কলকাতা: কলকাতার রাজপথে ধরে এঁকেবেঁকে ছড়িয়ে আছে বিশাল ট্রাম লাইন। রোদের আলোয় সেই লাইন আরও রূপালি হয়ে ওঠে।
কলকাতায় এসেছে কিন্তু, ট্রামের এ দৃশ্য দেখেনি এমন ভারতীয় নেই বললেই চলে। আবার শখের বসে বহু বাংলাদেশি নস্টালজ্যিক হতে চড়েছেন কলকাতার ট্রাম। গোটা ভারতে একমাত্র কলকাতার রাজপথে দেখা মেলে ট্রামের। কিন্তু, সেই ট্রাম এবার শহরবাসীর থেকে বিদায় নিতে চলেছে। এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ঐতিহ্যবাহী ট্রামের চলাচলে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার। আর সেই ব্যর্থতা স্বয়ং স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী।
পাশাপাশি পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তীর অভিমত, যানজট মুক্ত শহরকে গুরুত্ব দিতেই এই সিদ্ধান্ত। তিনি বলেছেন, আজকের অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে কলকাতায় ট্রাম চালানো সম্ভব নয়। দিন যত এগোচ্ছে তত নিত্যনতুন যানবাহন আসছে। জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে কলকাতার সড়কে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু, সড়ক চওড়া হয়নি। এই অবস্থায় সড়কের মাঝখান দিয়ে ট্রাম চলাচলআজকের দিনে আর সম্ভব নয়।
মন্ত্রী বলেছেন, ট্রামের প্রতি আবেগ আমারও আছে। কিন্তু কলকাতা পুলিশ যানজট মুক্ত শহর গড়ে তুলতে চাইছে। তাই এ বিষয়ে আপস করা সরকারের সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে হেরিটেজ হিসেবে একটি ট্রাম থাকবে। এসপ্ল্যানেড থেকে ময়দান পর্যন্ত একটি মাত্র ট্রাম চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বলতে পারেন, শহরের স্মৃতি হিসেবে নির্দিষ্ট পথ দিয়ে চলাচল করবে একটি মাত্র ট্রাম। ওই ট্রামেই চড়তে পারবেন আগ্রহীরা।
পরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, শহরের বুক থেকে আর কিছুদিনের মধ্যে উপড়ে ফেলা হবে ট্রাম লাইনগুলো। রাজ্য সরকারের তথ্য মতে ২০২৭ সালের পর উঠে যাবে সমস্ত হলুদ ট্যাক্সি, হাতে টানা রিকশা তাও বিলুপ্তির পথে। শহরে যেকজন বৃদ্ধ রিকশা চালক আছেন তাদের দম ফুরোলেই সেই রিকশার বিলুপ্তি ঘটবে। সেই লাইনের সারিতে এসে দাঁড়াল কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রাম।
১৮০০ শতকের শেষের কলকাতার বুকে শুরু হয়েছিল ট্রামের পথ চলা। কলকাতার পাশাপাশি ভারতের আরো ১৫টি শহরে যাত্রা শুরু করেছিল ট্রাম। তবে কালের নিয়মে গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল ট্রাম। কলকাতা ছাড়া বাকি সব শহরে অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যায়। এবার কলকাতায়, অর্থাৎ ১৫০ বছর ধরে কলকাতা শহরে যে ট্রাম চলাচল ছিল। তা চিরতরে বিদায় নিতে চলেছে। ট্রাম পরিষেবা তুলে দিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভিএস/এমএম