ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

রুপির মণ্ড দিয়ে ফার্নিচার!

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৭
রুপির মণ্ড দিয়ে ফার্নিচার! রুপির প্রতিকী ছবি

কলকাতা: কালো টাকা রুখতে গত বছরের ৮ই নভেম্বর রাতে ৫শ’ ও ১ হাজার রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদি সরকার। তিনি বলেছিলেন এটা কার্যকর হবে ৯ই নভেম্বর রাত্রি ১২টার পর থেকে। এরপর শুরু হয়েছিল এক প্রকার গৃহযুদ্ধ। ৯ই নভেম্বর ২০১৭ ঠিক এক বছর শেষে সেই হিসাব কষতে বসে, মোদি সরকারকে যেনো অনেকটাই নড়বড়ে দেখাচ্ছে। নোট বাতিলের হাত ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নজিরবিহীন ফল মেলার অঙ্ক কষেছিলো মোদি সরকার।

কালো টাকার সিংহভাগ অর্থাৎ লক্ষকোটি ধরা পড়বে। সন্ত্রাসবাদীদের টাকার যোগান বন্ধ হবে।

কালো টাকাকে করের আওতায় আনা যাবে। কয়েক হাজার কোটি জাল নোট শনাক্ত হবে। ডিজিটাল লেনদেন গতি পাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসাবের খাতায় কি পাওয়া গেল?

নভেম্বর ৯ তারিখ সকাল থেকেই বদলে গিয়েছিল ভারতের আম আদমির জীবন। বাজারের পরিবর্তে ব্যাঙ্কে ছোটেন তারা। এটিএম এর সামনে হা-পিত্তেশ। লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মৃত্যুও। ৫০ দিনে মৃত্যু হয় ১৩২ জন সাধারণ নাগরিকের। চাকরি হারান বহু মানুষ। তার জেরে বাড়ে দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী তথা পশ্চিমবঙ্গেও ছিল একই ছবি।

তর্ক-বিতর্ক, যুক্তি-পাল্টা যুক্তির মধ্যেই এল (রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া) আরবিআই-এর রির্পোট। জানা গেল নোট বাতিল বিষয়ে চূড়ান্ত ফ্লপ দেশের শাসক সরকার।

তা নয় হল, একটা সরকারের ভাল-মন্দ দুই দিকই থাকে। একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে সরকারের তো আর সার্টিফিকেট হয় না। ‘কিন্তু কি হল এই সব পুরানো নোটের’। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ বলতেন ‘টাকা মাটি - মাটি টাকা’ সেই থিওরি মনে পড়ে যাচ্ছে। কেজিতে ৬ রুপি দরে বাতিল নোট বিক্রি করছে রিজার্ভ ব্যাংক। বাতিল রুপির নোট দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ড

কলকাতায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সদর দপ্তর সূত্রে এমনই খবর মিলেছে। তবে গোটা নোট নয়, তা বিক্রি হচ্ছে কুঁচিয়ে। সেই টুকরো টুকরো রুপি কিনছে মূলত প্লাইউড সংস্থার মালিকরা। তা দিয়ে তৈরি হবে দেখনসই হালকা চেয়ার, টেবিল বা অন্য কোন ফার্নিচার। কিছু নোট অবশ্য যাচ্ছে হস্ত শিল্পেও। নোট বাতিলের বর্ষপূর্তিতেও সেই কাজ চলছে জোরকদমে। লরি বোঝাই করে সেই কুঁচো টাকা পাড়ি দিচ্ছে ভিনরাজ্যেও।

কাঠ ও কাগজের মণ্ড দিয়ে তৈরি বিশেষ রকমের হাল ফ্যাশনের প্লাইউড। অন্তত ত্রিশ শতাংশ কাগজ ব্যবহার করে তৈরি হয় কমপ্রেসড উড। এদিকে নোট তৈরি হয় যে কাগজ দিয়ে, তার গুণমান সাধারণ কাগজের চেয়ে অনেক ভালো। তাই নোটের মণ্ড দিয়ে তৈরি হওয়া প্লাইউডের মানও ভালো হবে মনে করা হচ্ছে!

রীতিমত টেন্ডার ডেকে তাই সেইসব প্লাইউড সংস্থাকেই বাতিল নোট বিক্রি করে দিচ্ছে রিজার্ভ ব্যাংক। জানা গিয়েছে, কেরলের একটি সংস্থা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে কিনে নিচ্ছে পুরানো নোট।

তবে বাতিল ৫শ বা হাজার টাকার নোটই যে শুধু বিক্রি হচ্ছে তা নয়। এটি একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। অন্য যে কোনও অর্থমূল্যের নোট, যেগুলি স্বাভাবিক কারণেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ আর নিতে চায় না, সেগুলিও একইভাবে গোনা এবং তা মেশিনে কুঁচিয়ে ফেলা হয়।

গত বছর নোট বাতিল হওয়ার পর সেই কাজ আরও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। দেশের  টাকা গোনা এবং তা কুঁচিয়ে ফেলার কেন্দ্র থেকে ওই নোট বিক্রি করছে আরবিআই। কত কেজি নোট এভাবে বিক্রি করল আরবিআই?  তারা সাম্প্রতিকতম হিসাবে জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ১ হাজার৬শ’ ৫৯ কোটি বাতিল নোট গোনা হয়েছে। এর মধ্যে বাতিল ৫শ’ টাকার নোটের সংখ্যা ১ হাজার ১শ’ ৩৪ কোটি।

এ সব দেখেশুনে কলকাতার আম আদমী মনে মনে একটাই গান আওড়াচ্ছে ‘মহারাজা তোমাকে সেলাম..’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, ৯ নভেম্বর, ২০১৭
ভিএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।