ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশাবাদী, বাংলানিউজকে এইচ টি ইমাম

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশাবাদী, বাংলানিউজকে এইচ টি ইমাম বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম

কলকাতা: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি ‘জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’ গঠন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হোসেন তওফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম)।

মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এইচ টি ইমাম সম্প্রতি ভারত সফরে এসেছেন। সফরে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা হয় তার।

আলাপে তিনি ইঙ্গিত দেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বর্তমান মেয়াদকালে বাংলাদেশ সফর করতে পারেন। একইসঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও আশাবাদের কথা বলেন এইচ টি ইমাম।

বাংলানিউজ: নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তির জন্য অভিনন্দন... 

এইচ টি ইমাম: আসলে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তি নয়, ২০০৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর ২০১৪ সালেও একই দায়িত্ব পালন করেছি। এই দায়িত্ব বারংবার পালন করে আসছি। অবশ্যই সবসময় দলের সভাপতি শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনা নিয়েই দায়িত্ব পালন করে আসছি। যেহেতু অনেকের প্রশ্ন ছিল এই কমিটি আছে কি-না, তাই ঘোষণাটি করা হলো। কমিটিগুলোতে যারা ছিলেন সবই আগের মতই আছেন। যেমন প্রেসিডিয়ামের সব সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্য, সম্পাদকমণ্ডলীর সব সদস্য, উপদেষ্টামণ্ডলীর সব সদস্য এবং আমাদের আরও যে কমিটিগুলি ছিল এবং বিশাল কর্মী বাহিনী আছে সেগুলিও একইভাবে আছে এবং নির্বাচনে সবাই একসঙ্গে কাজ করবো।
 
বাংলানিউজ: তারুণ্য থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন একটানা, ক্লান্তি লাগে না?

এইচ টি ইমাম: ক্লান্তি অনেক সময় লাগে। পরিশ্রম তো হয়ই। প্রথম যখন ক্যাবিনেট সেক্রেটারির দায়িত্ব নিই, তখন আমার বয়স ৩৫ কি ৩৬ হবে। এখন ৮০ পেরিয়ে গেছি। কাজেই শারীরিকভাবে আগের সেই তারুণ্যের উদ্যম বা সে শক্তিও নেই। তবে একটি বিষয়ের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে সবসময় কৃতজ্ঞতা জানাই; আমার স্মরণশক্তি, স্মৃতিশক্তি এখনো মোটামুটি ভালই আছে এবং এখনো পরিকল্পনা করা কিংবা সেগুলো বাস্তবায়ন করা বা কথাবার্তা বলা মোটামুটি এখনও চালিয়ে নিতে পারি।
 
বাংলানিউজ: মুজিবনগর সরকার গঠনের সেই সময় আম্রকাননে আপনি উপস্থিত ছিলেন না। সে বিষয়ে কিছু...

এইচ টি ইমাম: মুক্তিযুদ্ধের সূচনাতেই ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পরই আমার দায়িত্ব ছিল অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে। হেডকোয়ার্টার ছিল রাঙামাটিতে। যেহেতু সেখানে পার্টি একটু দুর্বল ছিল, সে কারণে আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র সময় লাগেনি, দ্বিধাও করিনি। আমি তখন ছিলাম সবার থেকে জ্যেষ্ঠ। আমরা আগরতলায় মস্ত অফিস গড়ে তুলি। তারপরই খবর পাঠানো হয় এখানে সরকার গঠন হয়ে গেছে। তখন এখানে চলে আসি। সে কারণে শপথের সময় আমার থাকা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ আসলে ছিল জনযুদ্ধ। দলমত নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই মিলে এই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শুধু ব্যতিক্রম ছিলো দেশদ্রোহীরা। বাংলাদেশে এদের অভাব তখনও ছিল না, এখনও নেই।
 
বাংলানিউজ: রাজাকারদের কথা যখন তুললেন, এখনো তো সাম্প্রদায়িকতার একটা বাতাবরণ সৃষ্টি করতে চাইছে বিরোধীরা, এ নিয়ে কী বলবেন?

এইচ টি ইমাম: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হল এবং এর পেছনে ছিল বিরাট চক্রান্ত। তৎকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী যেসব বিদেশি শক্তি ছিল এবং তাদের অনুচরেরা ছিল, তাতে সবচেয়ে বেশি ছিল পাকিস্তানের ভূমিকা। প্রতিক্রিয়াশীলরা বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে বলে থাকে ‘বিপথগামীদের সিদ্ধান্ত’। বিপথগামী কিসের? এটা জেনে-বুঝে ঠাণ্ডামাথার পরিকল্পনা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর এবং জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ’৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত একটানা এরাই ক্ষমতায় ছিল। মুক্তিযুদ্ধের একটানা চরম বিরোধিতাকারী এবং গণহত্যাকারীরাই জিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা হয়ে উঠেছিল। জিয়ার কারণেই গোলাম আজমের (মৃত যুদ্ধাপরাধী) মতো স্বাধীনতার সশস্ত্র বিরোধিতাকারীদের অনেকে পাকিস্তান থেকেও চলে এলো এখানে। আপনারা একটা কথা ভুলে যান, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের শুধু বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ই বসানো হয়নি, সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় সম্পদও দেওয়া হয়েছিল তাদের হাতে। জোর করে তারা তাদের মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। এখনও তারা আছে। এখনও এরা মাথাচাড়া দেয়। আমরাও তাদের প্রতিহত করছি।  
 
বাংলানিউজ: ২০১৪ সালে বিএনপির মতো বিরোধী দলশূন্য নির্বাচন ছিল। এবারেও বিরোধীরা দুর্বল? আমরা কি একই প্রতিচ্ছবি দেখতে চলেছি? 

এইচ টি ইমাম: আমি রাজনীতি করছি দীর্ঘকাল। ১৯৯১ থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।  মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আওয়ামী লীগের সঙ্গেই কাজ করেছি। তবে আমি কিন্তু কখনোই মনে করি না যে, প্রতিপক্ষ দুর্বল, শত্রুরা দুর্বল। বরঞ্চ মনে করি শত্রু অত্যন্ত শক্তিশালী। স্বাধীনতার শত্রুরা, আওয়ামী লীগের শত্রুরা দীর্ঘকাল আগে থেকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সম্পদ ব্যবহার করে রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দিয়েছে, দেবে, এখনও দেয়। তাদের অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে এবং আমরা প্রতিহত করতে পারবো। তবে তাদের মোটেই ছোট ভাবা যাবে না, শক্তিহীন ভাবা যাবে না; আর দুর্বল ভাবার তো কোনো প্রশ্নই নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচন মোটেও ভোটারবিহীন ছিল না। ভোটারবিহীন বলাটা ভুল কথা। আমাদের নির্বাচন কমিশনের মতে, সে সময়ে ৪১ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন। প্রশ্ন হলো, যারা ভোট দিতে পারেননি, কেন পারেননি? বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাসের কারণেই এসব ভোটার ভোট দিতে পারেনি।
রাজনৈতিকভাবে যে কেউ বা যে কোনো দল ভোট বয়কট করতেই পারে। কিন্তু আপনি তো অন্যকে ভোট দানে বিরত করতে পারেন না। আপনি (বিরোধী বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট) প্রথমে বলেছিলেন নির্বাচন বয়কট করবেন; করলেনও সেটাই। তারপর বয়কটের জায়গায় বললেন, ‘নির্বাচন প্রতিহত করবো’। কিন্তু প্রতিহত করতে গিয়ে রেলগাড়িতে, বাসে, গাড়িতে আগুন দিলেন, বোমা হামলা চালালেন। যেখানে যারা ভোট দিতে গেছে তাদের তা দিতে দিলেন না। এমনকি প্রায় প্রত্যেকটি জায়গায় ভোটকেন্দ্রে আক্রমণ করেছেন, পুড়িয়ে দিয়েছেন। পোলিং এজেন্টদের হত্যা করেছেন। পুলিশ হত্যা করেছেন। ট্রেনে আগুন জ্বেলে মানুষ হত্যা করেছেন। এমনকি চলন্ত বাসেও মানুষকে বোমা-ককটেল মেরে অগ্নিদগ্ধ করেছেন। এটি কোন ধরনের রাজনীতি? অগ্নি-সন্ত্রাস করা আর মানুষ পুড়িয়ে মারা তো রাজনীতি হতে পারে না! এবার আমরা তা হতে দেবো না। জনগণই প্রতিহত করেছেন এবং করবেন। পরপর ২০১৩-১৪-১৫ টানা এই তিনটি বছর বাংলাদেশের মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত যে নির্যাতন করেছে, তার ফলে দেশের অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এসব না হলে দেশ আরও এগিয়ে যেতো। তবে ওই রকম আগুনের পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা আমাদের সরকারের কর্মসূচির পালন করেছি। আমাদের উন্নয়ন থেমে থাকেনি। উন্নয়নের মধ্য দিয়ে আমরাও বাঘা তেঁতুলের মতো কাজ করেছি। ২০১৪ সালের ভোটকে বিরোধীরা ভোটারবিহীন বলে প্রচার করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু অন্য দলগুলো তো ঠিকই অংশগ্রহণ করেছিল। জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করেছিল। জাতীয় পার্টিও তো বেশ শক্তিশালী একটি বিরোধী দল। তারা কম শক্তিশালী নয়।
 
বাংলানিউজ: ডিজিটাল বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লেখানোর পথে সব যোগ্যতা অর্জন করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কোন জায়গায়?

এইচ টি ইমাম: খুবই ভালো সম্পর্ক দু’দেশের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছেন, আমাদের দু’টি দেশের সম্পর্ক খুবই ভালো। কিছুদিন আগেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গিয়েছিলেন (বাংলাদেশে)। আমরা সবাই ছিলাম একসঙ্গে। তিনিও প্রকাশ্যে বলেছেন বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক এতো ভালো কখনোই হয়নি। সেই মিসেস গান্ধীর (ইন্দিরা গান্ধী) সময় আর বর্তমান সময়— আমাদের দু’দেশের সম্পর্কের সেরা সময়।
 
বাংলানিউজ: তিস্তা নিয়ে কতোটা আশাবাদী?
এইচ টি ইমাম: আমরা এখনও আশাবাদী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমাদের দেশ সফরের কথা রয়েছে (২০১৯ সালের এপ্রিলের আগে ভারতের জাতীয় নির্বাচন হবে, মেয়াদকালে সফর হতে পারে)। যখন সফর করবেন, তখন (পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী) মমতা ব্যানার্জিকে সঙ্গে রাখবেন এবং যেটা আমাদের ন্যায্য পাওনা সেটা আমরা পাবো।
 
বাংলানিউজ: ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
এইচ টি ইমাম: আপনাদেরও ধন্যবাদ 

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
ভিএস/এইচএ/জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।