ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

লাইভ করতে বাধা, এবারও হলো না মমতার সঙ্গে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের বৈঠক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪
লাইভ করতে বাধা,  এবারও হলো না মমতার সঙ্গে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের বৈঠক

কলকাতা: আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক এবং মমতার প্রশাসনের মধ্যে চলছে স্নায়ুর লড়াই। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে তাদের দাবি আদায় করতে পারলে, তা হবে অধিকার আদায়ের লড়াই।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সেই দাবি মেনে নেওয়া নিতান্তই কঠিন। কিন্তু চলমান আন্দোলনের ক্ষোভ প্রশমিত করতে হলে মমতা দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আর তা মেনে নিলে শিক্ষানবিশ এবং বঙ্গবাসীর কাছে হবে বড় সাফল্য। ফলে প্রশাসন এবং শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের এই লড়াই এখন স্নায়ুর লড়াইতে পরিণত হয়েছে।  

দীর্ঘ ৩৬ দিনের আন্দোলন শনিবার(১৪ সেপ্টেম্বর) যে পর্যায়ে পৌঁছালো, তা জানান দিচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা গল্প। যেখানে এক শিশুর প্রশ্ন গোয়েন্দা ফেলুকে, তোমার হাতে অস্ত্র নেই, তাহলে তুমি কিভাবে রহস্য উন্মোচন করবে। ফেলুদা নিজের মাথার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, অস্ত্র আছে, দেখা যায় না, এর নাম মগজাস্ত্র। সেই মগজাস্ত্রের কাছে বারবার যেন হোঁচট খাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও আবেগ, কখনও শক্ত হয়ে ঠিক সুবিধা করতে পারছে না।

এর আগে শনিবার দুপুরে, আন্দোলন স্থানে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের আন্দোলনকে আলটিমেটাম দিয়ে এসেছিলেন। এক প্রকার হুঙ্কারের সুরে তিনি বলেছিলেন, এটাই আমার শেষ চেষ্টা। এরপর আমি আর আসব না।  

৩৬ দিন ধরে আন্দোলনে রয়েছে ২৬টি মেডিকেল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা। গত ৯৬ ঘণ্টা ধরে তারা দিনরাত অবস্থান করছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে। সেই অবস্থানে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আচমকা পৌঁছে যান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আসিনি, আপনাদের দিদি হিসেবে এসেছি। ১৭ তারিখ (সেপ্টম্বর) সুপ্রিম কোর্টে শুনানি আছে, আমি চাই না আপনাদের ক্ষতি হোক। কাজে ফিরুন, আপনারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। এটাই আমার শেষ চেষ্টা, ভরসা করলে বিচার পাবেন।  

তিনি আরও বলেন,আপনারা ঝড়জল মাথায় নিয়ে পথে বসে আছেন। আমিও রাতে ঘুমোতে পারছি না। আমারও কষ্ট হচ্ছে। আমি আপনাদের কাছে বলতে এসেছি অনেক কষ্ট করেছেন, আর কষ্ট না করে আপনারা কাজে ফিরে যান। আমি আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আপনাদের ডিমান্ডগুলো আমি সহানুভূতির সঙ্গে দেখব। কারণ আমি একা সরকার চালাই না, আমি সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। আপনাদের ডিমান্ডগুলো আমি ভাববো, চিন্তা করব। যদি কেউ দোষী হয় তিনি নিশ্চয়ই শাস্তি পাবেন। আমি চাই সিবিআই তিন মাসের মধ্যে বিচার শেষ করে অপরাধীদের ফাঁসি দিক। আপনাদের জন্য এটাই আমার শেষ চেষ্টা।  

মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো বলেছেন, তাদের আন্দোলনে যে স্পিরিটে চলছিল, সেই ভাবেই চলবে। তবে তারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের ৫ দফা দাবি নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে মেইল করে জানান তারা বৈঠকে বসতে রাজি আছে। সেই মোতাবেক, মুখ্যমন্ত্রীর তরফে মেইল আসে বৈঠক হবে কালীঘাটের বাসভবনে। সন্ধ্য ৭টা দিকে পৌঁছে যান চিকিৎসকরা।  

কিন্তু বৈঠকে এবারও বাধা হয়ে দাঁড়াল সরাসরি সম্প্রচারণ। ছাত্ররা দাবি তোলে বৈঠকে সরাসরি(লইভ) সম্প্রচার নিয়ে। কিন্তু পুলিশের তরফ থেকে বলা, হয় যেহেতু এটা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন তাই নিরাপত্তার কারণে তা করা যাবে না। শিক্ষার্থীরা জানান, লাইভ না করতে দিলেও ভিডিও করতে দিতে হবে। তাতেও পুলিশ বাধা দেয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে জানায়, আপনারা তো ভিডিও করছেন, বৈঠক শেষে একটা কপি আমাদের দিতে হবে। তাতেও পুলিশ আপত্তি জানায়। এই করতেই প্রায় দুঘণ্টা চলে যায়। ভিতরে তখন মমতা, বাইরে বৃষ্টিস্নাত জুনিয়র চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাদের বিশ্বাস নেই, তা নয়। লাইভ বা ভিডিওগ্রাফি করার কারণ স্বাস্থ্য ভবনের সামনে যে শতশত  আন্দোলনরত চিকিৎসক এবং বঙ্গবাসী যারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে; তাদের সামনে স্বচ্ছতা রাখা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাহিরে বের হয়ে আসেন মমতা। তিনি হাত জোর করে বলেন, আমি অনুরোধ করছি তোমরা ভেতরে আসো। বাইরে দাড়িয়ে ভিজ না। বৈঠক না করো। কিন্তু একাপ চা খেয়ে যাও। ভেজা জামাকাপড় চেঞ্জ করে নাও। দুঘণ্টা আমিও অপেক্ষা করছি। অপর পক্ষ জানায়, না ম্যডাম আমরা ঠিক আছি।  

মমতা জানান, তোমাদের ভিডিও করার কি দরকার। আমরা করছি। আদালতের অনুমতি নিয়ে আমি তোমাদের পরে দিয়ে দেব। ছাত্ররাও বলেন, আমরাও এই ভিডিও কোথাও ব্যবহার করব না। মমতার অনুরোধ, তোমাদের মিনিটস(লিখিত নথি) করে দেব। তাতে সই করবে দুপক্ষ। কিন্তু তাতেও মানেনি চিকিৎসকরা। মমতার দাবি আমি আন্দোলন করা লোক। আমাকে আন্দোলন শিখিও না। ছাত্রদের দাবি, আমরাও আন্দোলন করছি। ফলে পরতে পরতে উত্তেজনা এবং নানা পন্থায় স্নায়ুর লড়াই চলার পর শনিবারও বাতিল হয়ে যায় শিক্ষানবিশ এবং মমতার বৈঠক।  

উল্লেখ্য, যে পাঁচ দফা দাবির কথা তারা তুলেছেন, সেগুলি হল - প্রথমত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। দ্বিতীয়ত, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার। তৃতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। চতুর্থত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। পঞ্চমত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা।

গত বৃহস্পতিবার(১২ সেপ্টম্বর) এই দাবি নিয়েই প্রশাসনিক ভবন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন বৈঠকের সরাসরি (লাইভ) সম্প্রচার করতে দেননি মমতা। তাই তারা বৈঠক করেনি। চিকিৎসকদের দাবি, বদ্ধ ঘরে কি হচ্ছে তা দেশবাসীর জানা উচিত। কারণ এই আন্দোলনে তারাও পরোক্ষভাবে সমিল রয়েছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪,২০২৪
ভিএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।