ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

বাংলাদেশি না থাকায় কলকাতার মারক্যুইস স্ট্রিটে বন্ধ হচ্ছে দোকানপাট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
বাংলাদেশি না থাকায় কলকাতার মারক্যুইস স্ট্রিটে বন্ধ হচ্ছে দোকানপাট

কলকাতা: বাংলাদেশি না থাকায় কলকাতার মারক্যুইস স্ট্রিটের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। গত সাতদিনে সে অঞ্চলের চারটি দোকান বন্ধ হয়েছে।

এর মধ্যে দুটি মানি এক্সচেঞ্জ, একটি ট্রাভেল ব্যবসা ও একটি পোশাকের দোকান।

স্থানীয়দের তথ্য মতে, সে অঞ্চলের একটি ৮০-১০০ স্কোয়ার ফিটের জায়গার মাসিক ভাড়া এক-দেড় লাখ রুপি। আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশি না আসায় এখন সেই ভাড়ার টাকা তোলাই দায় হয়েছে উঠেছে। যে কারণে পরপর চারটি দোকান বন্ধ হয়েছে মারক্যুইস স্ট্রিটে। এরকম চলতে থাকলে আগামী দিনে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তাই নিয়ে চিন্তিত ‘মারক্যুইস স্ট্রিট - ফ্রিস্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র সদস্যরা। মূলত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধার জন্য এই সংগঠনটি বানিয়েছিল সে অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিমত, করোনা পরবর্তীতে যখন বেচাকেনার পসরা কলকাতায় জমে ওঠেনি তখনো এতটা বাজে অবস্থা ছিল না। কিন্তু ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

মূলত, নভেম্বরের এই সময়টায় বাঙালিদের ভিড়ে গম গম করে মারক্যুইস স্ট্রিট এবং নিউমার্কেট অঞ্চল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশিরা ভারতের ভিসা না পাওয়ায় পরিস্থিতি পুরো পাল্টে গেছে। সে অঞ্চল দেখলে মনে হবে, যেন এখনও করোনা মহামারি চলছে।

ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য এবং এমআরএল্ড হোটেলের মালিক মনোতোষ সরকার বলেছেন, মারক্যুইস স্ট্রিট অঞ্চল মূলত টুরিস্ট স্পট। এখানে দেশ-বিদেশের টুরিস্টরা ওঠেন। যার সিংহভাগ পর্যটক বাংলাদেশি। কিন্তু ভিসা বন্ধ হওয়া গত আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশিরা ভারতে আসতে পারছেন না। যে কারণে সবচেয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ভেবেছিলাম, বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতির জন্য হয়তো আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কিছুটা যাত্রী যাতায়াত কম থাকবে। কিন্তু এখন তো নভেম্বরের মাঝামাঝি হয়ে গেল, তারা ভিসা না পাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছি আমরা। ফলে চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।

শুধু মারক্যুইস স্ট্রিট অঞ্চলেই ছোট-বড় মিলিয়ে আছে ১৩০টি হোটেল। প্রতিটি হোটেলেই বর্তমানে তিন থেকে চারজন করে বাংলাদেশি অতিথি রয়েছেন। সেদিক দিয়ে দেখলে আমাদের অবস্থা ধীরে ধীরে কিন্তু খুব বাজে পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। আগস্ট মাসের আগেও এ অঞ্চলে ৭০-৮০ শতাংশ বাংলাদেশি আসা-যাওয়া করতেন। তা একেবারে নেমে এসেছে পাঁচ শতাংশে। অর্থাৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা ঝুঁকির মধ্যেই পড়ব। তবে আমরা আশাবাদী। আমাদের তথ্য মতে, এ পরিস্থিতি আর খুব বেশিদিন থাকবে না। তার ওপর সামনেই বড়দিন, আর নতুন বছর আসছে। শীত মৌসুমে বিদেশি পর্যটক বাড়বে।

শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার নিত্যগোপাল বলেন, হোটেল তো তাও কিছুটা স্বাভাবিক আছে। বড়দিনে অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ যাত্রী পরিবহন বাসগুলো একেবারে শুয়ে পড়েছে।

বুধবারের (১৩ নভেম্বর) তথ্য মতে, শ্যামলী এনআর পরিবহনের দুটি বাস মারক্যুইস স্ট্রিট থেকে পেট্রাপোল গিয়েছে। প্রথমটি ভোর সাড়ে ৫টা এবং দ্বিতীয়টি বেলা ১১টা ২০ মিনিটে। ২৭ আসনের বাস দুটিতে ভোরেরটা একেবারে খালি গিয়েছে। বেলা ১১টার বাসে বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন মাত্র তিনজন।

নিত্যগোপালের মতে, জানি না এইভাবে বাস মালিক কতদিন যাত্রী পরিসেবা দিতে পারবে। শুধু আমাদের ব্যবসা নয়, এ অঞ্চলের হোটেল দোকান সবাই বাংলাদেশিদের অভাব বোধ করছে।

অপরদিকে শ্যামলী সৌহার্দ্য পরিবহনের ম্যানেজার অসীম ঘোষ বলেন, বুধবার কলকাতা থেকে দুটো গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে গেছে। একটি ভোর সাড়ে পাঁচটায়। অপরটি সকাল সাতটা। ৪৫ আসনের এই দুই বাস; সাড়ে পাঁচটার বাসে যাত্রী ছিল ১৯ জন, পরেরটায় ১৬ জন বাংলাদেশি যাত্রী ঢাকায় গেছেন।

বাংলাদেশিদের প্রভাব হসপিটাল ব্যবসাতেও পড়েছে। মারক্যুইস স্ট্রিট অঞ্চলে আরএন টেগোর হাসপাতালে আউটলেটের দায়িত্বরত জাফর বলেছেন, আগস্ট মাস থেকেই আস্তে আস্তে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। এখন প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ জন বাঙালি বাংলাদেশ থেকে ইনকয়ারি করছে। তারা বলছেন, আমরা চিকিৎসার জন্য আসতে চাইছি। কিন্তু ভিসা পাচ্ছি না। কোনোভাবে মেডিকেল ভিসা এরেঞ্জ করে দেওয়া যায় নাকি। শুনতে খারাপ লাগলেও আমাদের হাতে তো কিছুই নেই।

জাফরের তথ্য মতে, মাত্র ২০ শতাংশ বাংলাদেশি পেশেন্ট কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং যারা শহরে অবস্থান করছেন তাদের সবারই পুরনো ভিসা। তার তথ্য মতে, কলকাতা চিকিৎসা পরিষেবার বা হাসপাতালগুলো এতে খুব একটা সমস্যায় পড়বে না। কিন্তু সেসব বাংলাদেশিদের জন্য খারাপ লাগছে। যাদের এই সময়র রুটিন চেকআপ ছিল। তারা ভিসার জন্য আসতে পারছে না।

পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ঠিক করোনার পরবর্তীতে সে অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছিল ভিসা খুলে দেওয়ার জন্যে। এবার কোনো চিঠি আদান-প্রদান হয়েছে কি না? এমন প্রশ্নে ব্যবসায়ীদের সংগঠন জানিয়েছে, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের মতি-গতি স্পষ্ট বুঝতে পারছে। তাই তারা এখনও ভারত সরকারকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়নি। তাদের তথ্য মতে, বাংলাদেশে যতদিন স্থায়ী সরকার না আসবে, অর্থাৎ ভোট না হবে ততদিন এরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আবার অনেকেই বলছেন, তাদের কাছে নাকি তথ্য আছে যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারই নাকি ভারতকে ভিসা ব্যবস্থা শ্লথ করতে বলেছে। কারণ অনেকেই নাকি ভিসা নিয়ে দেশ ছাড়ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা ধরে নিচ্ছে, আগামী বছরের মে-জুন মাসে হতে পারে বাংলাদেশে ভোট। তারপরই পরিস্থিতির বদল আসতে পারে। কিন্তু এই সময়কালে তারা কোন পন্থায় চলবে তা নিয়েই চলছে নানা পরিকল্পনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
ভিএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।