কলকাতা: কলকাতা শহরের বুকে মানুষের লাশ সংরক্ষণের জন্য প্রায় দুশো বছর আগেই মার্কুইস ট্রিট সংলগ্ন রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে এবং পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন বো ব্যারাকে নির্মাণ করা হয়েছিল শবাগার। পরবর্তী সময় লাশ রাখার জন্য তপসিয়ায় গড়ে তোলা হয়, পিস ওয়ার্ল্ড নামে আরও একটি শবাগার।
পিস হ্যাভেন, পিস ওয়ার্ল্ড ছাড়াও কলকাতার বেশকিছু সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোমে লাশ রাখার জন্য মরচুয়ারি বা শবাগার রয়েছে। সেখানে সব ধর্মাবলম্বীদের লাশ রাখার ব্যবস্থা থাকলেও শুধু মুসলিমদের লাশ রাখার জন্য কলকাতায় এতদিন কোনো নির্দিষ্ট শবাগার ছিল না। এবারই প্রথম মুসলিমদের লাশ সংরক্ষণে শবাগার গড়ে তোলা হচ্ছে কলকাতার পাকসার্কাস অঞ্চলের গোবরা মুসলিম কবরস্থানের একাংশে।
প্রসঙ্গত, মুসলিমদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল তাদের জন্য কলকাতায় একটি স্বতন্ত্র শবাগারের ব্যবস্থা করা হোক। অবশেষে সেই আবেদনে সাড়া দিল সমাজসেবামূলক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম ক্যালকাটা’। সেই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মাঞ্জিল-এ- সুকুন’ নামের মুসলিম মাইয়াতের লাশ রাখার জন্য আধুনিকমানের শবাগার। মুসলিম মাইয়াতের লাশ সংরক্ষণের পাশাপাশি গোবরা মুসলিম কবরস্থানে দুটি ব্লকে বেওয়ারিস মুসলিমদের লাশ কাফন-দাফনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।
মুসলিম মাইয়াতের লাশ সংরক্ষণের জন্য শবাগার নির্মাণের আরজি জানিয়ে ২০১৫ সালে কলকাতা কর্পোরেশনে আবেদন জানিয়েছিলেন মেয়র পারিষদ তথা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সভাপতি আমিরুদ্দিন ববি। মেয়র পারিষদের সেই আবেদনের সাড়া দিয়ে সম্প্রতি কলকাতা কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মুসলিম লাশ সংরক্ষণের জন্য মাঞ্জিল-এ-সুকুনের বৈধ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মাঞ্জিল-এ-সুকুন এবং বেওয়ারিস মুসলিম লাশ দাফনের ‘মিট্টি মঞ্জিল’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন রাজ্যের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরাদ হাকিম।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সভাপতি আমিরুদ্দিন ববি জানিয়েছেন, এতদিন শহরে মুসলিম মাইয়াতের লাশ সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো শবাগার ছিল না। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কলকাতা পুরসভা সরকারি নিয়ম মেনে আমাদের প্রতিষ্ঠানকে সেই অনুমতি দিয়েছে। লাশ সংরক্ষণের জন্য অত্যাধুনিক মানের ছয়টি ফ্রিজার বক্স কেনা হয়েছে। মাত্র ৫০০ রুপির বিনিময়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টার জন্য লাশ সংরক্ষণ করা যাবে। এছাড়া বেওয়ারিস মুসলিম লাশ কাফনের স্থানটিকেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে বলেও জানান আমিরুদ্দিন ববি।
দশকের পর দশক ধরেই বৃহত্তর কলকাতার হাসপাতাল, থানাসহ বিভিন্ন এলাকায় বেওয়ারিস মুসলিম লাশ শরিয়তি নিয়ম এবং আদব কায়দা মেনে দাফন করে আসছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটি বছরে আড়াইশো থেকে তিনশোর বেশি লাশ দাফন করে থাকে। ওই সব বেওয়ারিশ মুসলিম লাশ দাফনের জন্য পার্কসার্কাস অঞ্চলের গোবরা মুসলিম কবরস্থানে দুটি ব্লককে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পারিষদ আমিরুদ্দিন ববি।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ