ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

সন্ত্রাসীদের ঢাকা-কলকাতার মাটি ব্যবহার করতে দেব না: হারুন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
সন্ত্রাসীদের ঢাকা-কলকাতার মাটি ব্যবহার করতে দেব না: হারুন

কলকাতা: সন্ত্রাসীদের ঢাকা ও কলকাতার মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরার আগে এমন বার্তা দেন তিনি।

 

বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ কি অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে- এমন প্রশ্নে হারুন অর রশীদ বলেন, দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মাটি ব্যবহার করতে দেব না। ঢাকা ও কলকাতা এ বিষয়ে তৎপর। আমাদের সিস্টেম আরও উন্নত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে ফোনালাপের মাধ্যমেই ঘটনার সমাধান হয়। ভারত ও বাংলাদেশের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় আছে, তা ক্ষুণ্ন হবে না।  

পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা, কলকাতা পুলিশ ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বেড়েছে। আমি মনে করি, আগামী দিনগুলোতে উত্তরোত্তর এতে উন্নতি আসবে।

ডিএমপির এ অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আমাদের যে পারস্পরিক সম্পর্ক, হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্য তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ থেকে কোনো অপরাধী অপরাধ করে কলকাতাকে স্বর্গীয় স্থান মনে করবে, তা আমরা হতে দেব না। এটি মনে করার প্রশ্নই আসে না। দুই বাংলার সহযোগিতায় এখন থেকে আরও দ্রুত দুষ্কৃতকারীদের ধরতে পারব।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ওয়াটার থিওরি অনুসরণ করেই সফলতা এসেছে। আলোচিত এ তদন্তে ওয়াটার থিওরি-ই আমাদের সফলতা দিয়েছে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশে ধরা পড়া অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদেই ওয়াটার থিওরির প্রসঙ্গ উঠে আসে। এরপর পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডিকে অনুরোধ করে কমোড, সেপটিক ট্যাংক, নিকাশী লাইন পরীক্ষা করানো হয়। এরপরই সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার করা হয় কয়েক কেজি মাংস।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া মাংস এমপি আনারের মনে করা হলেও শতভাগ নিশ্চিত হতে ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি। আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইডিকে চিঠি দিয়ে দেহাংশ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে।

উদ্ধার দেহাংশ এমপি আনারের কি না, তা পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যেই নমুনা পাঠানো হয়েছে সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। এরপর করা হবে ডিএনএ পরীক্ষাও। সেক্ষেত্রে কলকাতায় আসতে পারেন এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন এবং এমপির ভাই।

২৬ মে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল কলকাতায় আসে। পরে হারুন দলের সদস্যরা কলকাতা থেকে যান নিউটাউন থানায়। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) সঙ্গে নিয়ে তারা কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খাল পরিদর্শন করেন। এরপর যথাক্রমে নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেন আবাসন, সিআইডি ভবন, হাতিশাল খালসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করার পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল, সিআইডি প্রধান রাজাশেখরণের সঙ্গে কথাও বলেন।

হারুন অর রশীদ জানান, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে কলকাতা ও বাংলাদেশে দুটি জায়গায় মামলা হয়েছে। সেই কারণেই তদন্ত করতে তারা কলকাতায় এসেছেন। সিআইডির প্রতিনিধিদলও তদন্তের স্বার্থে বাংলাদেশে গিয়েছিল। ইতোমধ্যে মূল ঘাতককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা অনেক কিছুই স্বীকার করেছেন। কীভাবে তারা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন, বাংলাদেশের কোথায় কোথায় তারা বৈঠক করেন, কলকাতায় এসে কোন কোন বাসায় ছিলেন এসব যাচাই-বাছাই করার দরকার ছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পেনাল কোডের ৩৬২, ৩৬৪ ধারা অনুযায়ী, লাশ বা লাশের টুকরো বা অন্য কোন অংশ বিশেষ উদ্ধার না হলে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে একটু সমস্যা হয়। আর সেই কারণে আমরা এসেছি। আমাদের মূল কাজটি ছিল বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালানো। কলকাতায় ধরা পড়া কসাই জিহাদকে নিয়েও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যেই গা ঢাকা দিয়েছেন এই আখতারুজ্জামান শাহীন। সেক্ষেত্রে নেপাল হয়ে দুবাই, তারপরে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে পারেন এ শাহীন। অন্যদিকে আরেক অভিযুক্ত সিয়াম বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছেন। তাদের ফিরে পেতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।

হারুন অর রশীদ বলেন, আমাদের ধারণা, এ হত্যাকাণ্ডের মূল মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যেহেতু ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, যেহেতু তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের আছে, তাই তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনতে ভারত যেন কথা বলে। পাশাপাশি আমরাও বাংলাদেশের পুলিশের আইজির সাথে কথা বলেছি। তাকে ফেরত পেতে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হবে। আবার বাংলাদেশে যে আমেরিকান দূতাবাস আছে, সেখানেও চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি সরাসরি গিয়ে কথা বলে আখতারুজ্জামান শাহীনের বিষয়টি জানানো হবে।

তিনি বলেন, অন্যদিকে কাঠমান্ডুতে সিয়ামের অবস্থানের বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছি। বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আমরা ইতোমধ্যে একটি চিঠি নেপালে পাঠিয়েছি। নেপালের সব সংস্থাকে আমরা জানিয়েছি যে, সিয়াম বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছেন। আমরা মনে করছি খুব শিগগিরই ভালো খবর আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
ভিএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।