ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

বাংলা উচ্চারণেই মুগ্ধতা ছড়ালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
বাংলা উচ্চারণেই মুগ্ধতা ছড়ালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব

ভারত সফররত বাংলাদেশের একশো তরুণকে স্বাগত জানিয়ে দেশটির রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইতিহাস, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক মুগ্ধবাক্যে মিনিট বিশেকের ভাষণেই বলে ফেললেন।

দিল্লি থেকে: ভারত সফররত বাংলাদেশের একশো তরুণকে স্বাগত জানিয়ে দেশটির রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইতিহাস, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক মুগ্ধবাক্যে মিনিট বিশেকের ভাষণেই বলে ফেললেন। ইংরেজি সুন্দর বাক্যচয়নে সে বক্তব্য টেনে রেখেছিল সবাইকে।

ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের মানুষ পেয়ে দু’চারটি বাংলা কথা বলবেন- প্রত্যাশা ছিল এমন।

তবে আশা পূরণ করলেন আরও মধুরভাবে। সুন্দর, গোছালো ছোট ছোট বাক্যে কথার ফাঁকে যখন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন, পদ্মা, মেঘনা, গঙ্গা নদীর কথা উল্লেখ করলেন তখন সেটি আর ইংরেজি উচ্চারণে থাকলো না, থাকলো না বিন্দুমাত্র হিন্দির টান। ১০ হাত দূর থেকে রাষ্ট্রপতির মুখে এ বাংলা উচ্চারণের শব্দগুলোই মন ভরিয়ে দিল।

অনুষ্ঠান শেষে আবেগে কারও কারও চোখে পানিও চলে আসে।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় হোটেল অশোক থেকে ডেলিগেটসদের বহনকারী গাড়িগুলো যখন রাইসিনা হিলে ঢুকলো, উঁকি দিতে শুরু করলো লালচে স্থাপনাগুলো, তখন থেকেই বেড়ে গেল উত্তেজনা। ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে দেশটিতে সফররত ইয়ুথ ডেলিগেশন টিমের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দিন ছিল এটি।

রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে সিঁড়িতে তখন লালগালিচা। স্থাপত্যকর্ম চোখজুড়ালো বাইরে থেকেই। একশোজন ডেলিগেটসকে নিরাপত্তা পর্ব শেষ করে সেই সিঁড়ি দিয়ে নেওয়া হলো দরবার হলে। অপেক্ষা রাষ্ট্রপতির, ভারতের বাঙালি রাষ্ট্রপতি।

দরবার হলটি চারটি বড় গম্বুজ নকশাকাটা। রাষ্ট্রপতির চেয়ারে পিছ দিয়ে উপর পর্যন্ত ডিজাইন করে মখমল কাপড়ের ছাউনি। ঠিক পিছেই অশোকচক্র। চেয়ারের ডান-বামে দুইটি আয়না পদ্মপাতার আদলে। তার পাশে দু’ধারে মহাত্মাগান্ধীর বড় দুটি হাতে আঁকা প্রোট্রেট। সামনে শ’তিনেক চেয়ার। সেখানে বসা ডেলিগেটসরা। নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট পর অতিথিদের পিছ দিয়ে লাল গালিচায় হেঁটে আসন নিলেন ছোটখাট সুন্দর সমৃদ্ধ রাজনৈতিক জীবনের মানুষটি।

ডায়াসে দাঁড়িয়ে যখন দেশটির যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ্রী বিজয় গয়াল, একই মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এ কে দুবে, বাংলাদেশের দুই প্রতিনিধি তখন জোড় হাত করে একটু মুখ ফুলিয়ে মুখের উপর রেখে উদাস নয়নে ছিলেন তাকিয়ে। কখনও চশমাটি খুলে চোখ ডলে দূর করছিলেন ক্লান্তি। বাংলাদেশের কোনো স্মৃতি মনে পড়ছিল কি নড়াইলের জামাইয়ের!

একটু বাদেই ডায়াসে দাঁড়িয়ে একগ্লাস পানি মুখে দিয়ে স্বাগত জানালেন অতিথিদের। দুদেশের সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে শুরু করলেন সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। বললেন দরবারের হলের কথা, যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি কথা বলছেন। বলেন, ১৯৩১ সালে এই দরবার হল তৈরি। ১৯৪৭ এর আগ পর্যন্ত চারজন ব্রিটিশ ভাইসরয় থেকেছেন এ ভবনে। প্রায় ২শ বছর শাসন-শোষণের পর লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন জওহর লাল নেহেরুর হাতে এখানেই (নিজের চেয়ারের দিকে দেখিয়ে) ক্ষমতা হস্তান্তর করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে বলেন, ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। আমার দেশের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যাসহ বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় ২০ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। বাংলাদেশেরও প্রায় তাই। এদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নতুন নয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু দুই দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন বলে নন, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীনও আমাদের জন্য সমান প্রাসঙ্গিক। পদ্মা, গঙ্গা, কপোতাক্ষও তাই।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। এই দুই দেশের শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক বিকাশে তরুণদের নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

এ সময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রণব মুখার্জি।

ভারতের মোঘল শাসনামল, বাংলাদেশের বারো ভুঁইয়া, ঈশা খাঁ, সোনারগাঁও, যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য, বিক্রমপুরের রাজা কেদার রায় প্রমুখের সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি। জানান বাংলার প্রতি তার ভালোবাসার কথা।

এভাবে একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে বক্তব্য শেষের আগে বাংলাদেশের তরুণদের শুভেচ্ছা জানান।

এর আগে বাংলাদেশের ডেলিগেটসদের পক্ষ থেকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক ও তথ্য) রাজেশ উইকে ও ডেলিগেটস সদস্য ইশরাত জাহান মুমু রাষ্ট্রপতিকে একটি পিতলের রিকশা ও একটি সম্মাননা স্মারক দেন।


‘হান্ড্রেড-মেম্বার বাংলাদেশি ইয়ং ডেলিগেশন’ নামে এ টিমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন গণমাধ্যমের তরুণ সাংবাদিক ছাড়াও রয়েছেন তরুণ প্রকৌশলী, শিল্পী ও মঞ্চকর্মী।

ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে রোববার (০৪ ডিসেম্বর) দেশটিতে সফরে গেছেন ইয়ুথ ডেলিগেশন টিমের সদস্যরা। টিমে রয়েছেন ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৫০ জন পুরুষ, আছেন ৫০ নারী সদস্য।

সফরে ভারতের ইতিহাস-ঐতিহ্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ রাজধানী নয়াদিল্লি, আগ্রা, আহমেদাবাদ ও কলকাতার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করছেন তারা।

২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল বাংলাদেশের ১০০ তরুণকে এ সুযোগ দিয়ে আসছে ভারত সরকার।

**হিমালয় দেখতে দেখতে সোয়া ২ ঘণ্টায় দিল্লি!
** বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রণব মুখার্জির
** ভারতে বাংলাদেশের ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম

বাংলাদেশ সময়: ০২২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।