কলকাতা: ভারতের জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে কার্যকর হয়ে গেল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন' সিএএ।
সোমবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছিলেন, নির্বাচনের আগে সিএএ কার্যকর হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।
তার আগেই আজ মধ্যরাত থেকেই সিএএ কার্যকর হয়ে যাবে বলে জানা গেছে।
তবে এ সম্ভাবনা আগাম জানতে পেরে সোমবার (১১ মার্চ) সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন বিকেলে রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এতে যদি কোনো বৈষম্য থাকে, তাহলে বাংলায় কিছুতেই সিএএ চালু করতে দেব না। যদি সিএএ দেখিয়ে এনআরসি আনে তা আমরা মানি না। এনআরসি আমি কিছুতেই মানি না। নির্বাচন এলে কিছু একটা খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ওরা। অনেক সংবাদমাধ্যম দেখাতে শুরু করেছে, আজ রাতের মধ্য়ে নাকি সিএএ চালু হবে। ২০২০ সালে সিএএ পাস হয়েছিল। তারপর চার বছর চলে গেছে। এখন নির্বাচনের দু-তিনদিন আগে সিএএ চালু করার প্রয়োজন হয়ে পড়ল? এটা রাজনৈতিক পরিকল্পনা।
মুখ্যমন্ত্রী সিএএ নিয়ে মোদি সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, সিএএ ছেলের হাতে মোয়া নাকি? যাদের ভোটে সরকার তৈরি হয়েছে, তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে কীভাবে প্রশ্ন তুলতে পারে বিজেপি? এ জন্যই কি মতুয়া, নমঃশূদ্রদের আধার কার্ড (ভারতীয় পরিচয় পত্র) বাতিলের চক্রান্ত হয়েছিল? কিন্তু আমরা তো সবাই নাগরিক। ভোট আজ আছে কাল ফুরিয়ে যাবে। আর সিএএ একটি চক্রান্ত। আমি বিশ্বাস করি, বাংলায় যারা বসবাস করছেন, তারা সবাই এ রাজ্যের নাগরিক। তাদের নাগরিক অধিকার, তাদের সামাজিক অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, সম্পত্তির অধিকার সবই আছে। এ নতুন আইন সে অধিকার খর্ব করবে না তো?
যদিও মমতা যখন বৈঠক করেন তখনও এ বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি।
তিনি বলেছেন, আমার বক্তব্য আগাম জানিয়ে রাখলাম। আগে কাগজ দেখি, কি রুল আছে, তারপর প্রতিক্রিয়া দেব। তবে সিএএ নিয়ে কেউ ভয় পাবেন না। আধার কার্ড যখন বাতিল করা হচ্ছিল, আমরা রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। এ আইনের মাধ্যমে কারও যদি নাগরিকত্ব বাতিল হয়, তৃণমূল একমাত্র রাজনৈতিক দল, যারা সর্বপ্রথম আওয়াজ তুলবে। তার সূচনা এখনই করে দিলাম। কটাক্ষের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, মধ্যরাতে কী ফুল ফুটবে সেটা তো কেউ জানি না। সাহস থাকলে ছ’মাস আগে করতেন। চার বছর অপেক্ষা করতে হলো কেন? ভোটের জন্য?
২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিএএ নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালের সেই নিয়ে পদক্ষেপ হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে সিএএ সংক্রান্ত বিল পাস হওয়া মাত্র রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দেন। তবে দেশজুড়ে এ ইস্যুতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় কার্যত চাপে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার সে আইনটি কার্যকর করেনি।
পাস হওয়া এই আইনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের অমুসলিম নাগরিক (হিন্দু শিখ খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ) সংশ্লিষ্ট দেশের ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত সরকার। আপাতত ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে আশ্রয় নেওয়া এ সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
২০১৯ সালে সিএএ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলসহ অন্যান্য বিরোধীরা প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলে এসেছে। তাদের বক্তব্য ছিল, ধর্মের ভিত্তিতে কখনো নাগরিকত্ব দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কিন্তু দেশটির শীর্ষ আদালত অর্থাৎ সু্প্রিম কোর্ট সিএএ-কে সাংবিধানিক বৈধতা দিয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২৪
ভিএস/জেএইচ