস্যদের সেই বিশেষ সুবিধাও বাতিল করে দেন। যার ফলে আবেদন করার ন্যূনতম সময়টুকু পেলেন না রাহুল।

ফলে আপাতত রাহুলের কাছে একটাই পথ খোলা আছে। সেটা হল সুরাট আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা। সেক্ষেত্রে সবার আগে গুজরাট হাইকোর্ট বা সরাসরি সুপ্রিম কোর্টেও আবেদন করতে পারেন তিনি। কিন্তু তাতেও রাহুল কতটা সুবিধা করতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দিহান তার দলেরই সাবেক নেতা, প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল।

তিনি বলছেন, সংসদ সদস্য পদ ফিরে পেতে হলে শুধু যে রাহুলের শাস্তি কমতে হবে তাই নয়, তাকে নির্দোষ প্রমাণিত হতে হবে বা উচ্চতর আদালতকে নিম্ন আদালতের (সুরাট আদালত) সামগ্রিক রায়ে স্থগিতাদেশ দিতে হবে।

যদিও কলকাতার আইনজীবী শুভজিৎ রায় চৌধুরীর অভিমত, উচ্চ আদালতে রাহুলের শাস্তির পরিমাণ কিছুটা কমলেই তিনি সংসদ সদস্য পদ ফিরে পাবেন। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, একমাত্র ২ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলেই সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়।

শুভজিৎ বলেন, অতীতের নজির আছে, এর আগে বহুক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে স্পিকারের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সংসদ সদস্য বা বিধায়কদের পদ ফিরিয়ে দিয়েছেন আদালত। যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ লাক্ষাদ্বীপের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) সংসদ সদস্য মহম্মদ ফয়জল। দুই মাস আগে খুনের চেষ্টার অপরাধে তাকে ১০ বছর জেলের সাজা দেন লাক্ষাদ্বীপের স্থানীয় আদালত। সঙ্গে সঙ্গে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে দেন স্পিকার। কিন্তু পরে কেরল হাইকোর্ট ফয়জলের ওই সাজা বাতিল করেন। একই সঙ্গে তার সংসদ সদস্য পদ পুনর্বহাল করার রায় দেয়। কংগ্রেসের আশা রাহুলের ক্ষেত্রেও একই রকম নির্দেশ পাওয়া যেতে পারে। তবে এনসিপি আর রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস এক নয়। এনসিপি অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মতো।

কংগ্রেস সূত্র বলছে, রাহুল নিম্ন আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন। কংগ্রেস আবার দাবি করছে, যেভাবে রাহুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে সেটাও বেআইনি। রাহুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত লোকসভার সচিবালয়ের। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, লোকসভার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করতে পারেন শুধু রাষ্ট্রপতি। সেটাও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পর। তাই যে প্রক্রিয়ায় রাহুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে, সেটাকেও আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতেই পারে। কংগ্রেস নেতারা আত্মবিশ্বাসী নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতে টিকবে না আর তাদের নেতা পদও ফিরে পাবেন।

তবে মোদি পদবি বিতর্কে সুরাট জেলা আদালতের বিচারক এইচএইচ বর্মা ২ বছরের জেলের সাজা ঘোষণার পাশাপাশি রাহুলকে ১০ হাজার রুপির বিনিময়ে ৩০ দিনের জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। পাশাপাশি উচ্চতর আদালতে আপিল করার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত করার ওপর কোনো স্থগিতাদেশ দেননি তিনি। ফলে আইন মেনেই দোষী রাহুলকে বরখাস্ত করেছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা।

শুক্রবার রাহুলের সংসদ সদস্য পদ খারিজে সরকার পক্ষের নজিরবিহীন তৎপরতা দেখে বিরোধী নেতারা মনে করছেন, দ্রুত কেরলের ওয়েনাড়ে উপনির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হতে পারে। এখান থেকেই গত লোকসভা নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন রাহুল। যদিও উচ্চ আদালত মনে করলে সেই প্রক্রিয়ার ওপরেও স্থগিতাদেশ দিতে পারেন। তবে গতকাল দিনভর চুপ থাকার পর রাহুল নিজেও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন।

ছোট্ট টুইটে তার বার্তা ছিল, ‘দেশের কণ্ঠস্বরের জন্য লড়াই করছি। প্রতিটি মূল্য চোকাতে প্রস্তুত। ’ ফলে এখন দেখার শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস দল আগামীতে তাদের নেতা রাহুলের জন্য কী পদক্ষেপ নেয়?

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।