ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

‘ভুতু’ আর ‘পটল কুমার’ বদলে দিচ্ছে বাঙলা সিরিয়ালের ভাষা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২১ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৬
‘ভুতু’ আর ‘পটল কুমার’ বদলে দিচ্ছে বাঙলা সিরিয়ালের ভাষা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: যতোই আপত্তি-সমালোচনা থাকুক সন্ধেবেলায় বাঙলা সিরিয়ালের  জনপ্রিয়তা দুই বাঙলাতেই দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে গৃহবধূ এবং বাড়িতে থাকা অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।

কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা বাঙলা সিরিয়ালে ইদানীংকালে হঠাৎ করেই একটা বাঁক লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আর সেই বাঁকের কেন্দ্রে আছে দুই শিশুশিল্পী। জি-বাঙলার আরশিয়া আর স্টার জলসার হিয়া। যদিও আরশিয়া বা হিয়া নামে এদের অনেকেই চিনবেন না , কিন্তু যদি বলা হয় আরশিয়া জি-বাঙলার ‘ভুতু’ আর হিয়া স্টার জলসার ‘পটল কুমার’ তবে তাদের চিনে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

হিয়া আর আরশিয়ার সঙ্গে আলাপ করতে বাংলানিউজ হাজির হয়েছিল কলকাতার ভরত লক্ষ্মী স্টুডিওতে। দিয়া আর আরশিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের বর্ণনা দেওয়ার আগে একটু অন্যদিকে নজর রাখা যাক। এতোদিন ধরে টেলিভিশনের পর্দাতে বেশ চলছিলো বৌমা-শাশুড়ির লড়াই  কিংবা স্বামীর একাধিক প্রেম এবং তার থেকে উদ্ধার পাওয়ার গল্প।

আর সংসারের রোজনামচার ফাঁকে সন্ধেবেলায় সুখী গৃহকোণের বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে যাচ্ছিল বাংলা সিরিয়ালে। ভালোর সঙ্গে মন্দের লড়াই আর সম্পর্কের জটিল থেকে জটিল হয়ে ওঠা সুতো খুলতে খুলতে  বাঙলা সিরিয়ালের দর্শক এক বিশেষ প্রজাতিতে পরিণত হচ্ছিল।   টেলিভিশনের দর্শকরা সরাসরি দুটি দলে ভাগ হয়ে গিয়েছিলেন এক দল সিরিয়াল দেখেন অন্যদল সিরিয়ালবিরোধী। আর এই দুপক্ষের গৃহযুদ্ধের ঘটনাও নেহায়েত কম নয়।

তবে ’৯০ এর দশকে ‘জন্মভূমি’ এবং ‘জননী’-এর হাত ধরে যে মেগা সিরিয়াল শুরু হয়েছিল প্রায় আড়াই দশক পার হয়ে তাতে এই প্রথম  বড় মাপের পরিবর্তন লক্ষ্ করা যাচ্ছে ২০১৬ সালে। যেখানে পারিবারিক গল্পের বাইরে কোনো শিশু গল্পের নায়ক কিংবা নায়িকা। আর এই বড় পরিবর্তন আসছে এই ছোট দুটি বাচ্চার হাত ধরেই।

কলকাতার ভরতলক্ষী স্টুডিওতে গিয়ে জানতে পারা গেল ‘ভুতু’ অর্থাৎ আরশিয়া পড়ে প্রেপ–টু ক্লাসে। সিরিয়ালের চরিত্রের চাইতেও তার আসল বয়স কিছুটা কম। আরও জানা গেল  স্কুল থেকে সরাসরি স্টুডিওতে চলে আসে ছোট্ট আরশিয়া। সেখানে এসেই মেকাপ তারপর থেকে অভিনয় শুরু। মাঝে মাঝে ‘ব্রেক’। বেকের মধ্যে কখনও চিপস কখনো ম্যাগি। আইসক্রিমও আসে তবে সেটা মাঝেমাঝে।

ইতিমধ্যেই ‘ভুতু’–এর জনপ্রিয়তা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। তাই শুধু স্টুডিওতে আসা ফ্যানদেরই নয় , প্রবাসী বাঙ্গালিদের পছন্দের চরিত্র হয়ে উঠেছে ‘ভুতু’।

অনুমতি নিয়ে ‘ভুতু’-এর শু্টিং দেখার সুযোগ মিলল। সেখানেও অবাক করলো আরশিয়া। কান্নার দৃশ্যে গ্লিসারিন ছাড়াই চোখের জল এনে ফেললো পাকা অভিনেতাদের মতো। পরিচিত এক সহ-পরিচালক জানালেন, একেবারে পেশাদার অভিনেত্রী মত কাজ করছে আরশিয়া। সিনেমা জগতের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা অনেকেই রাশিয়ান অভিনেতা স্তানিস্লাভ্‌স্কির অভিনয় পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেও আরশিয়া সেটা জানে না। কিন্তু সেই পদ্ধতির ব্যবহার করেই সে গ্লিসারিন ছাড়াই কেঁদে ভাসাল।  

কাজের ফাঁকে আরসিয়া ওরফে ‘ভুতু’  জানাল তার পছন্দ কার্টুন। ডোরেমন, শিঞ্চ্যান আর মটু-পাতলু-এর ভক্ত সে। আর ভালোবাসে সেলফি তুলতে। কিভাবে লম্বা লম্বা ডায়লগ মনে রাখে সে? ‘ভুতু’ জানিয়েছে একবার তার মা পড়িয়ে দেয় পরে আবার আঙ্কলরা পড়িয়ে দেয়। ‘আঙ্কল’ মানে সহ –পরিচালকের কাছে আবদারও করে ভুতু। কখনও আইসক্রিম কখন চিপস। ম্যাগি তার একান্ত পছন্দের খাবার। তবে তাকে গাল টিপে আদর করলে সে একদমই পছন্দ করে না। কিন্তু সেটা থেকে রেহাইও নেই এই ক্ষুদে অভিনেত্রীর। কথা বলেই ব্যস্ত ‘ভুতু’ চলে গেল ফ্লোরে। যাবার আগে বলে গেল ‘আমি ফাস্ট হয়েছি, টিভিতে আমাকে দেখো কিন্তু’। টিআরপি বিষয়টিকে এইভাবেই বোঝান হয়েছে ভুতুকে।

ভুতুর পাশের সেটেই চলছে স্টার জলসার  ‘পটল কুমার গানওয়ালা’ –এর শুটিং। সেখানেও ঢুঁ মারলাম। ‘পটল কুমার গানওয়ালা’ –এর পটল অর্থাৎ হিয়া দে। সিরিয়ালের পটল কুমার আসলে পটল কুমারী। আর এই পটল কুমারী পড়ে দক্ষিণ কলকাতার নামকরা মেয়েদের একটি স্কুলে। পড়াশুনা চালিয়ে অভিনয় করাটা বেশ কঠিন, জানাল পটল। তবে প্রেসের লোকদের সঙ্গে সে আগেও কথা বলেছে। তারা নাকি মাইক নিয়ে আসে। তাই অমায়িক এই সংবাদকর্মীর কাছে উত্তরের চেয়ে প্রশ্নই বেশি করে বসল পটল। জানাল স্কুলে ঠিক মতো যাওয়া হচ্ছে না। তবে অ্যান্টিরা বকবে না। কারণ তার বিশ্বাস আন্টিরা নিশ্চয় টিভিতে ওকে রোজ দেখে।

সিরিয়ালে পটলের বাবা অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায় একজন গায়ক। আর তার আসল বাবা উত্তম দে –এর একটি দোকান আছে। মা শ্রাবণী দে-এর ইচ্ছেতেই মেয়ের অভিনয়ের শুরু। বাড়িতে আছে দিদি-নানা-নানি। তবে তাদের সাথে যোগাযোগ খুবই কম। রাতের ঘুমের সময়টুকু ছাড়া বাড়িতে থাকাই হয় না। বলতে গিয়ে একটু ম্লান হোল পটলের মুখ। কলকাতার স্টুডিও পাড়ায় আলোচনা পটল আর ভুতুই নাকি বদলে দেবে সিরিয়ালের দুনিয়াটা।

স্টুডিও থেকে বের হয়ে দেখলাম বেশ কয়েকটি স্কুলফেরতা শিশু আইসক্রিমের গাড়ি ঘিরে হইহই করে আইসক্রিম খাচ্ছে। একটা লোহার গেটের তফাতেই আছে আরশিয়া আর হিয়া। আইসক্রিম তাদের জন্যও আসে, কিন্তু তাদের স্টুডিওর বাইরে বেরোতে নিষেধ। তবে কি ওরা সন্ধেবেলায় দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে গিয়ে নিজেদের শৈশব হারাচ্ছে? সিরিয়ালের জগতে পরিবর্তন হয়তো আসবে কিন্তু আরশিয়া আর হিয়ার জগৎটা কি হারিয়ে যাবে সেই আলোর ঝলকানিতে!

 বিনোদনের দুনিয়ায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে গোটা কার্যক্রমটাই  থমকে যেতে পারে। এই দুনিয়ার মূলমন্ত্রই ‘শো মাস্ট গো অন’। সেই ‘শো’-কেই টেনে  নিয়ে যাচ্ছে এই দুই শিশুশিল্পী হয়তো তাদের শৈশবের বিনিময়েই।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৮ ঘণ্টা, ১৭ জুন , ২০১৬
ভিএস/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।