কলকাতা: কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসক ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন এক মাসে পা দিলো। গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছিল।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) তা এক মাস পূর্ণ হল। গত এক মাসের ধারাবাহিকতায় রোববার ফের রাত দখল কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাংলার নারীরা। সোমবার(৯ সেপ্টম্বর) এই মামলার তৃতীয় শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ঠিক তার আগের রাত জাগতে চলেছে বাংলাসহ গোটা ভারত। আর এমন অবস্থায় মমতার সরকারকে প্রতিবাদ জানিয়ে, রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জহর সরকার।
তিন বছর আগে রাজ্যসভার সংসদ সদস্য হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো সেই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের সংসদ নির্বাচিত করে আমাকে প্রভূত সম্মানিত করেছেন। তবে আমি অনেক চিন্তা করে দেখেছি সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করব। বিশ্বাস করুন এই মুহূর্তে রাজ্যের সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ও রাগের বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখছি, এর মূল কারণ কতিপয় পছন্দের আমলা, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পেশি শক্তির আস্ফালন। সরকারের কোন বক্তব্যকে মানুষ বিশ্বাস করছে না।
রাজ্যসভার সংসদ সদস্য জহরের মত শাসক দলের আরো এক সংসদ ক্ষোভে ফুঁসছেন। তিনি তৃণমূলের টিকিটে মানুষের ভোটে নির্বাচিত সুখেন্দু শেখর রায়। তিনিও সুর চড়িয়েছেন, শাসক দল এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এর ভূমিকা নিয়েও। তারপরই সম্প্রতি তাকে তৃণমূলের মুখপাত্র থেকে বহিষ্কার করেছে দল। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে। হত্যার প্রতিবাদে তিনিও জহরের মতো ত্যাগ করতে পারেন।
অপরদিকে, গত ১৪ আগস্ট এর মত আরো একবার রাত দখল কর্মসূচি নিতে চলেছে বাংলার নারীরা। ১৪ আগস্ট নারীদের সাঙ্গে পা মিলিয়েছিল পুরুষরা। সে সময় সামাজিক মাধ্যমে রাত দখলের ডাক দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী রিমঝিম সিংহ। তার ডাকে শুধু বাংলার রাজপথে সামিল হয়েছিল ৩৫ লাখ মানুষ। পা মিলিয়ে ছিল, মুম্বাই ব্যাঙ্গালোরসহ ভারতের মেগা সিটিগুলো। রিমঝিম কোনো তারকা নয় বা কোনো রাজনীতির সাঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। একডাক যে গোটা ভারত নড়ে উঠবে তা তিনিও বোঝেননি।
সেই রিমঝিমরা আবার পথে নামছে। এই কর্মসূচি নিয়ে নারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বর, শীর্ষ আদালতে মামলার শুনানি রয়েছে। শাসকের ঘুম ভাঙাতেই হবে। তাই সকলে মিলে রাত জাগবে। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘শাসকের ঘুম ভাঙাতে নতুন গানের ভোর’। রিমঝিমের কথায়, বামেদের ৩৪ বছরের শাসন দেখেছি, তৃণমূলের শাসন সকলে দেখছে। আর বিজেপি শাসিত রাজ্যে কি হচ্ছে তা সকলেই দেখছে। ফলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এদের আর চাইছে না।
নারকীয় হত্যার এক মাস হতে চললেও এখনো এ নিয়ে মুখ খোলেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা -সিবিআই। ৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয় শুনানি ছিল। কোনো এক অদৃশ্য কারণে তা সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করা হয়েছে। পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে অনেকেই মোদি মমতার আঁতাত দেখছে।
যদিও আবার অনেকে মনে করছেন, ভারতে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। দেশটির তদন্তকারী সংস্থা তাদের কর্ম পদ্ধতিতে অনেকক্ষেত্রে দেশবাসীকে অবাক করেছে। সম্প্রতি পৃথক দুই দুর্নীতির ঘটনায় দিল্লি এবং ঝাড়খণ্ডের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীদের জেরা করেছিল তদন্তকারী সংস্থাগুলো। তারপর পৃথক দুই রাতে গ্রেপ্তার হন দুই মুখ্যমন্ত্রী। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন - এ দুজনকে বহুদিন তিহার জেলের হাওয়া খেতে হয়েছিল। যদিও বর্তমানে মামলা চললেও আদালতের নির্দেশে জামিন পান দুই মুখ্যমন্ত্রী।
এরকম ঘটনা বাংলায় যে ঘটবে কিনা এখনই বলা সম্ভব নয়। সম্ভবত কিছুটা যেন চিন্তিত মমতার প্রশাসন। এ জন্য বর্তমানে সরকারি প্রকল্পের অর্থ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন। বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তিতে, তারা জানাচ্ছে, কয়েকটি প্রকল্পের অর্থ তারা সাময়িক কারনে বন্ধ রাখছে। কিন্তু কেন তা স্পষ্ট করেনি। তারই মধ্যে সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে মমতার পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
বিজেপি যেমন মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছে। তেমন বাম এবং কংগ্রেস চাইছে পুলিশ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ। মূলত রাজ্যের এই মন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কেউ-ই সরকারের পতন চাইছে না। তাদের দাবি, আগামী ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। ফলে আগামী দেড়বছর সরকারের পতন নয়। শুধু মমতা পদত্যাগ। নেত্রীর বদলে শাসক দল তৃণমূল, অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। আর এই দাবিতে যেন নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখছে মমতার ভাতিজা অভিষেকপন্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভিএস/এমএম