কলকাতা: সম্প্রতি জনমত সমীক্ষা এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছিল। আর সেই মত শনিবার (১৩ মে) কর্ণাটকে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নিল ভারতের শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দল, জাতীয় কংগ্রেস।
তবে সরকার গড়তে প্রয়োজন ছিল ১১৩ আসনের। ফলে ফের কংগ্রেস কর্ণাটকে কংগ্রেস যে সরকার গড়তে চলেছে, আর তা শুধু সময়ের অপেক্ষা। রোববার (১৪ মে) জয়ী বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করবে কংগ্রেস। এরপর সোমবার মুখ্যমন্ত্রী শপথ গ্রহণ। তবে তার আগে কংগ্রেসকে ঠিক করতে হবে কে হবে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ। ইতিমধ্যেই জয়ী বিধায়কদের গোপনে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। তাদের ধারণা, বিজেপি টাকার বিনিময়ে কিনে নিতে পারে বিধায়কদের। ফেলে দিতে পারে সরকার। অতীতের সেই অভিজ্ঞতা থেকে জয়ী বিধায়কদের গোপনে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া শুরু করেছে কংগ্রেস।
রাজনৈতিক মহলের অভিমত, ২০২৪ সালের ভারতের লোকসভা ভোটের আগে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন ছিল বিজেপি এবং কংগ্রেস দুই দলের কাছেই এক অ্যাসিড টেস্ট। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপির কাছে পরীক্ষা ছিল কর্ণাটকে জয়ের মাধ্যমে ভারতের আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে দক্ষিণ ভারতে ক্ষমতা বিস্তার। অপরদিকে, কংগ্রেসের লড়াইটা ছিল অস্তিত্ব রক্ষার। অভিজ্ঞদের অভিমত, এই অস্তিত্ব রক্ষায় সবচেয়ে সহযোগী হয়েছে রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্য পথ কেড়ে নেওয়ার মতন হিংসা এবং তার নেতৃত্বে ভারতজড়ো যাত্রা। তারই ফলস্বরূপ কর্ণাটকে কংগ্রেসের জয়। ফলে শেষ হাসি হাসলো ভারতের সবচেয়ে শতাব্দী প্রাচীন দল কংগ্রেস।
কর্ণাটকের সেই ঐতিহাসিক জয় আসতেই দক্ষিণ ভারত থেকে একেবারে মুছে গেল বিজেপি। দক্ষিণ ভারতে আর কোনো রাজ্যই বিজেপির ক্ষমতায় রইল না। ফলে কংগ্রেসের সেই জয়ের রেশ এসে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। এদিন, কর্ণাটকের প্রিয় দলের জয়ের খবর আসতেই সেলিব্রেশন শুরু হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায়। একই উন্মাদনা দেখা যায় কলকাতার প্রদেশ কংগ্রেস অফিসের সামনে। জয়ের খবর আসতেই কর্মী সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে কলকাতায় সিআইটি রোডে অবস্থিত প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতরে। সবুজ আবিরের মধ্য দিয়ে অকাল দোল উৎসবে মেতে ওঠেন সকলে। ঢাকের বাদ্যি আর নাচের তালে চলে মিষ্টি মুখ। রীতিমতো উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা।
কর্ণাটকের জয় প্রসঙ্গে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, কর্ণাটকের জয় এক ঐতিহাসিক জয়। রাহুল গান্ধীর ভারতজোড়ো যাত্রার ছাপ পড়েছে এই জয়ে। কর্ণাটকের সাত জেলার মধ্য দিয়ে রাহুল গান্ধী ভারতজোড়ো যাত্রা করেছিলেন। সে সময় তার বড় প্রভাব পড়েছিল। আমি নিজে কর্ণাটকে ভোটের প্রচারে গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলে তা বুঝতে পেরেছিলাম, এবারের জয় নিশ্চিত। তার এই যাত্রায় ভারতবর্ষের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ফলে মোদির সাম্প্রদায়িক তাস খেলার চেষ্টা আর তাদের জঘন্য রাজনীতি ভারতবাসী মেনে নেবে না। কর্ণাটকের মানুষ তা বুঝিয়ে দিল। সেখানে সাফ হয়ে গের বিজেপি। ইন্দিরা গান্ধীর আমল থেকে বিপদের সময় কর্ণাটক সবসময় কংগ্রেসের পাশেই ছিল। ফলে কংগ্রেসের এই জয় সারা ভারতের কংগ্রেস কর্মীরা উজ্জীবিত। মোদিকে হারানো যায়, অমিত শাহকেও হারানো যায়। তা দেখিয়ে দিল কর্ণাটক।
তবে পরিসংখ্যান বলছে, গতবারের তুলনায় এবারে কর্ণাটকে বিজেপির আসন সংখ্যা কমলেও ভোট শতাংশে খুব একটা হেরফের হয়নি। তার একটা কারণ হল, বিজেপি ভোটবাক্সে কিছুটা ভাগ বসাতে সফল হয়েছে সেখানকার জনতা দল সেকুলারের। জনতা দলের অনেকখানি ভোট পেয়েছে বিজেপি। ফলে গতবারের ভোট শতাংশ ধরে রাখতে পারল বিজেপি। কিন্তু যেখানে মূল ল়ড়াই ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে সেখানে বিজেপির ভোট শতাংশ কমেছে। ফলে কংগ্রেস গতবারের চেয়ে মাত্র ৬ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে কর্ণাটকের জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের মতে, সেই কারণেই এই জয় যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এই জয় প্রমাণ করছে মানুষ কংগ্রেসকে বেছে নিতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০২৩
ভিএস