ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বাংলাদেশি ৪ রকমের ডাল ৮ ধরনের ভর্তার স্বাদ কলকাতায়

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
বাংলাদেশি ৪ রকমের ডাল ৮ ধরনের ভর্তার স্বাদ কলকাতায় ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: শিল্প-সংস্কৃতিতে এপার-ওপার বাংলা যেন এক সুতোয় গাঁথা। খাবার-দাবারেও দুই বাংলার অমিল খুব একটা নেই।

তবু থাকে কিছু বিশেষত্ব। যেমন বাংলাদেশি ডাল-ভর্তার স্বাদ একেবারেই আলাদা। সেজন্য বাংলাদেশ থেকে কেউ কলকাতায় গেলে ডাল-ভর্তায় খোঁজেন স্বদেশের স্বাদ। কলকাতার ভোজনরসিকেরাও পেতে চান বাংলাদেশি ডাল-ভর্তারই স্বাদ। অনেক সময়ই সেই স্বাদের খাবারটি মেলে না।

বিষয়টি বিবেচনায় এবারের দীপাবলির মৌসুমে কলকাতায় বাংলাদেশি নানা স্বাদের ভর্তা ও ডাল নিয়ে হাজির হয়েছেন নয়না আফরোজ। কলকাতার মেয়ে নয়না সেনগুপ্ত, বর্তমানে বাংলাদেশি বধূ নয়না আফরোজ। ফলে দুই বাংলাকেই ভালোভাবে চেনেন। গত কয়েক বছর ধরে কলকাতার বিভিন্ন রেস্তোরাঁর শেফদের নিয়ে বাংলাদেশি ফুড ফেস্টিভ্যাল করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এবার শহরের বিখ্যাত রেস্তোরাঁ ‘সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস’র সঙ্গে জোট বেঁধে আনলেন ডাল ও ভর্তা।  

‘আমার রসনার বাংলা’ শীর্ষক এ আয়োজনে ভোজনরসিকদের পাতে উঠছে আট ধরনের ভর্তা ও  চার রকমের ডাল। ভর্তার মধ্যে রয়েছে বেগুন-কাঁচা টমেটোর ভর্তা, চিংড়ি ভর্তা, টাকি ভর্তা, তিসি বালাচাও ভর্তা, ডিম কলিজা ভর্তা, পাঠার মাংসের ভর্তা, আলু মিক্সড পোস্ত ভর্তা এবং তিল-বাদামের ভর্তা। বাড়তি রয়েছে মরিচ ভর্তা।

এছাড়া ডালে রয়েছে হাতে মাখা মসুর ডাল, মেহেরপুরের আদলে ঘি-অড়হর ডাল, ইলিশের মুড়ো দিয়ে মাশকলাইয়ের ডাল এবং মুগ-খাসী ডাল। জিভে জল আনা এসব তরকারি পরিবেশন হচ্ছে ঢেকিছাঁটা হেতুমারী লাল চালের ভাত দিয়ে। চাইলে কেউ সাদা ভাতও নিতে পারেন।  

নয়নার আয়োজনে এসব মিলবে সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস রোস্তোরাঁর চারটি আউটলেটে। ১০ নভেম্বর শুরু হওয়া এ রসনার উৎসব চলবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত।

কলকাতার সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস রেস্তোরাঁ ভোজনবিলাসীদের কাছে ‘সিক্স বিপি’ নামে পরিচিত। শহরের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি রেস্তোরাঁর মধ্যে এটি একটি। জনপ্রিয় এই রেস্তোরাঁর মোট আটটি ব্রাঞ্চে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া শহরের ১৭টি লোকেশনে রয়েছে হোম ডেলিভারি ব্যবস্থা।

রেস্তোরাঁর প্রধান শেফ সুশান্ত সেনগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের দুটো বিষয় আমাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং শেখার। প্রথমত বাঙালি খাবার, দ্বিতীয়ত আতিথেয়তা। সেই অর্থে পুরো বাংলাদেশকে একটা উৎসবে আনা সম্ভব নয়। তাই কালী পূজা এবং দীপাবলির কথা ভেবে কলকাতাবাসীর জন্য প্রথম ধাপে রাখা হলো বাংলাদেশি স্বাদের ডাল ও ভর্তা।  

সুশান্ত বলেন, শহরবাসী ভর্তা কথাটির সঙ্গে অভ্যস্ত নন। তাই কিছুটা চমক ভাবতে পারেন। এ বিষয়ে আক্ষরিক অর্থে সৌভাগ্যবান যে শেফ নয়না আফরোজকে আমরা পেয়েছি।  

কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস সস্ত্রীক শুক্রবার (১০ নভেম্বর) এই আয়োজনের সূচনা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের সব কর্মকর্তা।  

আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, শেফ নয়নার রান্নার স্বাদ আমি আগেও নিয়েছি। তবে আমি শুধু স্বাদ বলবো না, তার খাবারে একটা নস্টালজিক ব্যাপার থাকে। কারণ যতই হোক এটা বিদেশের মাটি। সেখানে বাংলাদেশের স্বাদ পাওয়াটা আমাদের কাছে বাড়তি প্রাপ্তি। পরিবারের কথা মনে পড়ে যায়। ওনার আরও একটা বিষয় ভালো লাগে। প্রতিবার নতুন কিছু করেন। বাঙালি মানেই আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। কিন্তু বাংলাদেশি হিসেবে আমি সংযোজন করবো, আমরা ভর্তা-ভাতে বাঙালি। সেই ভর্তাকে কলকাতায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, চেনানো হচ্ছে। এটা সত্যিই আমাদের কাছে ভালোলাগার বিষয়।

ছবি: বাংলানিউজনয়না আফরোজ বলে আসছেন, সেই অর্থে অথেনটিক (খাঁটি) বাংলাদেশি খাবার কলকাতায় পাওয়া যায় না। বাংলাদেশি খাবার বলে যা চালানো হয় তা বহু অংশে বাংলাদেশের তো নয়ই, এমনকি স্বাদেও মেলে না। কলকাতায় এলে এটা অবশ্যই বুঝতে পারেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু শহরবাসী এসব জানেন না। এ শহরবাসীর সিংহভাগের শিকড় বাংলাদেশে গাঁথা। তারা কোথাও বাংলাদেশের খাবার পাওয়া যায় শুনলেই সেটার স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করেন। অথচ অথেনটিক বাংলাদেশি খাবার পান না। সেই অর্থে বলা যায় তাদের ঠকানো হচ্ছে।  

নয়নার অভিমত, যে অঞ্চলের রান্না, সেই রান্নার মূল উপাদান সেখানকারই ব্যবহার করতে হবে। তবেই সেই স্বাদ মেলে।

খুব শিগগির নয়না আফরোজকে দেখা যেতে পারে অন্য ভূমিকায়। এতদিন ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নামিদামি রেস্তোরাঁয় গিয়ে খুন্তি ধরেছেন। এবার বঙ্গবাসীকে বাংলাদেশি খাবার চেনাতে এবং খাওয়াতে নিজেই খুলতে চলেছেন রেস্তোরাঁ। কিন্তু কোথায়? সেই প্রশ্নে, হাসতে হাসতে তার উত্তর, ‘অপেক্ষা করুন, সবকিছুই জানতে পারবেন। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
ভিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।