কলকাতা: রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্য পদ খারিজ নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল ভারতের জাতীয় রাজনীতি। কংগ্রেসের এই নেতা পাশে পেয়েছেন বিরোধীদেরও।
রোববার (২৬ মার্চ) থেকে শুরু হয়েছে কংগ্রেসের ‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলন। তবে এই পরিপ্রেক্ষিতে রাহুলের উত্তাপ বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কতখানি কাছাকাছি আনতে সক্ষম হবে, তা নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে। কারণ, ক্ষীণ হয়ে যাওয়া কংগ্রেসের এখনও যে দাদাগিরির মনোভাব রয়েছে তা থেকে না সরলে বিজেপিবিরোধী জোট যে হোঁচট খাবে, এদিন সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদের পুত্র তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব।
রোববার তেজস্বী বলেছেন, কংগ্রেস যেভাবে চালিকা শক্তির মনোভাব নিয়ে চলছে সেই অবস্থা থেকে সরে আসতে হবে। শক্তিশালী আঞ্চলিক দলগুলোর হাতে বিজেপিবিরোধী জোট পরিচালনার দায়িত্ব ছাড়তে হবে। কংগ্রেসকে বিষয়টা বুঝতে হবে। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে যেসব রাজ্যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী সেখানে তাদেরকে চালকের আসন ছেড়ে দিতে হবে।
তবে এদিনও অবশ্য রাহুল ও তার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরব ছিল বিজেপিও। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ভোপালের এক সভা থেকে বলেছেন, মহাত্মা গান্ধী সত্যাগ্রহ করেছিলেন দেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যে। আর আজ কংগ্রেস সত্যাগ্রহ করছে রাহুল গান্ধীর জন্য। যিনি দলিতদের অপমান করেছেন।
অপরদিকে, মোদী পদবী ইস্যুতে শনিবার হুঙ্কার দিয়েছিলেন সোনিয়াপুত্র। স্পষ্টই রাহুল জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি গান্ধী। সাভারকার নন। তাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দু’বছরের কারাদণ্ডের আদেশ, তড়িঘড়ি সংসদের সদস্যপদ বাতিলের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গর্জে উঠেছিলেন রাহুল গান্ধী। গতকাল মোদি বিরোধী সুর আরও তীক্ষ্ণ করে জানিয়ে দিয়েছেন, জেলে যেতে হলে যাব। কিন্তু, আদানির সঙ্গে মোদির সম্পর্কের রহস্য উদ্ঘাটন করেই ছাড়ব। মোদির মুখোশ আজ নয় কাল খুলবই।
দীর্ঘদিন পর এই ইস্যুতে কংগ্রেস পাশে পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, বাম-সহ বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে। স্বয়ং রাহুল জোটের বার্তা দিয়ে বলেছেন, সমস্ত বিরোধী দল আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমরা সবাই একজোট হয়ে মানুষের কাছে যাব। এবার রাস্তায় নামবে বিরোধী জোট।
রোববারও কংগ্রেস দফতরে এক ঘণ্টা ধরে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন রাহুল। প্রবল স্লোগান ও জয়ধ্বনির মধ্যেও তিনি লাগাতার আক্রমণ করে যান মোদিকে। এদিনও রাহুল বলেছেন, আদানির ভুয়া কোম্পানিতে ২০ হাজার কোটি রুপির একটি রহস্যময় লগ্নি রয়েছে। কে তা করল? নরেন্দ্র মোদি জবাব দিন।
প্ল্যান করে সংসদ ভবনে তাকে বলতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেছেন রাহুল (যখন সংসদ ছিলেন)। রাহুলের কথায়, আমি লোকসভার স্পিকারকে দু’বার চিঠি লিখলাম। দেখা করলাম। বললাম, আমাকে বলতে দিন। আমার বলার অধিকার রয়েছে। এটাই সংসদীয় রীতি। স্পিকার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, আমার কিছু করার নেই। আমি সংসদ ভবনে কথা বলি সেটা মোদিজি চান না। উনি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছেন। তাই সদস্য পদ খারিজ করেছে। কিন্তু আমাকে সারা জীবনের জন্য বহিষ্কার করলেও কিছু যায় আসে না। মোদিজির মুখোশ আমরা খুলবই।
একই ভাবে রোববার রণংদেহি মূর্তি ধারণ করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। দাদার পাশে আছে বলে বার্তা দিয়েছেন তিনি। এরপর কী করবেন রাহুল? সাংবাদিকদের প্রশ্নে তার জবাব, ফের ৪ মাস ধরে ভারত জোড়ো যাত্রায় নামবো। আর সব বিরোধীদল মিলে মানুষের কাছে যাব। রাহুলের এই বার্তা বাস্তবায়িত হলে, ৪৮ বছর পর হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে। তবে এখন দেখার রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস কতটা দাদাগিরি কমায়। কতটা নরম মনোভাব দেখার ভারতের আঞ্চলিক শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলোকে? তবে ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এক অন্য সমীকরণ দেখবে ভারতবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
ভিএস/এসএ