তারপর মেঘের আড়াল থেকে সূর্যের উঁকিঝুঁকি। মিনিট কয়েক বাদেই আবার ঝলমলে রোদ ছড়িয়ে পড়ছে উঠোনে।
হাতে সময় একেবারেই কমে এসেছে। মহালয়া আসতে আর এক মাসও বাকি নেই। মহালয়ার ঠিক আগেই বিশ্বকর্মা পূজা। সেই মূর্তি গড়ার কাজও যথাসম্ভব এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। রোদ বেরুলেই শিল্পী-কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন দুর্গাপ্রতিমা নিয়ে। হাতে এখনও অনেক কাজ বাকি। কেউ কেউ প্রথম দফার রংয়ের প্রলেপ দিতে শুরু করে দিয়েছেন। কেউ কেউ এখনো মূর্তির মাটি শুকানোর অপেক্ষা করছেন।
এর মধ্যে টানা চড়া রোদ না হলে স্টোভ জ্বালিয়ে কোনোরকমে কাজ চালাতে হবে। তবে তাতে ভালো কাজ ফুটে ওঠে না। তাই রোদের জন্য এতো অপেক্ষা। এমনটাই জানাচ্ছেন শিল্পীরা। আসলে তাল তাল কাদা নিয়ে এই যে কসরত, তা যতই জীবিকার মাধ্যম হোক না কেন, শিল্পীরা কখনোই যে তাদের শিল্পকর্মের সঙ্গে আপস করতে চান না, সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছেন পটুয়াপাড়ার মৃৎশিল্পীরা।
সকাল থেকে রোদ ঝমমলে পরিবেশ থাকায় শিল্পীদের অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। কিন্তু দুপুরের পর ফের কয়েক পশলা বৃষ্টিতে সমস্যা বেড়েছে। এদিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, প্রত্যেকের ঘরেই পাঁচ-ছটি গণেশমূর্তি মণ্ডপে যাওয়ার জন্য সেজেগুজে রেডি। কোনো কোনো গণেশ মূর্তির অঙ্গসজ্জায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল শিল্পীদের। বিকালে বৃষ্টি থামার পর বেশ কয়েকটি বিশাল সাইজের গণেশ মূর্তি বেরিয়ে যেতেও দেখা গেল মণ্ডপের উদ্দেশে। মুম্বাইতে দশদিন ধরে গনেশপূজা হলেও কলকাতাতেও কয়েক বছর ধরে দুদিনব্যাপী গনেশপূজার রীতি শুরু হয়েছে।
মৃৎশিল্পী তারকনাথ পাল নিজের স্টুডিওতে দুর্গাপ্রতিমার গায়ে সাদা রং করছিলেন। তিনি বলেন, আজই শুরু করলাম রঙের কাজ। কিন্তু সবকটি মূর্তিতে রং লাগাতে পারব না। সেগুলি শুকোতে আরও কয়েকদিন লাগবে।
আর এক মৃৎশিল্পী দেবব্রত পালের ঘরে গিয়ে দেখা গেল, তিনি তাঁর স্টুডিওর সবকটি মূর্তিতেই প্রথম পর্বের সাদা রং লাগিয়ে দিয়েছেন। এক-দুদিনের মধ্যে সেগুলিতে ফের পড়বে দ্বিতীয় রঙের প্রলেপ।
প্রতিমার মুখ, আঙুল তৈরির কাজ শেষ। টানা কদিন বৃষ্টি চলেছে, সেই সময়ে ঘরে বসেই ধীরেসুস্থে এই কাজগুলি এগিয়ে রেখেছেন শিল্পী-কারিগররা। একটা সময় বলা হত, মহালয়ার পূণ্যতিথিতে কুমোরটুলিতে প্রতিমার চোখ আঁকা হয়। সেসব দিন ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। এখন মহালয়া থেকেই মণ্ডপমুখী হয়ে যায় কুমোরটুলির সব প্রতিমা। তাই কাজও শেষ করতে হয় অনেক আগেভাগে। তাই এখনই রঙের প্রলেপ পড়তে শুরু করেছে। দিন দশেকের মধ্যেই প্রতিমাকে গয়না, সাজপোশাক দিয়ে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়ে যাবে। এমনটাই জানালেন প্রবীণ মৃৎশিল্পী শ্যামাচরণ পাল।
এসবের মধ্যেই কুমোরটুলিতে দর্শনার্থীদের ভিড় যথারীতি শুরু হয়ে গিয়েছে। গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে বা নিদেনপক্ষে স্মার্টফোনকে সঙ্গী করে তরুণ-তরুণীরা ঢুঁ মারছেন পটুয়াপাড়ায়। সিংহ বা মহিষাসুর, কিছু একটা রেখেই চলছে সেলফি তোলার ধুম। কেউ আসছেন স্রেফ ঘুরে দেখতে।
পূজা শুরুর মাসখানেক আগে থেকেই কুমোরটুলি হয়ে ওঠে কলকাতার অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। প্রাকপূজার কুমোরটুলিও যে বিদেশি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের জায়গা, তা এখানে পা ফেললেই মালুম হবে। দোভাষি সঙ্গে নিয়ে ইতালিয়ান দম্পতি যেমন এদিন এসেছিলেন, তেমনই এসেছিলেন শখের আলোকচিত্রীরা। ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা নাইবা থাকল, মোবাইল ফোনে ছবি তোলার মুন্সিয়ানা দেখানোর জন্য এই সময়ে কুমোরটুলি ছাড়া আর ভালো সাবজেক্ট কোথায় মিলবে!
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৭
ভিএস/জেডএম