ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

যে কারণে উদযাপিত হয় জন্মাষ্টমী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
যে কারণে উদযাপিত হয় জন্মাষ্টমী

কলকাতা: হিন্দুধর্ম মতে রীতি মেনে প্রধানত তিন ধরনের দেবদেবীর উপাসনা করা হয়। শৈব, শাক্ত ও বিষ্ণু। শৈব যারা শিবের উপাসনা করেন। শাক্ত যারা কালী বা মূলত দেবীর উপসনা করেন আর বিষ্ণু ভক্তরা নারায়ণের উপসনা করে থাকেন।

মর্তে যতবার দুষ্টের পদার্পণ হয়েছে ততবার বিষ্ণু বিভিন্ন রূপে দুষ্টের দমন করেছেন। হিন্দু ধর্মপুরান অনুযায়ী, বিষ্ণুর দশটি অবতারের মধ্যে অন্যতম ও অতি জনপ্রিয় অবতার হলো শ্রীকৃষ্ণ রূপ।

আর জন্মাষ্টমী সেই দিনটিতে উদযাপিত হয়, যেদিন শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়।

পুরান মতে মাতা দেবকীর গর্ভে অষ্টম সন্তান বিষ্ণু জন্ম নেন। দেবকীর ভাই অর্থাৎ কৃষ্ণের মামা কংস ছিলেন অত্যাচারী রাজা। যিনি মানুষকে মানুষ মনে করতেন না। নির্বিচারে অত্যাচার করতেন। এক সময় তার অত্যাচার এতোই বেড়ে যায় যে, সে আকাশ থেকে দৈববাণী শুনতে পান। দৈববাণীতে বলা হয়, ‘কংস তোমার অত্যাচারের সীমা শেষ। তোমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসছে। আর তোমাকে যে মারবে, সে তোমার বোনেরই সন্তান। ’ এই শুনে দিক হারিয়ে ফেলেন কংস। প্রাণপ্রিয় বোন দেবকী ও তার স্বামী বাসুদেবকে মারতে উদ্যত হন। হাজার অনুরোধে একটি শর্তে দুজনকেই বন্দি করেন কংস।  

শর্ত এই যে, দেবকীর যে সন্তান হবে তাকে মামা কংসের হাতে তুলে দিতে হবে। কংস নিজের নজরে ও শিক্ষায় বড় করে তুলবে সন্তানকে। যাতে সেই সন্তান কংসকে আর মারতে না পারে।

শর্ত অনুযায়ী প্রথম সন্তান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কংস কালকুঠরীতে এসে হাজির। কিন্তু কংস তার সে কথা রাখলো না। তাদেরই সামনে সদ্যজাত সন্তাকে তুলে আছাড় দিয়ে মেরে ফেলে। এইভাবে পরপর সাত সাতটি সন্তান মেরে ফেলে কংস।  

রাগে দুখে ঈশ্বরের আরাধনা করে দিন কাটতে থাকে দেবকী ও বাসুদেবের। এরপর কৃষ্ণের আগে আবারও দৈববাণী হয়। তা শুধু দেবকী ও বাসুদেব শুনতে পায়। তাতে বলা হয়, দেবকী আবার গর্ভবতী হবে এবং সেই অষ্টম সন্তানই নিধন করবে অত্যাচারী কংসেকে।

সেই শুভ দিন আসে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে মধ্যরাতে যখন রোহিনী নক্ষত্র প্রাধান্য পায়, ধরা হয় তখনই জন্ম হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের। জন্মের রাতে সমস্ত কংসনগর কাল ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ে। যার ফলে অষ্টম সন্তারের জন্মের খবর টেরও পায় না কংস। অদৃশ্য সহযোগিতায় প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর স্রোতযুক্ত যমুনা নদী অতিক্রম করে বাসুদেব তার অষ্টম সন্তানকে গোকুলে রেখে আসেন। সেই সন্তান অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ বড় হয়ে কংসের দমন করে।  

এই কারণেই আজকের এই তিথিতে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে বিষ্ণু ভক্তরা। কিন্তু জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের পূজা হয় না। পূজা হয় তার শিশু রূপ অর্থাৎ গোপালের। সারাদিন নির্জলা উপবাস করে মধ্য রাতে গোপাল ঠাকুরের মূর্তিকে নিজের স্নেহের সন্তানের মতো সাজিয়ে, তার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রকম মিষ্টান্ন দিয়ে তবেই শেষ হয় পূজা। পূজা শেষে বাড়ির প্রতিটি সদস্য পানি ও প্রসাদ গ্রহণ করেন। এভাবেই যুগ যুগ ধরে দেবকীর অষ্টম সন্তান শ্রীকৃষ্ণের বাল্য রূপ গোপালের পূজা হয়ে আসছে জন্মাষ্টমীর দিনে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, অগাস্ট ১৪, ২০১৭
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।