কলকাতা: ভারতে বন্দি প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারসহ ছয় সহযোগীর মামলায় শুনানি চলাকালীন বিচারক, ইডির আইনজীবীর উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশ কি বলছে? ওদের নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে? ওরা যদি সবাই বাংলাদেশি হয়, তাহলে কেমন করে জামিন হবে? আর জামিন হলে ভারতে থাকবে কি করে? এমনই মন্তব্য করেছেন বিচারক। যা নিয়ে মামলায় নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে ২২ এপ্রিল।
শনিবার (৬ এপ্রিল) হালদারদের কলকতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সিবিআই -১ কক্ষে বিচারক প্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের এজালেস তোলা হয়। এদিন অভিযুক্তদের আইনজীবী মিলন মুখার্জি প্রথম থেকেই সরব ছিলেন প্রাণেশের (প্রশান্তর ছোট ভাই) জামিন নিয়ে। তিনি বলেছেন, কি কারণে প্রাণেশকে বন্দি রাখা হয়েছে। অভিযুক্ত তো ওর দাদা অর্থাৎ প্রশান্ত।
বিচারকের উদ্দেশে মিলন বলেছেন, ইডির পক্ষ থেকে যে মামলা দেওয়া হয়েছে তা অবৈধ অর্থ পাচার। প্রাণেশ তাতে সামিল হয় কি করে? তবে আজ আমি প্রশান্তকে (পিকে) নিয়ে আজ কিছু বলব না। কিন্তু তাদের মায়ের দেখাশুনার জন্যে পিকে ৮০ হাজার রুপি প্রাণেশকে দিত। এতে ভাইয়ের কি দোষ?
ইডির আইনজীবী অরিজিত বলেন, আমার প্রশ্ন, যাদের বাবা-মা বাংলাদেশি। এবং ১৯৭৩ সালে প্রাণেশের জন্ম বাংলাদেশে। সে কি করে ভারতীয় হয়? আমারা তাকে জেরায় জেনেছি, ১৯৮৮ সালে অবৈধ পথে ভারতে এসেছিল। সে ভারতীয় হওয়ার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। এরপরও ২০১৪ সালে বানিয়েছিল, ভারতীয় পাসপোর্ট। প্রশ্ন এখানেই কিভাবে ভারতে এলো? এবং কীভাবে ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল ভারতে থাকলো? যে কারণে আমরা বলছি ওরা সবাই বাংলাদেশি। আর যদি একান্তই ভারতে থাকতে হয় তাহলে ওরা সিএএ করুক। সম্প্রতি ভারত সরকার ওদের জন্য এ নাগরিক সংশোধিত আইন বানিয়েছে। আগে ভারতীয় হোক, এরপর জামিনের আবেদন করুক।
মিলন মুখার্জী বলেন, কেন প্রাণেশ সিএএ করবে? সে তো প্রথম থেকেই ভারতীয়। স্কুল সার্টিফিকেটসহ ভারতীয় হওয়ার যা যা নথি প্রয়োজন, তা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা ভারতীয়। আর একান্তই যদি তাদের বাংলাদেশি প্রমাণ করা হয়, কেন তাহলে ফর্টিন ফরেনার্স অ্যাক্ট দেওয়া হয়নি। আর আমরা তো অন্য কিছু দাবি করিনি। আমরা জামিন চেয়েছি।
অরিজিত চক্রবর্তী বলেছেন, বর্তমান মামলাটা তো অবৈধ অর্থপাচারের। সেখানে ফর্টিন ফরেনার্স অ্যাক্ট বিষয় আসে কি করে?
এরপরই বিচারক উভয় আইজিবিকে বলেন, দুবছর হয়ে গেল, এখনো ট্রায়াল শুরু করতে পারলেন না। মামলা কি করে এগোবে? মিলন মুখার্জির উদ্দেশে বলেন, ওরাতো (ইডি) যে তথ্য দেখাচ্ছে তাতে হালদাররা সবাই বাংলাদেশি। তাহলে কি করে জামিন হবে? সেক্ষেত্রে জামিন হলে এদেশে তো রাখা যাবে না। পাশাপাশি বিচারক ইডির আইনজীবীকে বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখুন তো বাংলাদেশ এদের নিতে আগ্রহী কিনা? অরিজিত বলেন, এখন আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। এরপরই বিচারক পরবর্তী শুনানি দিন, ২২ এপ্রিল বিকেল ৩টায় ধার্য করেছেন।
তাহলে কি বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করা হবে? বাংলানিউজের প্রশ্নে অরিজিৎ বলেছেন, এ মামলায় জামিন হলে একটাই উপায়৷ তা হলো পুশব্যাক। এছাড়া বিকল্প কিছু নেই।
২০২২ সালের ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার বৈদিক ভিলেজ থেকে হালদারদের গ্রেপ্তার করে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এরপর থেকে সেখানেই বন্দি রয়েছেন হালদাররা। তাদের বিরুদ্ধে 'প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-২০০২' অর্থাৎ অবৈধভাবে অর্থপাচার এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে আওতায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। বর্তমানে পিকে হালদার ও ৫ সহযোগীকে রাখা হয়েছে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে এবং নারী সহযোগী আমিনা সুলতানা আছেন কলকাতার আলিপুর সংশোধনাগারে। কিন্তু ইডির পক্ষ থেকে তাদের বাংলাদেশি বললেও ফোরটিন ফরেনার্স অ্যাক্ট দেয়নি।
গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারকে দুই মামলায় ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন এবং পিকে হালদার ছাড়া অন্য ১৩ আসামিকে দুই মামলায় তিন ও চার বছর করে মোট সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার ভারতে বন্দি থাকায় সেই রায় কার্যকর হয়নি। এমনকী সেই রায়ের কপি ভারতের আদালতে এসে পৌঁছায়নি বলে, এর আগে জানিয়েছেন ইডির আইনজীবী অরজিত চক্রবর্তী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৪
ভিএস/জেএইচ