রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কাছে মুকুল রায় যে কত বড় মাথাব্যথা, তা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপিতে সদ্য যোগ দেয়া মুকুল রায়কে পরোক্ষে চাটনির সঙ্গে তুলনা করে তাচ্ছিল্যই করলেন দিলীপ।
দলের জেলা অফিস উদ্বোধন করতে এসে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় হয়, মুকুল রায় যোগ দেওয়ায় কি বিজেপির সংগঠন বাড়বে? উত্তরে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘বাড়িতে রান্নাবান্না হয়। ডাল-ভাত-তরকারি খেয়ে আমরা সুস্থ থাকি। কিন্তু চাটনি পেলে আমরা খুশি হই। যদিও চাটনি শরীরের জন্য ভালো নয়। ডাল-ভাত-তরকারির সঙ্গে চাটনি সংযোগ মাত্র। বিজেপি তার নিজের শক্তিতেই ভারতবর্ষে পরিবর্তন এনেছে, পশ্চিমবঙ্গেও আনবে। ’
পরে আবার দিলীপবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, তৃণমূলকে ভাঙতে বিজেপির ভরসা কি এখন মুকুল রায়? জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘তৃণমূলকে ভাঙার জন্য খুব বেশি চেষ্টা করতে হবে না। তৃণমূল নিজেদের অন্তর্বিরোধেই ভেঙে পড়বে। ভিপি সিং প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তাঁর নামও নেই, পার্টিটাও নেই। গুজরাল, দেবগৌড়াও প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তাঁরা আজ কোথায়? ঝড় এলে ঘাসপাতা উড়তে উড়তে মন্দিরে মাথায় পড়ে। সকালে মায়েরা এসে সেই লতাপাতা ঘাস ড্রেনে ফেলে দেয়। কোনও লতাপাতা বেশি মাথায় উঠে গেলে আমরা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করব। ’
দিলীপ ঘোষকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি মুকুল রায়কে চাটনি, ঘাস ইত্যাদির সঙ্গে তুলনা করছেন? এবারও বিজেপির রাজ্য সভাপতির ইঙ্গিতপূর্ণ উত্তর, ‘কাকে কি বলছি, তা সবাই বুঝতে পারছেন। ’
মুকুল রায় নারদ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত। সেই প্রসঙ্গেও সদ্য দলে যোগদানকারীকে ছাড় দিতে রাজি নন দিলীপ। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘টিভিতে মানুষ যাঁদের টাকা নিতে দেখেছে, কেউ বললেও মানুষ বিশ্বাস করবেন না যে তাঁরা টাকা নেননি। শেষ পর্যন্ত কোর্ট যা রায় দেবে, তা সবাই মেনে নেবে। তাতে যদি আমাদের দলের কেউ জড়িয়ে যায়, আমরাও ছাড়ব না। ক্ষমাও করব না। তাঁকে তখন আর পার্টিতেও রাখব না। ’
তবে মুকুল রায়কে নিয়ে বাংলার বিজেপি নেতারা কি ভাবছে তা নিয়ে এইমুহুর্তে বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ কেন্দ্রীয় নেতারা। পশ্চিমবাংলায় দার্জিলিং থেকে তাঁর প্রথম জেলা সফর শুরু করছেন মুকুল রায়। যেখানে কিছুদিন আগেও গুরুঙ বাহিনীকে সার্পোট করতে গিয়ে মারধর খেয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ ও তাঁর কোম্পানি।
এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মুকুল রায়ের একপ্রস্থ আলোচনা হয়ে গিয়েছে। এই মাসেই দার্জিলিং সহ পাহাড়ের বিস্তীর্ণ অংশ সফরে করবেন মুকুল রায়। দার্জিলিং গিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পাশাপাশি মুকুল পাহাড়বাসীর মনে কেন্দ্র এবং বিজেপির প্রতি আস্থা বাড়ানোর কাজে সহায়তা করবেন বলে জানা গিয়েছে। জেলা সফরের পাশাপাশি মুকুল রায়ের দ্বিতীয় পরিকল্পনা হল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা করা। এরই মধ্যে এই বিষয়ে মুকুল তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ্যে প্রকাশও করেছেন।
১০ নভেম্বর কলকাতার সমাবেশের জন্য ‘তৃণমূল তোষণ ছাড়ো, পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ফেরাও’ এই স্লোগানে ১০ লক্ষ পোস্টার তৈরি করিয়েছেন মুকুল। শুধু কলকাতায়ই লাগানো হবে প্রায় দুলক্ষ পোস্টার। ১০ তারিখের সমাবেশের পরে মুকুলের পরবর্তী লক্ষ্য উলুবেড়িয়া, নোয়াপাড়া এবং সবংয়ের উপনির্বাচনে মনোনিবেশ করা। ৬ থেকে ১১, টানা ছ’দিন কলকাতায় থাকাকালীন মুকুল রাজ্যের সব জেলায় নিজের অনুগামীদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করবেন।
অতএব রাজ্যের বিজেপি নেতারা কি ভাবছেন সেদিকে একটু কমই নজর দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পশ্চিমবঙ্গে কোন ছকে ২০১৯-এ বিজেপি ভোট বাড়াবে সে অঙ্ক দিল্লিতে বসে হাতেনাতে অংক কষে দেখিয়ে দিয়েছেন মুকুল রায়। কারণ তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই মুকুল রায় মমতার সারথী ছিলেন। তাই এই মুহূর্তে মুকুলে মজে আছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ৬ নভেম্বর, ২০১৭
ভিএস/জেএম