পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলর, বিধায়ক কেউ-ই থেমে নেই বিজেপির দিকে পা বাড়ানো থেকে। বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময়ের সেনানী মুকুল রায়-এর জন্যই সম্ভব হয়েছে এই ভাঙন।
প্রশ্ন উঠছে, এই মুহূর্তে তৃণমূলের সংসার ভাঙনের বিষয়টি বিজেপির কাছে বড় রাজনৈতিক জয় মনে হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা কী আদৌ লাভজনক হচ্ছে?
এই প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বিজেপির সংগঠনের অন্দরে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিজেপিতে প্রবেশ নিয়ে বেশ বিরক্ত দলের নিচতলার কর্মীরা।
সমস্যার শুরু তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মনিরুল ইসলামের বিজেপিতে যুক্ত হওয়া নিয়ে। যদিও বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, বিজেপি যাকে তাকে দলে নেবে না, কিন্তু সংগঠন সেভাবে এখনও পোক্ত না হওয়া দলের মধ্যে ছাঁকনি লাগাবে কে?
মনিরুল ইসলামের পাশাপাশি অনুপম হাজরা, যিনি নিজেও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে এবারে যাদবপুর কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন চলাকালে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে আলিঙ্গন এবং পরে আসানসোলের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেনের সঙ্গে ছবি তোলা ইত্যাদি বিষয়ে বিজেপি নেতা কর্মীরা সমালোচনা করেন অনুপমের।
মনিরুল ইসলামকে বিজেপিতে ঢোকানোর পেছনেও অনুপমের হাত রয়েছে বলে মনে করে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির একটি অংশ। বিষয়টি হচ্ছে বিজেপি একদিকে যেমন তৃণমূলের কৌশলেই তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে চাইছে, অন্যদিকে সেই কৌশল একটি পর্যায়ের পরে যে বুমেরাং হতে পারে সেই খেয়াল রাখছে না।
গেরুয়া শিবিরের মাথায় রাখা প্রয়োজন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিকও কিন্তু তার দলের সেই অন্য দল ভাঙিয়ে কলেবর বৃদ্ধির কৌশলের বুমেরাং ঠেকাতে পারছেন না।
দলছুটদের নিয়ে তৈরি দল কিন্তু আগাগোড়াই আলগা থাকে এবং তার পতনও হয় অনিবার্য। এর ঠিক উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে বামেরা। তাদের কিছু নেতা পালা বদলের সময়ে তৃণমূলে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু সংখ্যাটা কম।
কেউ কেউ বাম ছেড়ে বিজেপিতেও গেছেন, কিন্তু সেটা খুবই কম। কারণ বামেরা দুর্বল হয়ে গেলেও অন্যদলের নেতাদের নিজের দলে জায়গা দেয় না। তাদের নেতৃত্ব উঠে আসে একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে। ফলে চূড়ান্ত সময়েও দল ছেড়ে যাওয়া নিয়ে বামেরা বিচলিত হয় না।
আর পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির যেমন একটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেই; যার কথা মানুষ এবং দলের কর্মীরা খুব বেশি ভরসা করে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নেতৃত্ব এখনও তেমন মজবুত নয়। ভোট ও আসন বেড়েছে বলে যদি বিজেপি ভাবতে শুরু করে, তারা ক্রমেই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বঙ্গের রাজনীতিতে। তবে তা ফের মমতার নিজেকে অপরিহার্য ভাবার মতই ভুল ছাড়া আর কিছু হবে না।
রাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বানের জল আটকানো বন্ধ না করলে কিন্তু সেই জলেই ভেসে যাবে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৯
ভিএস/এমএ