ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পরিশ্রম করাতে মানা, তাই হাতিকে ট্রাস্টে দান করছেন মালিকরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
পরিশ্রম করাতে মানা, তাই হাতিকে ট্রাস্টে দান করছেন মালিকরা

আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরা সরকারের বন দপ্তরের তথ্য অনুসারে, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পোষ্য ৬৫টি হাতি রয়েছে। এর মধ্যে ৬১টি ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং বাকি চারটি বন দপ্তরের।

ব্যক্তি মালিকানাধীন হাতিগুলির একটি বড় অংশ রয়েছে ঊনকোটি জেলায়। কিন্তু বর্তমানে মালিকরা হাতিগুলো নিজেদের কাছে রাখার বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছু হাতিকে ভিন রাজ্যের ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং আরও কিছু হাতি সেই দানের লাইনে আছে।

বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন ত্রিপুরা বায়োডাইভারসিটি বোর্ডের অ্যাসিস্টেন্ট কনজারভেটর অনিমা দাস।  

হাতির বিষয়ে ২০২৩ সালে করা একটি জনস্বার্থ মামলায় রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে উল্লেখ করা হয়, ব্যক্তিমালিকানার বা বিভিন্ন সংস্থায় রাখা পোষ্য হাতিদের দিয়ে কোনো কাজ করানো যাবে না। বিশেষ করে সার্কাসে বিনোদন দেওয়ার জন্য হাতি দিয়ে বেশ কিছু কসরত এবং খেলা দেখানো হয়। পাশাপাশি ভারি সামগ্রী বহন ও টেনে নিয়ে যাওয়ার কাজেও হাতিকে ব্যবহার করা হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা থেকে গাছের লগ টানার কাজে হাতিকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  

ত্রিপুরা রাজ্যে সার্কাসে হাতির ব্যবহার নেই। তবে গাছ টানার কাজে হাতি ব্যবহার করা হতো। সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পর হাতিকে দিয়ে আর কাজ করানো যাচ্ছে না। তাছাড়া অত্যাধুনিক যন্ত্রের বিশেষ করে ড্রেজারের মত মেশিনের ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় বড় কাজের জন্য হাতির চাহিদা দিন দিন কমে আসছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কাজে না লাগার ফলে হাতি দিয়ে রোজগার করতে পারছেন না মালিকরা। অথচ একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির দৈনিক গড়ে এক শ কেজি খাবারের প্রয়োজন হয়। রাজ্যের পাহাড়ে জঙ্গলের ঘনত্ব আগের তুলনায় অনেক কমেছে। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে পাহাড়িএলাকায় খাবারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। এর ফলে বন্য হাতিদেরও খাবারের সংকট দেখা দেয়। ফলে এগুলিও জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে এসে। একইভাবে গৃহপালিত হাতিগুলিরও খাবারের সংকট দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে মালিকদের হাতির খাবার কেনার জন্য প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে টাকা খরচ করতে হয়। সেজন্য হাতি অনেক মালিকের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকে এগুলি দান করে দায়মুক্ত হতে চাইছেন।

হাতিমালিকদের এই অবস্থা দেখে এগিয়ে এসেছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারা হাতি দত্তক নিয়ে সব দায়িত্ব নিতে সম্মতি প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে ত্রিপুরা থেকে বহিঃরাজ্যের দুটি সংস্থা মোট ১২টি হাতিকে দত্তক হিসেবে নিয়েছে। এই দুটি সংস্থা হলো গুজরাট রাজ্যের আমেদাবাদ শহরের জগন্নাথ মন্দির ও জামনগরের রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের এলিফ্যান্ট ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ দত্তক হিসেবে নিয়েছে পাঁচটি হাতিকে। আর রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের এলিফ্যান্ট ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট সাতটি হাতিকে দত্তক হিসেবে নিয়েছে।

ত্রিপুরা রাজ্যের আরও কিছু মালিক তাদের হাতিগুলোকে দত্তক হিসেবে দিয়ে দেবেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪
এসসিএন/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।