ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

জাহিদুলের কাছে বাংলাদেশি রান্না শিখলেন কলকাতার গিন্নিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৮
জাহিদুলের কাছে বাংলাদেশি রান্না শিখলেন কলকাতার গিন্নিরা রান্না শেখাচ্ছেন জাহিদুল-ছবি-বাংলানিউজ

কলকাতা: নববর্ষের দিনে বাঙালির প্রথমভাগে যদি সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকে তবে তার দ্বিতীয়ভাগে থাকে ভুরিভোজ। তাই আগেভাগেই ১৪২৫ সালকে একটু ভিন্নভাবে স্বাগত জানালো কলকাতার দ্য সোভরানী হোটেল। তারা কলকাতার বাঙালিদের জানান দিলো বাঙালি খাবারের ঐতিহ্য আজও বহন করে চলেছে বাংলাদেশ। তবে কোনোমতেই পশ্চিমবাংলার বাঙালির ঐতিহ্যকে খাটো না করে।

বাংলাদেশের শেফ এনে হোটেল কর্তৃপক্ষ হাতেনাতে রান্না শেখালো ঘরোয়া গৃহবধূ থেকে শুরু করে কর্মব্যস্ত গিন্নিদের। আর সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় সাংবাদিকদের।

 

আমন্ত্রণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, গোটা কলকাতা একত্রিত করা সম্ভব না। কিন্তু সাংবাদিকরা পারে গোটা বাংলায় বাংলাদেশি রান্নাকে সামনে আনতে। শুধু বাংলাদেশি খাবার না, যাতে পশ্চিমবাংলার মা-ঠাকুমার রান্নার যে ঐতিহ্য, বর্তমান প্রজন্ম যেন ভুলে না যায়। তাই দি সোভরানী হোটেলের তরফ থেকে এই উদ্যোগ।  

দুই বাংলার এই রন্ধন শিল্পের উদ্যোক্তা রাজশ্রী ও মহুয়া দাস। রাজশ্রী বলেন, কলকাতায় বাঙালি রেস্তোরাঁ হাতেগোনা। তাও তাদের যা দাম সাধ থাকলেও সবসময় সাধ্য হয় না মধ্যবিত্তদের। আবার বাংলাদেশি খাবার সেভাবে কেউ করে না। মাঝেমধ্যে উৎসবে তার ঝিলিক দেখা যায়। তাই আমরা শেফ জাহিদুল ইসলামকে এনেছি ওয়ার্কশপ করাতে। যাতে এখানকার মানুষ বাড়িতেই বাংলাদেশি খাবার বানাতে পারে। নেট দুনিয়ায় আজ কোনো কিছু অসম্ভব না, তবে প্র্যাকটিক্যাল দেখার আলাদা একটা অভিজ্ঞতা আছে। নারীদের সমাগম বলে দিচ্ছে তারাও কতটা আগ্রহী জানতে। সামনে পহেলা বৈশাখ। আমি মনে করি এখান থেকে শিখে পহেলা বৈশাখে তারা বাড়িতে বানিয়ে নতুন স্বাদ পাবেন। তাই আমরা এই অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছি ‘পয়লা ভোজ’।

‘পয়লা ভোজ’-এ দুই বাংলার শেফ-ছবি-বাংলানিউজ
কলকাতার বাঙালিদের কি শেখাতে চান জানতে চাইলে শেফ জাহিদুল বলেন, বাঙালিকে ভাগ করবেন না। আমি মনে করি বাঙালি জাতি একটাই। মূলত আজ আমি দেখাবো পুরান ঢাকার খাবার। কারণ ভিনদেশি কেউ বাংলাদেশে গেলে তাকে আমি একবার অন্তত পুরান ঢাকার খাবারের স্বাদ নেওয়াবো। মোঘল সাম্রাজ্যের বাবুর্চিরা যে রান্না আবিষ্কার করেছে তার ঐতিহ্য আজও চলছে। তাই আজ আমি এখানে রান্না করবো মোরগ পোলাও, জালি কাবাব ও সরিষা তেলের তেহারি।
 
মাছে-ভাতে বাঙালির ইলিশ আজ কেন নেই জানতে চাইলে জাহিদুল বলেন, সব তো আর একদিনে হয় না। এটা অন্যদিন হবে। তবে বাংলাদেশে এখন ইলিশ ধরা নিষেধ। নববর্ষ মানেই ইলিশ খেতে হবে আমি এটা মনে করি না। আমাদের সরকার ও আমরা এ বিষয়ে সচেতন হয়েছি বলে গত মৌসুমে সাড়ে তিন কেজি ওজনের ইলিশ পেয়েছি। রান্নার মশলা বেশিরভাগ আমি এখান থেকে নিই। তাই কলকাতায় আমার হামেশাই আসা হয়। সিজনে যে ইলিশ আপনারা হাজার রুপিতে কেনেন সে ইলিশ আমরা ২শ’ থেকে আড়াইশ টাকায় কিনি। তাই ইলিশে আমরা কতটা সচেতন হয়েছি বুঝতে পারছেন। অন্য এক সময় ইলিশ রান্না শেখাবো।
 
দুই বাংলার যৌথ ওয়ার্কশপ হওয়ায় কলকাতা থেকে ছিলেন দি সোভরানী হোটেলের চিফ শেফ কৌশিক ধর। তিনি বলেন, আজ মানুষ আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশি রান্না শিখতে এসেছে। তাই আজ আমি একটাই রান্না করবো যার নাম চিংড়ির দম পোক্ত।
 
হোটেলের জিএম সুনিত দাশগুপ্ত বলেন, আমরা লক্ষ করেছি গোটা পৃথিবী বাঙালিকে দুটি বিশেষ গুণে চেনে। এক তার কালচার দুই তার খাবার। বাঙালি খাবারের দাম দুই বাংলা ছাড়া অন্য দেশে বেশি এবং চাহিদাও আছে। তাই এবারের নববর্ষে আমাদের রেস্তোরাঁয় স্পেশাল খাবারে পশ্চিমবাংলার সঙ্গে বাংলাদেশের একটা ফিউশন আনতে চলেছি। দেখা যাক কলকাতার মানুষ এটাকে কেমনভাবে নিচ্ছে।  
 
ততক্ষণে জাহিদুল শুরু করে দিয়েছেন তার রান্না। মোরগ পোলাও রাঁধতে চিনিগুড়া চাল লাগে। তা এখানে নেই। তবে তার বিকল্প হিসেবে গোবিন্দভোগ চালটাও ব্যবহার করতে পারেন। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে চলেছেন বাধ্য ছাত্রীর মতো গিন্নিরা। আর হয়তো মনে মনে ভাবছেন একবার আমি করে খাওয়াবো আমার মনের মানুষকে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, ১২ এপ্রিল, ২০১৮
ভিএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।