ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

কলকাতায় দুর্গাপূজায় বাংলাদেশি শিল্পীদের চমক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
কলকাতায় দুর্গাপূজায় বাংলাদেশি শিল্পীদের চমক

কলকাতা: শহরের চারদিকে এখন শুধুই পূজার আমেজ। কোথাও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, কোথাও দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে পূজামণ্ডপ।

কলকাতার দুর্গাপূজা মানেই শিল্পভাবনা। এবারে তাতে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশিসহ বিদেশি শিল্পীরা। যার দ্বারা দুর্গাপূজা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। তার ওপর সম্প্রতি ইউনেস্কোর ‘ইনট্যানিজবল কালচারাল হেরিটেজ’ এর মর্যাদা পেয়েছে কলকাতার দুর্গোৎসব। ফলে শহরবাসীকে চমক দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে পূজা কমিটিগুলো। নানা শিল্পভাবনায় ফুটে উঠছে কলকাতার পূজামণ্ডপগুলো। তাতে এ প্রথমবার মিলেমিশে একাকার হয়েছে দুই বাংলা।

বাংলাকে এক সুতোয় বাঁধতে অভিনব আয়োজন করেছে বেহালার নতুন সংঘ। এবারে তাদের থিম ‘চতুরঙ্গের সংকল্প’। এবারই প্রথম বাংলাদেশি পাঁচ শিল্পীর শিল্পবন্ধনে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ ও প্রতিমা। মূল শিল্পী বাংলাদেশি শেখ হিমেল। তরুণ এ শিল্পী তার শিল্পভাবনা নিয়ে বলেছেন, আসলে আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনে এত প্রতিযোগিতা, এত দৌড়ঝাঁপ সেটাকেই আমরা ফুটিয়ে তুলেছি। যেটা চতুরঙ্গ অর্থাৎ দাবার মোটিভ নিয়ে কাজ করেছে। এখানে আরও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আমাদের বাংলাদেশের রিকশা পেইন্টিং। যে হস্তশিল্প বা নকশাগুলো আগে অ্যামাচার আর্টিস্টরা রং, তুলি দিয়ে করতো। সেই ডিজাইনটাও আমি অ্যাড করেছি। এছাড়া স্পেনের শিল্পী সালভেদর ডালির একটি তরল ঘড়ির আদল ব্যবহার করছি। যার সঙ্গে মেশানো হয়েছে বাংলাদেশের ফোক ডিজাইন। প্রতিমার আদলে সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে বাংলাদেশের ঢ্যাপা পুতুল ও দাবার যে কুইন।  

এ ক্লাবের নারী পূজা উদ্যোক্তা পাঞ্চালি বলেছেন, হিমেলকে কোনোদিনই আমাদের থেকে আলাদা মনে হয়নি। কারণ বাংলাদেশিকে আমরা আলাদা করে ভাবি না। আমার কখনও মনে হয়নি হিমেল আমাদের বাইরের কেউ একজন। একটা সময় আমরা তো একসঙ্গেই তো থাকতাম। একটাই তো দেশ ছিল। তো ওইভাবে কিছু আমরা ভাবছি না। সে একজন শিল্পী, আর শিল্পীর দেশ-কাল বলে কোনো সীমারেখা থাকে না। ওর সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছিল কলকাতার একটা শিল্পকলা অনুষ্ঠানে। ওর কাজ ভালো লেগেছিল। তখনই আমরা পূজামণ্ডপের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।  

অপর উদ্যোক্তা অভিজিৎ জানান, দুই বাংলাকে একসঙ্গে গাঁথার একটা প্রয়াস প্রথম থেকেই আমাদের মাথার মধ্যে ঘুরছিল। বলতে পারেন আমাদের পূজার মধ্য দিয়ে দুই বাংলার মনকে মিলিয়ে দিলাম। চিন্তাভাবনাকে হয়তো মেলানো গেল, যা আমাদের কাছে উপরি পাওনা। এখন দেখার দর্শক কতটা পছন্দ করেন।

বারোয়ারি পূজার পাশাপাশি বাংলাদেশি শিল্পভাবনা থেকে বাদ পড়ছে না কলকাতার আবাসনের পূজাও। এবারে বেহালার ডিটিসি সার্দান হাইটসের আবাসনের পূজার ভাবনা নারী শক্তি। সেই শক্তিকে হাতিয়ার করে এবারে তারা দুর্গাপূজায় শামিল হয়েছেন। পূজা আরও চমকপ্রদ করে তুলেছে দুই হাজার স্কয়ার ফিটের আলপনা, যা দিয়েছেন কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। বাংলায় এ প্রথম কোনো আবাসন দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে এত বড় আলপনা দেওয়ার নজির গড়েছে। উদ্বোধনের দিন উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।

ডেপুটি হাইকমিশনার বলেছেন, কলকাতার লোকজনের যে উৎসাহ-উদ্দীপনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বাঙালি একটা উৎসবমুখর জাত। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে যেকোনো উৎসবকে আমরা একসঙ্গে আহ্বান করি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি কথা বলে থাকেন ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। সেটি কলকাতার এ দুর্গাপূজার সময় সেই বিষয়টা আবার আমার মনে পড়ছে। আর আমরা তো চাই বাংলাদেশের শিল্পীরা কলকাতার যেকোনো উৎসব ও অনুষ্ঠানে তারা জায়গা করে নিক। তাদের শৈল্পিক ভাবনা নিয়ে চর্চা করুক কলকাতাবাসী। তবেই তো ম্যান টু ম্যান কানেকটিভিটি আরও বাড়বে।  

সব মিলিয়ে দুর্গাপূজার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন শিল্পভাবনায় সেজে উঠছে কলকাতার পূজামণ্ডপগুলো। তাতে বাংলাদেশের শিল্পভাবনাও বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। এবারের পূজায় তাই বাংলাদেশের সঙ্গে কলকাতার মেলবন্ধন দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবেন শহরের শিল্পপ্রেমীরা। জমে উঠেছে কলকাতার দুর্গাপূজা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
ভিএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।