কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত): ভারতের ওড়িষায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আড়াইশর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আহত হয়েছেন ৯০০ জনেরও বেশি যাত্রী।
শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যায় ওড়িষার বালেশ্বরের কাছে ঘটে যাওয়া এ ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেক্স ও যশবন্তপুর এক্সপ্রেস এবং একটি পণ্যবাহি ট্রেন। পরপর তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষ ভারতের রেল দুর্ঘটনার নিরিখে সচারচর দেখা যায় না।
ওড়িষা সরকারের তথ্য অনুযায়ী শনিবার (৩ মে) সকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ২৩৮ জন। আহত হয়েছেন ৯০০ জনেরও বেশি যাত্রী। তাদের মধ্যে ১০০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখনও ৫টি বগি থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করা যায়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে সেসব বগির ভেতরের কেনো যাত্রী জীবিত নাও থাকতে পারেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে আহত ও নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রত্যক্ষদর্শীদেরও আশঙ্কা উদ্ধারকাজ যত এগোবে, নিহত এবং আহতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
এদিকে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ রুপি, গুরুতর আহতদের ২ লাখ রুপি এবং অল্প আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
শুক্রবার সন্ধ্যার দুর্ঘটনা কবলিত ওই দুই যাত্রীবাহি ট্রেনে বাংলাদেশিরাও ছিলেন। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ জন বাংলাদেশি যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও ওই দুই যাত্রীবাহি ট্রেনে কতজন বাংলাদেশি ছিল ভারত সরকারের পক্ষথেকে এখন পর্যন্ত তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার রাতেই কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গেছেন।
মিনাজ উদ্দিন নামে এক বাংলাদেশি যাত্রী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তিনি করমন্ডল এক্সপ্রেসে ভেলোরে চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাচ্ছিলেন। ময়মনসিংহের এই বাসিন্দা দুমড়ে যাওয়া ঠিক আগের বগিতেই ছিলেন।
তিনি বলেন, করমন্ডল এক্সপ্রেসের বি-থ্রি কামরায় ছিলাম। পাশের কামরার যে সব বাঙালিরা ছিল তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। এতবড় রেল দুর্ঘটনা আমার জীবনে কোনোদিন দেখিনি। চারিদিকে মরদেহ আর মরদেহ। প্রায় ১৫ জনের মতো বাংলাদেশি পাশের বগিতে ছিল। তারা কী অবস্থায় আছে সে সমন্ধে কোনো তথ্য জানতে পারেনি।
মূলত করমন্ডল ও যশবন্তপুর এক্সপ্রেস চলে হাওড়া থেকে চেন্নাই। করমন্ডল ছাড়ে হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে। যশবন্তপুর ছাড়ে হাওড়া স্টেশন থেকে। বহু বাংলাদেশি চেন্নাই যাওয়ার জন্য এই ট্রেনগুলো ব্যবহার করে। বিশেষ করে চিকিৎসার কারণে ভেলোর বা অ্যাপোলো হাসপাতাল যান তারা। দুর্ঘটনার পর থেকেই সম্পূর্ণ বিষয়টি মনিটরিং করছে কলকাতার বাংলাদেশ উপ দূতাবাস। এ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য উপ-হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য +৯১-৩৮৩৫৩৫৩৩ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করা হয়েছে।
উদ্ধার কাজে ভারতের রেলের পাশপাশি কেন্দ্রীয় সরকার, ওড়িষা সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী াংশ নিয়েছে। এ কাজে ৬০টি দমকল ও একাধিক ক্রেন ব্যবহার করা হচ্ছে। গভীর রাতে উদ্ধার কাজে নামানো হয়েছে বিমান বাহিনীর সদস্যদেরও। আনা হয়েছে ডগ স্কোয়াড, কুকুর দিয়ে সন্ধান চালানো হচ্ছে। স্থানীয়রাও উদ্ধার কাজে হাত লাগিয়েছেন। ব্যবহার করা হয়েছে ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স।
এ ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছচ্ছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবসহ রেলের পদস্থ কর্মকর্তারা। রেল উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
জরুরি ভিত্তিতে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। ০৩৩-২২১৪৩৫২৬ /২২৫৩৫১৮৫ নম্বরগুলিতে যোগাযোগ করা যাবে। এছাড়া করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় খবরাখবরের জন্য হাওড়া স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর ০৩৩-২৬৩৮২২১৭ এবং শালিমার স্টেশনের জন্য হেল্পলাইন নম্বর ৯৯০৩৩৭০৭৪৬ চালু রয়েছে। এই ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সব ট্রেন আগামী ৩ দিন বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বালেশ্বেরে দুর্ঘটনাস্থলে যাবেন বলে জানা গেছে। হাওড়ার ডুমুরজলা হেলিপ্যাড গ্রাউন্ড থেকে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা নাগাদ হেলিকপ্টারে তার বালেশ্বেরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৩
ভিএস/এমএমজেড