ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

বাংলার মমতা আর দিল্লির রাজনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৪
বাংলার মমতা আর দিল্লির রাজনীতি মমতা বন্দোপাধ্যায়

কলকাতা: ভারতের ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্রচারণা থেকে বলছেন, বাংলায় তিনি একাই লড়ছেন। বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তার কোনো সখ্য নেই।

আর বিজেপি ২০০ আসন পার করবে না।

পাশাপাশি তিনি দাবি করছেন, ইন্ডিয়া জোটই এবার সরকার গঠন করবে। যে জোটের অন্যতম কান্ডারি তিনি নিজেই। বিজেপিবিরোধী এ জোটে মমতার দলের পাশাপাশি রয়েছে আম আদমি পার্টি, সিপিআইএম, কংগ্রেসসহ ২৮ রাজনৈতিক দল।

অথচ বাংলায় বাম কংগ্রেসের সঙ্গে তিনি জোট বজায় রাখলেন না। কিন্তু কেন? এটি বুঝতে হলে পেছনে যেতে হবে। বুঝতে হবে দিল্লির সঙ্গে মমতার অতীত।

১৯৯৮ সাল। ওই বছর জাতীয় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস দল গঠন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার সেই বছর ছিল ভারতের লোকসভা নির্বাচন। সেবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে একক ক্ষমতায় ৪২ আসনের মধ্যে ৭ আসন পায় মমতার নতুন দল তৃণমূল।  

অপরদিকে, দিল্লিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় বিজেপি তখন বিভিন্ন দলের সমর্থন নিয়ে কোনোক্রমে সরকার গঠন করতে চাইছে। সমর্থন দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী হলেন অটল বিহারি বাজপেয়ি।

এরপর ১৯৯৯ সাল। বিজেপির থেকে সমর্থন তুলে নেয় তামিলনাড়ুর জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে। সমর্থন তুলে নিতেই পড়ে যায় বাজপেয়ী সরকার। ফলে ১৯৯৯ সালে আবার লোকসভা নির্বাচন হয়।  

তখনও বিজেপি জোট শরিক (এনডিএ) ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার তৃণমূল কংগ্রেস। সেই জোটের ভোটে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আট আসনে জয় পায় তৃণমূল। বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  

এর আগে বাংলায় বিজেপির সেভাবে পদচারণা হয়নি। মমতার হাত ধরেই বিজেপি জমি পায় বাংলায়। এরপর সব ঠিকঠাকই চলছিল।

২০০১ সাল। তখনও মমতা ভারতের রেলমন্ত্রী। সেই সময় কফিন কেলেঙ্কারি দুর্নীতির সঙ্গে নাম জড়িয়ে যায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজের। কারগিলে ভারত-পাকিস্তানের সামরিক সংঘাতের সময় নিহত ভারতীয় সৈন্যদের জন্য কফিন নির্মাণে চরম আর্থিক তছরুপের অভিযোগ ওঠে জর্জ ফার্নান্দেজের বিরুদ্ধে।  

তখন বিজেপির সঙ্গে থাকলেও সরব হন মমতা। এরপর ভারতজুড়ে যখন উত্তেজনা ছড়ায়, তখন পদত্যাগ করেন জর্জ ফার্নান্দেজ। তারপরও মেনে নেননি মমতা। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিজেপি জোট ছাড়েন মমতা।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হয়। বাংলা যে বরাবরই বিজেপিবিরোধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন তা আঁচ করতে পারেন। এ কারণে তিনি বিজেপি থেকে দূরত্ব তৈরি করে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাংলা দখলে। কিন্তু বাম আমলে সে বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বড় ধাক্কা খান মমতা।

ফলে বিজেপি জোটে (এনডিএ) ফেরা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না মমতার কাছে। ২০০৩ সালে তিনি ফিরতে চাইলেও বিজেপির অন্য শরিক দলের অনেকেরই বিষয়টি পছন্দ হয়নি। তবে শত চাপ থাকার পরও বাজপেয়ি ফেরান মমতাকে। বেশ কিছুদিন মন্ত্রীর পদও ছিল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পরে ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০০৪ সালে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। সেবার বাইরে থেকে বামেরা সমর্থন দিয়ে কংগ্রেসকে সরকার গঠনের সহায়তা দিয়েছিল। তখন ইউপিএ সরকারের বাইরে-ভেতরে কোথাও ছিলেন না মমতা। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইটা চালু রেখেছিলেন তিনি।

এরপর ২০০৯ সাল। লোকসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে। তখন বামেদের পতন হতে চলেছে। সেবার লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ৪২ আসনের মধ্যে ১৯ আসনে জয় পায় তৃণমূল। সেই ১৯ সাংসদ নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার গঠন হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও একবার দায়িত্ব পান কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রণালয়ের। তিনি হলেন রেলমন্ত্রী আর তার দলের ৫ সংসদ সদস্য পেলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর পদ।

এরপর ২০১১ সাল। পশ্চিমবঙ্গে তখন বিধানসভা ভোট। বাংলাজুড়ে সেবার মমতা হাওয়া বইছে। মমতা বুঝতে পেরেছিলেন, এখনও তিনি যদি কংগ্রেসের সঙ্গে থাকেন, তাহলে বাংলায় কংগ্রেসকে আসন ছাড়তে হবে। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি ঘটিয়ে পুরোদমে পশ্চিমবঙ্গে শক্তি বাড়ান মমতা।  

দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাভাবিকভাবেই তাকে ছেড়ে দিতে হয় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর পদ। আর তারপরই কংগ্রেসের সঙ্গে আরও দূরত্ব তৈরি হয় মমতার। ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ইউপিএ সরকারের সঙ্গে পুরোপুরি বিচ্ছেদ ঘটে মমতার।

২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মমতা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন তার কাছে অতি শক্ত। বাংলার ৪২ আসনে জয় পেলেও তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না (যদি ইন্ডিয়া জোট জেতে, তখন বিষয়টি অন্যরকম হবে)। আর বিজেপি যদি ২৫টির বেশি আসনে জয় পেয়ে যায়, তবে তার জন্য শিরে সংক্রান্তি হবে।

এ কারণেই নানা অংকে এবারের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস-বামের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেননি মমতা, এমনটি মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাসহ গোটা ভারতে যদি ঠিকঠাক ইন্ডিয়া জোট দানা বাঁধত, তাহলে অবশ্যই চিন্তায় থাকত মোদির বিজেপি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, ১৬ মে ২০২৪
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।