বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির বাজারে ১০ রুপিতে কলকাতার গাড়ির পাইকারি যন্ত্রাংশ মল্লিক বাজার মোড়ে নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল লাগোয়া বামপাশের ফুটপাতে মিলছে এমনই পেটভর্তি খাবার। নাম দেওয়া হয়েছে ‘মা থালি’।
অবশ্য এর আগে গত বছরের জুনে ৬ রুপিতে ভরপেট খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছিল দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনী। মূল উদ্যোক্তা কলকাতার মেয়র পারিষদের সদস্য দেবাশিস কুমার। এবার সেই তালিকায় নয়া সংযোজন সোসাইটি ফর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের উদ্যোগে ‘মা থালি’। ভর্তুকি দিয়ে সাধারণ জনগণের হাতে খাবার তুলে দেওয়ার এমন পরিকল্পনা কলকাতায় সমাজসেবার নতুন ট্রেন্ড হিসেবে উঠে আসছে।
শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে মা থালির হেঁশেলে ঢুকে দেখা গেল, বিশাল হাঁড়িতে চড়েছে খিচুড়ি। পাশেই বড় দু’টি চুলায় তৈরি হচ্ছে তরকারি। ঘড়ির কাঁটায় ১টা বাজতেই শুরু হয়ে গেল মাইকে ঘোষণা, যাদের খিদে পেয়েছে, মাত্র ১০ টাকা পকেটে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ুন। কুপন নিন, আর সুস্বাদু খাবার খেয়ে যান।
ঘোষণা মাত্রই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন প্রায় জনা ১৫ মানুষ। লাইনে যেমন আছে দিনমজুরের মতো প্রান্তিক মানুষ, তেমনই দেখা গেল বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের মতো উঠতি যুবকদের। এছাড়াও আছে শিক্ষার্থী, আছে জেলা থেকে নিউরোসায়েন্সে চিকিৎসা করতে আসা রোগী আজিজুলের মতো মানুষেরাও।
আজিজুল বলেন, কলকাতায় ভরপেট খেতে অন্তত ৪৫ টাকা লাগে। সেখানে মাত্র ১০ টাকায় এমন ভরপেট খাবার কে ছাড়ে বলুন। ১০ টাকায় যে এমন নিরামিষ সুস্বাদু খাবার মেলে ভাবতেই পারছি না।
কলকাতার অন্যান্য জায়গাতেও এই ধরনের থালি চালু হোক। তা হলে আমাদের মতো পড়ুয়ারা লাভবান হবে-খাওয়ার মাঝেই জানালেন কলেজ শিক্ষার্থী চন্দ্রিমা ঘটক।
প্রত্যেকদিন দেড়শ’ জন মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে খুশি রান্নার কারিগর এনটি রাজা ঠাকুর নিজেও। রাজা ঠাকুর অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের বিশাখাপত্তনমের বাসিন্দা। তিনি বলেন, এতো মানুষের মুখে প্রত্যেকদিন ঠিক সময়ে খাবার তুলে দিই ঠিকই, পাশে হাসপাতাল তাই খাবারের মানটা ঠিক রাখাটাও আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। এটা পারি কারণ প্রত্যেকদিন এতগুলো মানুষের দোয়া পাই।
রাজপথে কোনো রেস্তোরাঁয় যেখানে ৩০ থেকে ৪৫ রুপির কমে এরকম নিরামিষ খাবার মেলে না সেখানে ১০ রুপিতে কীভাবে খাবার দেওয়া হয় জানতে চাইলে সোসাইটি ফর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সংগঠনের সম্পাদক বন্দিপ্রসাদ সাউ বলেন, জনপ্রতি খরচ পড়ে ২৮ রুপি। ১৮ রুপি ভর্তুকি দিই। এই ভর্তুকি দিচ্ছে আমাদের সংগঠনের ৫শ’ জন সদস্য। পুরসভার একটি ঘর থেকে এই মা থালি সরবরাহ করা হয়। বিনামূল্যে ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর মাঞ্জার ইকবাল। তিনি নিজেও যুক্ত এই প্রকল্পের সঙ্গে। আর আমরা তো ব্যবসা করার জন্য মা থালি চালু করিনি। মানুষ যাতে পেট ভরে খেতে পান, তাই এই ব্যবস্থা।
কাউন্সিলর মাঞ্জার ইকবাল জানান, বাইরের কোনো সংস্থার কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয় না। আমরা নিজেরাই চাঁদা দিয়ে এটা চালু করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
ভিএস/আরআর