কলকাতা: উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে রাজ্যে ফের অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। যার জেরে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) গোটা রাজ্যকে ‘অশান্ত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে মণিপুর সরকার।
রাজ্যটির সরকারের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে সেনাবাহিনীর অধীনে থাকা কয়েকটি থানা এলাকা ছাড়া গোটা রাজ্যেই অশান্ত অঞ্চল। অর্থাৎ রাজধানী ইম্ফলের ১৯টি থানা এলাকা বাদে রাজ্যের সর্বত্র জারি করা হয়েছে সেনা আইন ‘আফস্পা’ (আর্ম ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার অ্যাক্ট)।
আফস্পা আইন জারির অর্থ মণিপুরের দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা এখন সেনা নিয়ন্ত্রণে। মূলত, এ আইনে ভারতীয় সেনাকে অনেকটা ক্ষমতা দেওয়া আছে। সন্দেহের বশে যে কোনো ব্যক্তিতে আটক করতে পারে তারা। তল্লাশি চালানোর জন্য আদালতের অনুমতি দরকার হবে না। এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কর্তব্যরত সেনা বিনা নোটিশে গুলিও চালাতে পারে।
কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে গত কয়েক মাস উত্তপ্ত ছিল মণিপুর। এরপর এক প্রকার শান্ত হওয়ায় প্রায় পাঁচ মাস পর গত শনিবার থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হয়। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মেইতি সম্প্রদায়ের দুই শিক্ষার্থীর লাশের ছবি ভাইরাল হতেই ফের নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। ১৭ বছর বয়সী হিজাম লিন্থোইনগাম্বি এবং ২০ বছর বয়সী ফিজাম হেমজিত নামে ওই দুই শিক্ষার্থী গত ৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ইম্ফলের শিক্ষার্থীরা প্রবল বিক্ষোভে সামিল হন। পরিস্থিতি সামলাতে নামাতে হয় র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী। অশান্তির আশঙ্কায় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে রাজ্যের স্কুলগুলোতে ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আগামী চারদিন ফের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মণিপুরের বিভিন্ন এলাকায় রাজ্য পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে মণিপুরে চলমান সহিংসতার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন, জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মণিপুরের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, মণিপুরকে যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তর করার জন্য দায়ী বিজেপি। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকে বরখাস্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার অভিমত, এটা হলেই মণিপুরে ফিরবে শান্তি। এটাই হবে প্রথম পদক্ষেপ।
মণিপুরে সম্প্রদায় সংরক্ষণকে ইস্যু করে চলতি বছরের ৩ মে থেকে শুরু হয় অশান্তির সূত্রপাত। সেই থেকেই অশান্তি চলছে। সহিংসতায় প্রাণ গেছে বহু নাগরিকের।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৭ ঘণ্টা, সেপ্টম্বর ২৮, ২০২৩
ভিএস/এসআই