শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শান্তিনিকেতন থেকে মন্ত্রীর আসতে রাত ৮টা বেজে যায়। তবে অধীর আগ্রহে বসেছিলেন কলকাতার সাংবাদিকরা।
তথ্যমন্ত্রী প্রেসক্লাবে ঢুকে প্রথমেই পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কাশ্মীরে পুলওয়ামায় ঘটে যাওয়া সেনা শহীদবেদীতে। এরপর শুরু হয় অনুষ্ঠান। মন্ত্রীকে বরণ করে নেন কলকাতা প্রেসক্লাবের কর্মকর্তারা।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা প্রেসক্লাবে সপ্তাহে দুই-তিন বার যেতে হয়। কলকাতা প্রেসক্লাবে আসার সুপ্ত ইচ্ছা ছিলো, সেই ইচ্ছা পূরণ হলো। আমি সাড়ে তিন ঘণ্টার জার্নি করে শান্তিনিকেতন থেকে আসছি। আপনাদের আতিথেয়তায় জার্নির ক্লান্তি আমার চলে গেছে।
বক্তব্যের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের অবদান কোনোদিন ভুলবার নয়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন ভারতের অবদান ইতিহাসে লেখা থাকবে।
এরপর তিনি বলেন, সম্প্রতি কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া সেনাবাহিনীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী গতকালই দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে শোকবার্তা পৌঁছে দিয়েছেন।
ড. মাহমুদ বলেন, আমরা দুই দেশের বাসিন্দারা রাজনৈতিক কাঁটাতারে আটকে থাকলেও, আমাদের সংস্কৃতি কখনোই বিভক্ত করা যাবে না। আমাদের মনে এখনো যা বিভেদ আছে তা আমরা দুই দেশের উদ্যোগে অনেকটাই কমিয়ে এনেছি। আরো কাজ বাকি অছে বলে মনে আমি করি। একাজে সাংবাদিকদের বড় ভূমিকা আছে, আর তা আপনারা পালন করে চলেছেন।
এরপর হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হন। জঙ্গিবাদ বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জঙ্গি সমস্যা আজ দুই দেশে বড় সমস্যা। তা কঠোর হাতে মোকাবিলা করছে দুই দেশের সরকার। বাংলাদেশি যেসব জঙ্গিরা এখানে ধরা পড়ছে তা কিন্তু দুই দেশের সরকারের সহযোগিতায়। আমরা কিছু তথ্য দিচ্ছি— এখানে প্রশাসনের তাতে সহযোগিতা হচ্ছে। আবার ভারতের যে সব জঙ্গিরা বাংলাদেশে গা ঢাকা দিচ্ছে তাদের তথ্য ভারত সরকার আমাদের তুলে দিচ্ছে। বাংলাদেশে ওরা আশ্রয় পাচ্ছে না বলেই এ দেশে তারা আশ্রয় নিচ্ছে, ধরাও পড়ছে।
কবে থেকে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলো কলকাতায় দেখা যাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা তো চাই এখানে দেখানো হোক। কিন্তু এখানকার ক্যাবল অপারেটররা প্রতি চ্যানেলে পাঁচ কোটি টাকা চাইছে অথচ আমরা ভারতীয় চ্যানেলগুলো থেকে মাত্র দুই লাখ টাকা নেই। খুব শিগগিরই বাংলাদেশের সরকারি চ্যানেল বিটিভি এখানে দেখা যাবে। বাকিগুলো নিয়েও কথা চলছে। আপনাদের মাধ্যমে এখানকার ক্যাবল অপারেটরদের বলতে চাই, টাকার অঙ্কটা কমান, তাহলেই বেসরকারি চ্যানেলগুলো আসতে পারবে।
জাল টাকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, অবশ্যই জাল কারেন্সি যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। এর মোকাবিলা আমরাও করছি। রুপি বা টাকা তো ছিল এখন ডলারও জাল হচ্ছে। দুই দেশ এ নিয়ে সতর্ক আছে। চেষ্টা করছি যাতে অচিরেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রীকে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে শান্ত মেজাজে দৃপ্তকণ্ঠে উত্তর দিতে দেখা যায়। যা দেখে অনুষ্ঠান শেষে ভারতীয় সাংবাদিকদের বলতে শোনা গেল অপেক্ষা করাটা ব্যর্থ হয়নি। এত সুন্দর ভাষায় স্পষ্ট উত্তর খুব কম মানুষই দিতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
ভিএস/এমজেএফ