কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে মেডিকেল কলেজছাত্রীর নৃশংস হত্যার ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের চিকিৎসকরা। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) এমন ঘোষণা আসতেই ভারতজুড়ে পথে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
এমন পরিস্থিতিতে মৃতের পরিবার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, মেয়েকে হাসপাতালে খুন করা হয়নি। অন্য কোথাও গণধর্ষণের পর হত্যা করে, আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার রুমে ফেলে রেখে গেছে দুষ্কৃতকারীরা। এই নিয়ে সিবিআইকে কয়েকজন সন্দেভাজনের নাম জানিয়েছে পরিবার।
অপরদিকে কলকাতার রাজপথ ছিল শনিবারও (১৭ আগস্ট) ছিল উত্তাল। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে এ দিন সকাল থেকে রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল ৬টা পর্যন্ত অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন চিকিৎসকরা। এই ২৪ ঘণ্টা দেশের চিকিৎসকরা শুধু প্রয়োজনীয় পরিষেবা ছাড়া আর কোনো সেবা দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে না হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের। হাসপাতালগুলোর শুধু জরুরি বিভাগ খোলা রয়েছে। বসছেন না কোনো আউটডোরের চিকিৎসক।
এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের দাবি দ্রুত বিচার চাই। না হলে পরিস্থিতি অন্যদিকে ঘুরে যেতে পারে। আমরা জানি রোগীদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু নাগরিকের নিরাপত্তা কোথায়? আর কতদিন আমরা এসব সহ্য করব? এখনও ভারতে গণধর্ষণের সঠিক আইন নেই। ধর্ষকারী অপরাধ করে ঘুরে বেড়ায় আর ধর্ষিতাকে আদালতে প্রমাণ দিতে হয়। এই আন্দোলন না চললে আইনেরও পরিবর্তন হবে না। আমরা চাই দ্রুত বিচার। তবেই আইনের পরিবর্তন হবে।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশেও ‘রাত দখলের’ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। উত্তরে কলকাতার এম আর বাঙুর হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক সোমা দাস বলেছেন, আমরা সবটাই দেখেছি। বহু রোগী বাংলাদেশ থেকে আসে। তাই বাংলাদেশকে আমরা আলাদাভাবে দেখি না। সেখানেও অনেকে নিহত হয়েছেন। সেসব ঘটনা আমরাও দেখেছি। তখন আমাদেরও বুক কেঁপে উঠেছিল। আমরা তাদের আলাদাভাবে দেখি না।
অপরদিকে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই চালাচ্ছে জোর তল্লাশি। নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সদ্য সাবেক হওয়া অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। কেন অধ্যক্ষ নিহতের পরিবারের কাছে মৃত্যুর ঘটনাকে প্রথমে আত্মহত্যা বলেছিলেন, হাসাপাতালে পরিবার আসার পরও কেন সাড়ে তিন ঘণ্টা মৃতদেহ দেখতে দেওয় হয়নি, চলছে এমন নানান জেরা।
এমন পরিস্থিতিতে নিহত মেডিকেল কলেজছাত্রীর বাবা শনিবার বলেছেন, সেমিনার রুমে হত্যা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। হতে পারে অনত্র হত্যা করা হয়েছে। তথ্য প্রমাণ লোপাটের জন্যই এটা হয়ে থাকতে পারে। এই ঘটনার পেছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়িত বলে অভিযোগ করেন তিনি। কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সন্দেহ প্রকাশ করে একটি নামের তালিকা সিবিআই-এর হাতে তুলে দিয়েছেন নিহত শিক্ষার্থীর বাবা। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে কোনো প্রভাবশালীর সন্তান থাকতে পারেন।
একাধিক সন্দেহ তৈরি হয়েছে তদন্তকারীদের। হাসপাতালে কি জাল ওষুধ ঢুকছিল? এবং দিনের পর দিন নির্দ্বিধায় তাই ব্যবহার হচ্ছিল? তাই কি জেনে ফেলেছিলেন ওই ছাত্রী? অথবা মেডিকেল কালোবাজারি ধরে ফেলেছিলেন তিনি? মেডিকেল বর্জ্য থেকেই রাসায়নিক আলাদা করে মাদক কারবার চক্রের বিষয় জেনে ফেলেছিলেন ওই শিক্ষার্থী? নাকি হাসপাতালের হোস্টেল, ক্লাসরুমে যৌনচক্রের প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি? ঠিক কোনটা কাল হল আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত এই ছাত্রীর, এসব প্রশ্ন এখন তুলছেন ওই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্তদের অনেকেই।
এরইমধ্যে ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে ‘রাত দখল’ কর্মসূচির মতো ‘অধিকার দখল’ এর লড়াইয়ের দাবিতে পথে নেমেছিল নাগরিক সমাজ। কলেজ স্কয়ার থেকে মিছিল যাওয়ার কথা থাকলেও পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। বিশাল ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখা হয় তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ