ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

কার ভাগ্যে পশ্চিমবঙ্গের মসনদ!

সুকুমার সরকার, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
কার ভাগ্যে পশ্চিমবঙ্গের মসনদ!

ঢাকা: হিসেবটা বড়ই গোলমেলে। কার ভাগ্যে জুটবে পশ্চিমবঙ্গের মসনদ, তা জানা যাবে বৃহস্পতিবার (১৯ মে)।

এ নিয়ে ভারতে তো বটেই- এককালের অভিন্ন বাংলা বা পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে গোটা বাংলাদেশ জুড়েও চলছে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা।

 

নানা সূত্রের পাশাপাশি দিল্লির ইন্ডিয়ান ব্যুরোর (আইবি) সমীক্ষায় বলা হয়েছে ভোটের কয়েকদিন আগে গড়া কংগ্রেস-সিপিএম জোটই পশ্চিমবঙ্গের মসনদে বসতে চলেছে। কিন্তু এটা মানতে নারাজ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দলীয় কর্মীদের ক্ষমতায় ফেরার উৎসব পালনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের ভোট নিয়ে বাংলাদেশের এমন আগ্রহ থাকা খুবই স্বাভাবিক। ৪৭-এ ব্রিটিশরা বাংলাকে ভাগ করেছে। কিন্তু দুই দেশের বাঙালির আত্মাকে তারা ভাগ করতে পারেনি। দুই বাংলার মানুষ তাই সব সময় একে অপরের খোঁজ-খবর রাখেন।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার দফাভিত্তিক এ নির্বাচন শুরু হয় ৪ এপ্রিল। এরপর ১১ এপ্রিল, ১৭ এপ্রিল, ২১ এপ্রিল, ২৫ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল এবং শেষ হয় ৫ মে।
 
২০১১ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদের ডাক দিয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়তি ছিল তার সাদা-সিধে বেশভূষার জীবনযাপন।
 
সারদা কেলেঙ্কারির ঘটনা মমতা এবং তার দল তৃণমূলের ভাবমূর্তিতে বেশ খানিকটা ধস নামিয়ে দেয়। এরপর নারদকাণ্ড ভিডিও’তে তৃণমূলের ১১ মন্ত্রী, সংসদ সদস্যকে ঘুষ নিতে দেখা যায়।
 
নির্বাচনের আগে এমন ইস্যু পেয়ে মমতার প্রতিপক্ষ প্রচার-প্রচারনায় নেমে পড়েন। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে দুর্নীতির ঊর্ধ্বে রয়েছেন বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় তার নিজের সততাও প্রশ্নবিদ্ধ।
 
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের ম্যাজিক সংখ্যা ১৪৮টি। ২০১১ সালের নির্বাচনে মমতার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়েছিল। ১৮৪টি আসনে জয় লাভ করে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন মমতা। অবশ্য তখন নির্বাচনের হাওয়া ছিল তৃণমূলের অনুকূলে।
 
বামফ্রন্টের টানা ৩৪ বছরের শাসনামলে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের নেতাদের দুর্নীতি ও বাড়াবাড়িতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। গেল নির্বাচনে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বাম দলগুলো পেয়েছিল ৬০টি আসন। কংগ্রেস পায় ৪২টি।   আর পেয়েছিল বিজেপি ১৭ শতাংশ ভোট।  

এবার নির্বাচন ঘোষণার সময় অনেকেই বলছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ফের ক্ষমতায় ফিরে আসবেন। তবে ২০১১ সালের মতো সংখাগরিষ্ঠতা নিয়ে নয়। এবার আসন সংখ্যা কমবে। প্রথম পর্বের দুই/তিন স্থানে নির্বাচন হওয়ার পর তৃণমূল নেতাদের লাগামহীন মন্তব্যের জেরে মানুষ দলটি থেকে অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নেন।
 
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে এসে দুর্নীতির আঙ্গুল তুলেছেন মমতা সরকারের বিরুদ্ধে। তাই এখন আর কেউ জোর দিয়ে বলতে পারছেন না মমতাই ফের গদিতে আসছেন। কারণ অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন কংগ্রেস-সিপিএম জোট হওয়ায় তৃণমূলের পাশে থাকবেন মোদি সরকার।
 
তবে কেন্দ্র ছাড়াও কয়েকটি পরিসংখ্যান থেকে বলা হচ্ছে, মমতা ক্ষমতায় ফিরতে পারছেন না। কে আসছেন গদিতে তাও কোনো পক্ষ জোর দিয়ে বলতে পারছে না। কেউ কেউ বলছেন ত্রিশঙ্কু বা ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হতে পারে।  
 
২০১১ সালের বিধান সভা নির্বাচনে ভারতের রাজনৈতিক মহলে মমতা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলেন। তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। মমতার নামে মানুষের মধ্যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মমতাকে ‘মা-মাটি-মানুষে’র দিদি বলে সম্বোধন করতেন।
 
পশ্চিমবঙ্গে ভোটারের সংখ্যা ছয় কোটি ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার ১০১। মমতার তৃণমূলের মতো কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপিও এককভাবে নির্বাচনে লড়ছে। জাতীয় কংগ্রেস ও সিপিআই (এম) জোট বেধেছে।     

মমতা পশ্চিমবঙ্গের অষ্টম মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী। দল আর তার মধ্যে খুব একটা ফারাক রাখেননি। দলের ওপরে নিজের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। মমতা মানেই তৃণমূল।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
এসএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।