ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

নিজ রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি-নেপালকে দায়ী করলেন মমতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪
নিজ রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি-নেপালকে দায়ী করলেন মমতা

কলকাতা: সম্প্রতি রাজ্যের দক্ষিণের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)- এর ছাড়া পানিতে রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর এবার উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বন্যার পিছনে নেপালের কৌশী নদীর পানিকে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী।

এখনও ভাসছে দক্ষিণের জেলাগুলো, তারই মধ্যে উত্তরেও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পূজার মুখে বানভাসি মানুষ দেখে উদ্বিগ্ন মমতা।

ডিভিসি হল দামোদর নদে নির্মিত দুর্গাাপুর ব্যারেজের পরিচালনা কর্তৃপক্ষ।  

রোববার(২৯ সেপ্টেম্বর) দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় একটি প্রশাসনিক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, গোটা পশ্চিমবঙ্গ আজ বন্যায় বিপর্যস্ত। আগে ডিভিসি'র ছাড়া পানিতে দক্ষিণবঙ্গ ডুবেছে। সরকারকে না জানিয়েই ৫ লাখ কিউসেকের বেশি পানি ছাড়ার কারণে বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, ঝাড়গ্রামের আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আর এখন নেপালের কৌশী নদী থেকে ৬ লাখ কিউসেক পানি ছাড়ার কারণে গোটা উত্তরবঙ্গ প্লাবিত।

এর পাশাপাশি গঙ্গা নদী চুক্তির পর গত বিশ বছর ধরে ফারাক্কাতেও কোন ড্রেজিং হয় না বলেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি ফারাক্কায় ড্রেজিং হতো বা পলি সরানোর কাজ হতো, তবে ফারাক্কায় আরো ৪ লাখ কিউসেক পানি ধারণের ক্ষমতা থাকতো। সেক্ষেত্রে সাধারণের এই কষ্ট ভোগ করতে হত না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বাংলা সবসময় বঞ্চিত।

মোদি সরকারের উদ্দেশ্য বলেছেন,  নির্বাচনের সময় প্রত্যেকে আসে, বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয়, আর নির্বাচন মিটে গেলেই তাদের আর দেখা যায় না। যদিও রাজ্য সরকারের তরফে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান মমতা।

এদিন বিকালে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। দমদম বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েও ফের এই অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তখনও তিনি বলেছেন, দক্ষিণবঙ্গ যেমন ভাবে ডিভিসির পানিতে ভেসেছে, তেমনি উত্তরবঙ্গে নেপাল কোশী নদীর পানি ছেড়ে দিয়েছে। ওই পানিটা বিহার রাজ্য হয়ে বাংলায় ঢুকছে। ফলে একদিকে ভুটানের সংকোশ নদীর পানিতে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি জেলার বিপর্যস্ত, আবার কোশী নদীর পানিতে মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে ওই সমস্ত এলাকার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের নিশানা করে মমতা এও বলেন যে, গত ২০ বছর ধরে ফারাক্কায় কোনো ড্রেজিং হয় না। এর দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। আগে ওরা ১২০ কিলোমিটারযদিও রাজ্য সরকারের তরফে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান মমতা। দেখভাল করতো, এখন সেখানে মাত্র বিশ কিলোমিটার দেখভাল করে। কিছুই করে না।

তার আরো অভিযোগ, বাংলাই একমাত্র রাজ্য যে বন্যা রোধের প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত। এখনো পর্যন্ত কেউ খবরও নেয়নি, এক পয়সা দেয়ওনি।

যদিও রাজ্যের বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। কয়েক দিন আগেই শুভেন্দু বলেছিলেন, বন্যার জন্য মুখ্যমন্ত্রীই দায়ী। এটা তৃণমূলের ব্যর্থতা।

অপরদিকে ডিভিসি ব্যারেজ থেকে পানি ছাড়া নিয়ে ডিভিসির কর্তা একটি চিঠি প্রকাশ্যে এনেছে, কতৃপক্ষ দাবি করেছে, পানি ছাড়ার বিষয় ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ দুই রাজ্যকেই জানানো হয়েছিল। সেই চিঠি অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার জেলাগুলো সতর্ক করেছিল। ফলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানতেন না, এটা সঠিক তথ্য নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভিএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।