ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

আরজি কর কাণ্ডে সিবিআইয়ের দেয়া তথ্যকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলল ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪
আরজি কর কাণ্ডে সিবিআইয়ের দেয়া তথ্যকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলল ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট

কলকাতা: আরজি কর হাসাপাতালের শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যা মামলার চতুর্থ শুনানি ছিল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে।

মঙ্গলবার(১৭ সেপ্টেম্বর) মামিলাটি ওঠে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র এজলাসে।

সেখানে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তদন্তের কলকাতা পুলিশের একাধিক ত্রুটি তুলে ধরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, সিবিআই। যা শুনে অবাক হতে হল বিচারপরিত এজলাসে।
 
ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম একটি মামলায় নির্যাতিতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে দুশোর বেশি আইনজীবী। অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়ে প্রথম শুনানিতে ২৪ জন আইনজীবী থাকলেও এখন রাজ্যের আইনজীবীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। রাজ্যের প্রধান আইনজীবী হিসেবে মামলাটি লড়ছেন, কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল।

নির্যাতিতার পক্ষের আইনজীবী ফিরোজ ইদুলজি বলেন, ঘটনার পর দুটি সিজার লিস্ট থাকার কথা ছিল। কিন্তু, তা পাইনি। এছড়া বারবার প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, ময়নাতদন্তের সময়ে মৃতার জিন্সের প্যান্ট ও অন্তর্বাস নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কি? আমরা জানি, তা নিয়ে যাওয়া হয়নি। কারণ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়ার পরও মৃতার জিন্স এবং অন্তর্বাস অপরাধস্থলেই পড়ে ছিল। সেই প্রমান আমাদের কাছে আছে। এত তাড়াহুড়ো কেন ছিল?
 
আইনজীবী ফিরোজ ইদুলজি আরও বলেন, যে সব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল তা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ফরেনসিক তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার দিন, শুক্রবার( ৯ আগস্ট) নমুনা সংগ্রহের পর শনিবার ও রোববার ফরেনসিক ল্যাব বন্ধ থাকে। তাহলে কি ঠিকমতো ফরেনসিক তদন্ত হল? দুদিনে অনেক তথ্য নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

প্রধান বিচারতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, সিবিআই স্ট্যাটাস রিপোর্টে যা জানিয়েছে তা ভয়ঙ্কর। খুবই উদ্বেগজনক। আপনি যে ব্যাপারে উদ্বেগ জানাচ্ছেন, তা সিবিআইও আমাদের জানিয়েছে। আমরাও উদ্বিগ্ন। আমাদের কাছে সিবিআই দ্বিতীয় স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা করেছে। আমরা স্ট্যাটাস রিপোর্ট পড়ে দেখেছি। সিবিআই তদন্ত নিয়ে ঘুমিয়ে নেই। তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে বা সময় বেঁধে তদন্ত শেষ করতে বললে প্রকৃত উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না। সুতরাং সিবিআইকেও তদন্তের জন্য সময় দিতে হবে।

জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ বলেছেন, ঘটনাস্থলে যারা সেদিন ছিলেন, তাদের নাম সিবিআইকে জমা দেওয়া হয়েছে। যাদের সেখানে থাকার দরকার ছিল না, তারাও ছিলেন। এখনই এটা প্রকাশ্যে আনতে চাই না। তাতে অনেক প্রভাবশালী বিপদে পড়বে। তদন্তের সহযোগিতার জন্য এই নামগুলো সিবিআইকে দেওয়ার অনুমতি দিন।

ভারতের চিকিৎসকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গলের’ আইনজীবী করুণা নন্দী সুপ্রিম কোর্টে বলেছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে বলে বলা হয়েছে। এটা ঠিক নয়। তাদের হয়ে সিনিয়র ডাক্তারেরা ওভারটাইম কাজ করছেন। আর গত শুনানিতে রাজ্য সরকার বলেছেন, জুনিয়রদের কর্মবিরতির কারণে ২৩ জন রোগী রাজ্যে মারা গিয়েছে। এটি একটি অসত্য তথ্য। কারণ এটি সরকারি তথ্য নয়। সরকার যে তথ্য সামনে এনেছে তা সংবাদ মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা। এবিষয়ে তাদের তথ্য সামনে আনেনি কেন? তার উপর কিভাবে জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে ফিরবেন, যেখানে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টা নিয়ে সরকার এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি আরও বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিয়ে রাজ্য সরকার যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তা একবারে অনুচিত।  

রাজ্য সরকারের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, রাজ্যকে ওই বিজ্ঞপ্তি ঠিক করতে হবে। আপনাদের দায়িত্ব নিরাপত্তা দেওয়া, আপনারা বলতে পারেন না, নারীরা রাতে কাজ করতে পারবেন না। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বিমানচালক, সেনাবাহিতেও নারীরা রাতে কাজ করছেন। তাহেলে রাজ্যের ক্ষেত্রে এই বিজ্ঞপ্তি কেন? প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডের আবহে ১৯ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, রাজ্য সরকার বিল পাস করছে যে, ১২ ঘণ্টার বেশি এ রাজ্যের নারীরা কাজ করতে পারবে না। এমনকী তাদের ক্ষেত্রে রাতের ডিউটি বন্ধ করা হবে।

সব কিছু শুনে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সিবিআই ঠিক পথে এগোচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের সময় দেওয়া উচিত। আমরা যেসব প্রশ্ন আজ তুলব ভেবেছিলাম। সিবিআই দেখছি সেই পথেই এগোচ্ছে। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, নির্যাতিতার পরিবার যে সব বিষয়ে তুলেছেন, সিবিআইয়ের সেগুলো খতিয়ে দেখা উচিত। এছাড়া নির্যাতিতার নাম এবং ছবি ওয়েবসাইট এবং উইকিপিডায়া থেকে মুছে (রিমুভ) ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভিএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।