কলকাতা: বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্মচাপ পরিণত হয়েছে অতি নিম্মচাপে। সেই নিম্মচাপ পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে, বঙ্গবাসীর মনে এখন সেই আশঙ্কাই দানা বেঁধেছে।
আবহাবিদদের তথ্য মতে, বুধবার রাত এবং বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের পুরি জেলা বা ওই রাজ্যের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী কোন অংশ দিয়ে স্থলভাগ স্পর্শ করতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’।
সর্বশেষ তথ্য মতে সরাসরি ঘূর্ণিঝড় বাংলায় আছড়ে না পড়লেও এর প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায়। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে দুই দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনিপুরে। এছাড়া প্রভাব পড়তে পারে কলকাতা, হাওড়া, বাঁকুড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড় গ্রামের মতো জেলাগুলোর উপর। এর জেরে আগামী দুদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। সাগরের পানি বেড়ে উঠবে। ফলে সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার প্লাবনের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রাজ্যে কি কি ধরনের দুর্যোগ হতে পারে এবং তার মোকাবিলা কিভাবে করা হবে, তাই নিয়ে মঙ্গলবার(২২ অক্টোবর) রাজ্যের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইতিমধ্যে নবান্নে কন্ট্রোল রুম খোলার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৪ ঘণ্টা সেই কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া যেসব জেলাগুলো প্রভাব পড়তে পারে সেখানে ইতিমধ্যে মাইকিং শুরু করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী শুক্রবার অব্দি মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথায় মাথায় রেখে আগামী ২৩ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যে ১৪টি জেলার সব স্কুল ছুটি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, কলকাতা আবহাওয়া দপ্তর অনুযায়ী ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে পুরী এবং সাগরদ্বীপের মাঝে ল্যান্ডফল করতে পারে 'দানা'। সেই সময় ঝড়ের গতি ঘণ্টায় থাকতে পারে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার।
ইতিমধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্যপ্রশাসন। উপকূলবর্তী নিচু এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সরকারের তরফে। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয় আগামীকাল থেকেই মোতায়েন করা হবে রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীদের। আগেভাগেই জেলাগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে যাতে বিমান চলাচলে কোনো অসুবিধা না হয় এবং বিপদ এড়াতে কি ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে তাই নিয়ে বৈঠক করেছে কলকাতা বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগেই বিমানগুলিকে কিভাবে নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে এবং কোথায় রাখা হবে, এবং বিমান বাতিল করা হবে নাকি ঘুর পথে চলবে এই সমস্ত সামগ্রিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছে কলকাতা বিমানবন্দর। একইভাবে শিয়ালদা এবং হাওড়ার রেলস্টেশনও ঘূর্ণিঝড়ের বিষয় বৈঠা করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের একেবারে পার্শ্ববর্তী রাজ্য উড়িষ্যা। অর্থাৎ বাংলায় 'দানা' সরাসরি ল্যান্ডফল না করলেও, এর প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে পড়বে। তা ইতোমধ্যে আন্দাজ করতে পেরেছে প্রশাসন। আর তাই 'দানা' ডানা মেলার আগেভাগে তার মোকাবিলা করতে বুধবার থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েবে রাজ্যের সেচ দফতর এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ২২ অক্টোবর ২০২৪
ভিএস/এমএম